টিসিবির জন্য কেনা হচ্ছে সোয়া কোটি লিটার সয়াবিন তেল

সেই সঙ্গে কেনা হচ্ছে ৫ হাজার মেট্রিক টন মশুর ডাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2022, 01:30 PM
Updated : 17 August 2022, 01:30 PM

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে বিক্রির জন্য ১ কোটি ২৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কিনছে সরকার। সেই সঙ্গে কেনা হচ্ছে ৫ হাজার মেট্রিক টন মশুর ডাল।

ভর্তুকি মূল্যে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে বিক্রির লক্ষ্যে এই সয়াবিন তেল ও ডাল কেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল বারিক।

বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে তিন প্রস্তাবের বিপরীতে ২৭০ কোটি ৯৮ লাখ টাকায় এসব পণ্য কেনার প্রস্তাব অনুমোদন হয়।

বৈঠক শেষে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে আসা অতিরিক্ত সচিব বারিক জানান, উন্মুক্ত দরপত্রের পরিবর্তে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির মাধ্যমে দেশের সাত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এসব ভোগ্যপণ্য কেনা হবে। এই সাত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- সুপার অয়েল রিফাইনারি, বসুন্ধরা মাল্টি ফুডস প্রোডাক্ট, সিনহা এডিবল অয়েল ও শানশিং এডিবল অয়েল এবং এসিআই পিওর ফ্লাওয়ার, এমএস রায় ও নাদিম নাভা লিমিটেড।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “জরুরি প্রয়োজনে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে দেশের সাতটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরকার এসব ভোগ্যপণ্য ক্রয় করবে।”

এরমধ্যে দুটি প্রস্তাবে যথাক্রমে ১৭৩ টাকা ৯৫ পয়সা দরে সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের কাছ থেকে কেনা হবে ৪০ লাখ লিটার এবং ১৭১ টাকা দরে বসুন্ধরা মাল্টি ফুডস প্রোডাক্ট লিমিটেডের কাছ থেকে ৩৫ লাখ, সিনহা এডিবল অয়েল লিমিটেডের কাছ থেকে ৩০ লাখ এবং শানশিং এডিবল অয়েল লিমিটেডের কাছ থেকে কেনা হবে ২০ লাখ মেট্রিক টন তেল।

আরেকটি প্রস্তাবে ১১১ টাকা ১০ পয়সা দরে টিসিবির জন্য ৫ হাজার মেট্রিক টন ডাল কেনা হবে। এরমধ্যে এসিআই পিওর ফ্লাওয়ার লিমিটেডের কাছ থেকে ৩ হাজার টন, এমএস রায় লিমিটেডের কাছে থেকে ১ হাজার টন এবং নাদিম নাভা লিমিটেডের কাছ থেকে কেনা হবে ১ হাজার টন ডাল।

আব্দুল বারিক জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই তিন প্রস্তাবসহ ১৬টি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা কমিটি। যেখানে খরচ করা হবে ১ হাজার ৮৯৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, “এরমধ্যে টিসিবির জন্য তেল ও ডাল কেনার প্রস্তাব তিনটি টেবিল থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। বাকি ১৩ প্রস্তাব এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।

“এছাড়া সভায় মিরপুর ৯ থেকে ১১ নম্বর সেকশনে ৮০ একর জমির ওপর ‘মিরপুর ইন্টিগ্রেটেড টাউনশিপ ডেভেলপমেন্ট পিপিপি’ প্রকল্পটি তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার নীতিগত অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।”

অতিরিক্ত সচিব বারিক জানান, ক্রয় কমিটির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৭টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৪টি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ১টি এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের ১টি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৩টি প্রস্তাব ছিল।

কুষ্টিয়া (ত্রিমোহনী)-মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ আঞ্চলিক মহাসড়ক কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুর পর্যন্ত যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

