নিত্যপণ্যের দরের ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ কষ্টে থাকলেও কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির অঞ্চল রংপুরে তার নির্বাচনী এলাকার মানুষ বেশ ভালো আছে বলে দাবি করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি।
সেই ভালো থাকার ‘প্রমাণ’ ফ্যাশনে পড়েছে বলেও মনে করেন তিনি। দাবি করেছেন, তার এলাকার নারীরা এখন ‘লিপস্টিকে মন দিয়েছে।’
এ কারণে আগামী নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে তেমন সমস্যা হবে না বলেও আশা করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
বুধবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমার এলাকার মানুষের কোনো কষ্ট নেই। তারা আলুর দাম পাচ্ছে…
“দেশের একেকটা এলাকায় একেক পরিস্থিতি। আমার এলাকা কৃষিপ্রধান হওয়ায় তারা ভালো আছেন। কিন্তু ঢাকা শহরে যে নির্বাচন করতে তার অনেক সমস্যা হবে।”
২০০১ সাল থেকে রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনে নির্বাচন করে আসছেন টিপু মুনশি। ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনটি নির্বাচনে জিতেছেন তিনি।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি পরিস্থিতির মধ্যে আগামী নির্বাচনে ভোটারদের কাছে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বেন কি না- এই প্রশ্ন ছিল টিপু মুনশির কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, “২০০১ সালে আমি যখন প্রথম নির্বাচন করি তখন আমার এলাকায় ১০টা মোটর সাইকেল ছিল। আজকে হাজার হাজার মোটরসাইকেল।
“আমার এলাকায় কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি, আলুভিত্তিক অর্থনীতি। তাদের কোনো কষ্ট নেই। মহিলারা দিনে তিনবার করে লিপিস্টিক লাগাচ্ছে, চারবার করে স্যান্ডেল পাল্টাচ্ছে। সুতরাং আমার ভোটের কোনো সমস্যা হবে না। এটা আমি খুব ভালো করেই জানি।”
সচিবালয়ে ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি মনিটরিং ও রিভিউ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বাণিজ্য মন্ত্রী।
আলু-পেঁয়াজের দর: নতুন ফসলের অপেক্ষায় মন্ত্রী
আলু ও পেঁয়াজের দর নিয়ে এক প্রশ্নে টিপু মুনশি বলেন, “নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠলে দাম কমবে। আগামী মাসের শেষে মুড়িকাটা পেঁয়াজটা বাজারে উঠবে। ডিসেম্বরের শেষ দিকে আলু উঠবে।
এখন প্রয়োজনের তুলনায় পেঁয়াজে ২০ শতাংশ ঘাটতি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা প্রধানত ভারত থেকে আমদানি করছি। এখন ভারতের বাজারেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।”
কলকাতার পেঁয়াজের দাম এখন বাংলাদেশের মুদ্রায় ১১০ টাকা এবং ভারত পেঁয়াজের সর্বনিম্ন রপ্তানি দর ৮০০ ডলার ঠিক করে দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “সেই হিসাবে দাম পড়ে যায় প্রতি কেজি ৯৫ টাকার মতো।”
এখন পেঁয়াজ আমদানি করে দেশে বিক্রি করলে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা পড়ে যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, “মূলত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে নতুন ফসলের জন্য।”
ডিসেম্বরের প্রথম দিকে উত্তরাঞ্চলে আগাম আলু আসে। সেই সঙ্গে আমদানি শুরু হওয়ায় দাম কমে আসবে বলেও আশাবাদী মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আলু আমদানি শুরু হয়েছে। ডিম আমদানিতে শুরুর দিকে কিছু জটিলতা ছিল। সেটা এখন কেটে গিয়ে একটা চালান ঢুকে পড়েছে।
“তেল-চিনির ক্ষেত্রে কথা হচ্ছে সেটা আন্তর্জাতিক বাজারের দামের ওপর নির্ভর করে।”
বৈশ্বিক পরিস্থিতি চিন্তা করলে বাংলাদেশের বাজারে দাম খুব একটা বেশি নয় দাবি করে মন্ত্রী বলেন, “কিন্তু আমাদের আয়ের সঙ্গে চিন্তা করলে এটা অবশ্যই বেশি। সে কারণে পোশাক শ্রমিকদের বেতন ৮ হাজার টাকা থেকে ৫৬ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে।”
টিপু মুনশি বলেন, “অর্থনীতিবিদরা মনে করেন মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এখন মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশের ওপরে। সেটা কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে। জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে। এটা সার্বিক অর্থনীতির ওপর একটা বড় প্রভাব ফেলেছে।”
সব মিলিয়ে আমরা ‘খুব বিপদের মধ্যেই আছি’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ভারতের এত বড় প্রতিষ্ঠিত একটা অর্থনীতি, তাদের পেঁয়াজের দামও ৮০ /৯০ রুপিতে চলে গেল। তারাও পেঁয়াজ, চিনি গম, রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।”