ভুটান-বাংলাদেশ ট্রানজিট চুক্তি সই

এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের জল, স্থল ও আকাশপথ ব্যবহার করে ভুটান নির্ধারিত ফি দিয়ে তৃতীয় দেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করতে পারবে । 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2023, 09:08 AM
Updated : 22 March 2023, 09:08 AM

পরস্পরের ভূমি ব্যবহার করে বাণিজ্য জোরদারের লক্ষ্য নিয়ে ট্রানজিট চুক্তিতে সই করল বাংলাদেশ ও ভুটান।

এর ফলে বাংলাদেশের জল, স্থল ও আকাশপথ ব্যবহার করে ভুটান নির্ধারিত ফি দিয়ে তৃতীয় দেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করতে পারবে । আর ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে ভুটানের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ হলে তখন এ ট্রানজিট সুবিধায় ভুটানের ভেতর দিয়ে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারবে বাংলাদেশ।

বুধবার ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে ‘প্রটোকল অব দ্য এগ্রিমেন্ট অন দ্য মুভমেন্ট অব ট্রাফিক ইন ট্রানজিট বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড ভুটান' শিরোনামে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং ভূটানের পক্ষে দেশটির শিল্প কাণিজ্য ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী কার্মা দর্জি চুক্তিতে সই করেন। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই চুক্তির ফলে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজ হবে বলে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আশা প্রকাশ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

তিনি বলেন, “যুগান্তকারী এই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজতর হবে; বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে। দুই দেশের জন্য কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সংযোগ এবং কৌশলগত সুবিধা বয়ে আনবে।”

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি ও আঞ্চলিক ভ্যালু চেইন সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে চায়। এর অংশ হিসেবে চারদিকে স্থলভাগ বেষ্টিত ভুটানকে বাংলাদেশ ট্রানজিট চুক্তির আওতায় বিমান, রেল, স্থল, নৌবন্দর ও সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে।

এ চুক্তির ফলে উভয় দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক যোগাযোগে ব্যাপক প্রসার ঘটবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে ভুটানের পণ্য রপ্তানি ও আমদানি করলে বাংলাদেশ বিভিন্ন মাশুল পাবে। এছাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটবে। ট্রানজিট এগ্রিমেন্ট বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের সমুন্দ্র বন্দরগুলো অধিকতর কর্মক্ষম হবে এবং রাজস্ব আয় বাড়বে। এছাড়া কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ বন্দরগুলোর সার্বিক কার্যক্রমে গতিশীল হবে।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালকে নিয়ে চার দেশীয় মোটরযান চলাচল চুক্তি (বিবিআইএন) থেকে ভুটান সরে যাওয়ার পর বাংলাদেশের কাছে দ্বিপক্ষীয় ট্রানজিট চুক্তির প্রস্তাব দেয়। পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় দুই দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ট্রানজিট চুক্তির খসড়া ও প্রটোকল চূড়ান্ত করা হয়।

এরপর মন্ত্রিসভার সর্বশেষ বৈঠকে ভুটানের সঙ্গে এই ট্রানজিট চুক্তির খসড়ায় অনুমোদন দেয় সরকার। সেই চুক্তিই বুধবার স্বাক্ষরিত হল।

২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি বা পিটিএ সই করে বাংলাদেশ। ওই চুক্তির আওতায় দুই দেশই বেশ কিছু পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার কথা।

২০০৮-০৯ অর্থ বছরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; যা ক্রমান্বয় বেড়ে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৫৭ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয় ।

বাংলাদেশ থেকে ভুটানে মূলত তৈরি পোশাক, খাদ্য সামগ্রী, প্লাস্টিক, ওষুধ, গৃহসজ্জা সামগ্রী, বৈদ্যুতিক পণ্য রপ্তানি হয়। ভুটান থেকে বাংলাদেশ সবজি ও ফলমূল, খনিজ দ্রব্য, নির্মাণ সামগ্রী, বোল্ডার পাথর, পাল্প, রাসায়নিক আমদানি করে।

ভুটানের শিল্প বাণিজ্য কর্মসংস্থান সচিব দাশ তাশি ওমাং, শক্তি ও নবায়নযোগ্য সম্পদ বিষয়ক সচিব দাশ কর্মা শেরিং, ভুটান চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এবং ভুটানের বিভিন্ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকরা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।