এই প্রস্তাবে জহিরুল লিমিটেডকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সুপারিশ করা হয়। প্রকল্পে ব্যয় হবে ১০১ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার ৬৪৮ টাকা।

ঢাকা ওয়াসার ‘ঢাকা এনভারনমেনটালি সাসটেইনাবল ওয়াটার প্রকল্পের আওতায় প্যাকেজ নং-৩ দশমিক ২ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রস্তাবে সর্বনিস্ন দরদাতা হিসেবে চীনের চায়না জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের নাম সুপারিশ করা হয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩৭২ কোটি ৯২ লাখ ১৭ হাজার ৪১৪ টাকা।

আরেকটি প্রস্তাবে কাতার থেকে প্রথম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড প্রিল্ড ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

কাতারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মেট্রিক টন ৫৩৬ দশমিক ৫০ ডলার দরে প্রথম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড প্রিল্ড ইউরিয়া সারের দাম পড়বে ১ কোটি ৬০ লাখ ৯৫ হাজার ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৫২ কোটি ৫০ লাখ ১ হাজার ২৫০ টাকার সমান।

‘কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ’-এর কাছ থেকে তৃতীয় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কমিটি।

প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কিনবে টনপ্রতি ৫৩৩ দশমিক ২৫ ডলার দরে। খরচ হবে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ ডলার বা ১৫১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার ১২৫ টাকা।

এছাড়া সৌদি আরব থেকে চতুর্থ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি টনের দাম পড়বে ৫৩৪ দশমিক ৩৩ ডলার। এজন্য মোট ১ কোটি ৬০ লাখ ২৯ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার বা ১৫১ কোটি ৮৮ লাখ ৩৩ হাজার ২৫ টাকা ব্যয় হবে।

আরেকটি প্রস্তাবে সৌদি আরব থেকে পঞ্চম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি টন ৫২৪ দশমিক ৫০ ডলার দরে ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৩৫ হাজার ডলার বা ১৪৯ কোটি ৮ লাখ ৯১ হাজার ২৫০ টাকা।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের জিসিবি এলাকায় লট নং-১ এ কর্গো হ্যান্ডেলিং অব্যাহত রাখতে কন্টেইনার বার্থ অপারেটর নিয়োগের প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স এফ কিউ খাঁন অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেডকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যেখানে খরচ হবে ৭৬ কোটি ৯৫ লাখ ২৮ হাজার ৯৯০ টাকা।

জিসিবি এলাকায় লট নং-২ (বার্থ নং-৯)-এ কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য কন্টেইনার বার্থ অপারেটর নিয়োগের প্রস্তাবে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ফজলী সন্স লিমিটেডকে নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৭৬ কোটি ৯০ লাখ ৯৯ হাজার ৮৮৫ টাকা।

লট নং-৩ (বার্থ নং-১০)-এ কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স বশির আহমেদ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডকে নিয়োগ প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৭৭ কোটি ৮ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৫ টাকা।

লট নং-৪ (বার্থ নং-১১)-এ কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স এ অ্যান্ড জে ট্রেডার্সকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৭৭ কোটি ৮৮ হাজার ২৩০ টাকা।

লট নং-৫ (বার্থ নং-১২) এ কর্গো হ্যান্ডেলিংয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান এভারেস্ট পোর্ট সার্ভিসেস লিমিটেডকে নিয়োগ প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এজন্য ব্যয় হবে ৭৭ কোটি ৬ লাখ ৩ হাজার ৯১০ টাকা।

লট নং-৬ (বার্থ নং-১৩) এ কর্গো হ্যান্ডেলিংয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান এম এইচ চৌধুরী লিমিটেডকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ৭৭ কোটি ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৩৩৫ টাকা।

সভায় ‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন প্রকল্প-১ (চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ ও সংযুক্ত নৌপথ খনন এবং টার্মিনালসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ)’ প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৮২ কোটি ২৯ লাখ ২৯ হাজার ৬৯৬ টাকা।