বেঁধে দেওয়া দরে ডলার পাচ্ছেন না ক্রেতারা।
Published : 29 Jan 2024, 04:28 PM
ডলার সংকটের মধ্যে তরতর করে দাম বেড়ে যাওয়ার মধ্যে এবার খোলাবাজারে আমেরিকান মুদ্রাটি কিনতে না পারার কথা জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন।
আন্তব্যাংক লেনদেনের রেটের চেয়ে খোলাবাজারে সর্বোচ্চ দেড় টাকা বেশি দাম রাখা যাবে- এমন সিদ্ধান্ত যেসব মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান মানছে না, তাদেরকে জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু বেঁধে দেওয়া দরে ডলার পাচ্ছেন না ক্রেতারা।
বেঁধে দেওয়া দরের বেশি রাখলে জরিমানা এমনকি প্রতিষ্ঠান বন্ধের হুমকি আছে, এ কারণে চেনা জানাদের কাছেই বিক্রি হচ্ছে বৈদেশিক লেনদেনে ব্যবহৃত মুদ্রাটি। তবে দাম পড়ছে বেশি।
বুধবার যারা ডলার বিক্রি হয়েছে ১১৭ টাকা দরে, যদিও বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ দর ১১২ টাকা ৬০ পয়সা।
গণমাধ্যমের কাছে এক্সচেঞ্জ মালিকরা দাবি করছেন, তারা বেঁধে দেওয়া দরই রাখছেন। কিন্তু ডলার কিনতে যাওয়া মানুষরা বলছেন অন্য কথা।
রাজধানীর পল্টনে বায়তুল মোকাররম মসজিদের বিপরীতে ডজনখানেক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান ঘুরেও ডলার পাননি নোয়াখালী থেকে আসা লতিফুর রহমান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘কোথাও একশ ডলার পাইলাম না। শেষে অনুরোধ করলাম ডলার না দিলেও পাসপোর্ট এনডোর্স করে দিতে, তাও করল না। ডলার ছাড়া পাসপোর্ট এনডোর্স করবে না।’’
পাসপোর্টে ডলার এনডোর্স করতে আসা ইব্রাহিম মন্ডল বলেন, ‘‘মার্কেটে না পেলেও ফুটপাতে অনেকেই ডলার বিক্রি করছেন। তাদের কাছ থেকে নিয়ে নিতে পারব। কিন্তু তারা তো এনডোর্স করে দিতে পারবে না। তাই এখানে এসেছিলাম।’’
এই মার্কেটে একটি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, “অ্যাসোসিয়েশনের ঠিক করে দেওয়া দরে ডলার কেনাও যাচ্ছে না। তাহলে বিক্রি করব কীভাবে?”
তিনি জানালেন, বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ফোনে যোগাযোগ করলে কেনা যাচ্ছে, যেগুলোর দাম পড়ছে বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংক মানিচেঞ্জারগুলোকে ডলার কিনতে বলেছে সর্বোচ্চ ১১১ টাকা ১০ পয়সায়, সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য ঠিক করা হয়েছে ১১২ টাকা ৬০ পয়সা।
এই দর ঠিক আছে কি না, সেটি তদারকি করছে একটি টাক্সফোর্স, যারা নিয়মিত অভিযানও চালাচ্ছে।
অভিযানের কারণে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে ডলার বেচা-কেনায় জড়িতদের মধ্যে। গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথাও বলছেন খুবই সর্তকভাবে। পাসপোর্ট ছাড়া কোনো ডলার বিক্রি করছেন না তারা, আগে যেখানে টাকা দিলেই মিলত ডলার।
আশিকুর রহমান নামে একজন বলেছেন, “১১৬ টাকা ৫০ পয়সা দরে ২০০ ডলার কিনলাম। আরেকদিন এসে আরো ২০০ ডলার কিনতে হবে।’’
পল্টনের মেক্সিমকো মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেইন বলেন, ‘‘ডলার পাওয়া যাচ্ছে কম। আমাদের কাছে তো ব্যাংক ডলার বিক্রি করে না।’’
একই এলাকার ওয়েস্টার্ন মানি চেঞ্জারের বিক্রয় কর্মী আমিন উদ্দিন বলেন, ‘‘ডলার বেচা-কেনা এখন অনেক কম। চাহিদা আছে ঠিকই, কিন্তু আমাদের কাছে কেউ বিক্রি করতে না আসলে কই পাব? বাইরে দর বেশি হওয়ায় অনেকে তাদের কাছেই বিক্রি করছে।’’
মানিচেঞজার প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডলারের উৎস হচ্ছে বাংলাদেশে ঘুরতে আসা বিদেশি পর্যটক ও প্রবাসীরা।
মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন ‘‘মানিচেঞ্জারে এখন ডলারের ক্রয় দর ১১১ টাকা ১০ পয়সা ও বিক্রয় দর সর্বোচ্চ ১১২ টাকা ৬০ পয়াসা।’’
এই দরে ডলার বিক্রি হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘এখন যেভাবে নিয়ম মানা হচ্ছে, আশা করি সপ্তাহখানেক লাগবে এই দরে ডলার বেচা-কেনা করতে।’’
(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)