মোবাইল অপারেটরগুলোর আরও প্রতিযোগিতা চান জিপি সিইও

দীর্ঘ আলাপকালে কলড্রপ, ইন্টারনেট ডেটার দাম বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির কথাও বলেছেন তিনি।

গোলাম মর্তুজা অন্তুবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2024, 07:34 PM
Updated : 22 March 2024, 07:34 PM

টেলিযোগাযোগ খাতের প্রযুক্তিগত সুবিধা কাজে লাগাতে স্মার্ট ফোন ও ডেটার ব্যবহার বাড়ানোকে মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান।

ফাইভ জি যুগে প্রবেশের প্রস্তুতির এ সময়ে এটিকে মূল সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে এটির আরও ‘গভীরে গিয়ে’ কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। দেশের প্রান্তিক মানুষের কাছে প্রযুক্তির ব্যবহার ও ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিতে না পারলে সুবিধাভোগীদের সঙ্গে তাদের ব্যবধান কেবলই বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গ্রাহক ও আয়ের বিচারে দেশের বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের প্রধান কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান চান টেলিযোগাযোগ খাতে অপারেটরগুলোকে আরও প্রতিযোগিতার সুযোগ দেওয়া হোক। এতে গ্রাহকরা লাভবান হবে বলে মনে করেন তিনি।

“আমার মনে হয় ইন্ডাস্ট্রি অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত না। এখানে আমাদের কম্পিট করতে দেওয়া উচিত। তাহলে গ্রাহকও উপকৃত হবে।“

১৯৯৭ সালে কার্যক্রম শুরুর পর দ্রুতই দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে শক্তিশালী অবস্থান করে নেওয়া গ্রামীণফোনের প্রথম এই বাংলাদেশি সিইও মনে করেন, এ খাতে আরও বিনিয়োগ আসার সুযোগ থাকলেও তা কিছুটা সীমিত হয়ে রয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি এ খাতে ‘ডিসপুট রেজুলেশনের (বিবাদ মীমাংসার) কোনো সুযোগ’ না থাকাকে তুলে ধরেন।

সম্প্রতি গ্রামীণফোনসহ চার মোবাইল ফোন অপারেটরকে পঞ্চম প্রজন্মের ফাইভ জি সেবা চালুসহ নতুন প্রযুক্তি সেবা দিতে ‘একীভূত লাইসেন্স’ দেওয়া হয়েছে। ইয়াসির আজমান মনে করেন, ২০২৫ সাল বা এর পরে দেশে ফাইভ জি সেবা চালু হতে পারে।

চলতি মাসের শুরুতে দেশের চারটি মোবাইল ফোন অপারেটর- গ্রামীণফোন, রবি, টেলিটক ও বাংলালিংককে পঞ্চম প্রজন্মের তারবিহীন ফাইভ জি চালু করতে একীভূত লাইসেন্স দিয়েছে বিটিআরসি। ফাইভজিসহ পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তিগত সুবিধা দিতে এ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর ফলে অপারেটরগুলোকে আর পৃথকভাবে টুজি, থ্রিজি, ফোর জি বা ফাইভ জির লাইসেন্স নিতে হবে না।

ইউনিফাইড লাইসেন্সসহ টেলিকম খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেন গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান, যিনি গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যামটব এর সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।

২০১৫ সালে গ্রামীণফোনের প্রধান মার্কেটিং কর্মকর্তা (সিএমও) হিসেবে দায়িত্বে আসেন তিনি। এর আগে দীর্ঘদিন কাজ করেন গ্রামীণফোনের মূল কোম্পানি টেলিনরে। ২০১৭ সালে গ্রামীণফোনের ডেপুটি সিইওর দায়িত্ব পান। পরে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে জিপির সিইও এর দায়িত্বে আসেন ইয়াসির।

দীর্ঘ এ আলাপকালে কলড্রপ, ইন্টারনেট ডেটার দাম বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। পাশাপাশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির কথাও বলেছেন তিনি।

আলাপচারিতায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের বিভিন্ন দিক, অপারেটরগুলোর প্রতিযোগিতা, সরকারি নীতি নির্ধারণী বিষয়, বিবাদ মীমাংসা, নিয়ন্ত্রণের মত বিষয়গুলো। সাক্ষাৎকারে লাভ ক্ষতির বিষয় যেমন এসেছে, তেমনি এসেছে ডেটার মূল্য নির্ধারণ, কলড্রপের মত ভোগান্তির প্রসঙ্গও।

প্রশ্ন: আপনারা ইউনিফাইড লাইসেন্স পেলেন। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত বাস্তবায়নের একটা তাগিদও এসেছে। আপনাদের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা কী রকম?

উত্তর: এই লাইসেন্স হঠাৎ করে একটা ইনসিডেন্টাল বিষয় তা না। সুতরাং প্রস্তুতির যে বিষয়টা বলছেন বা এটার বাস্তবায়ন কীভাবে হবে যেটা আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীও বলেছেন যে, এটার ইমপ্লিমেন্টেশনে ফোকাস করা। গত প্রায় তিন বছর ধরে এটা নিয়ে কাজ হচ্ছে। অনেকবার এটা নিয়ে কনসালটেশন হয়েছে। সুতরাং আমাদের প্রস্তুতিটাও আসলে অনেক সময় ধরেই হচ্ছে। তাই আমাদের প্রস্তুতি আছে যে এই লাইসেন্সটা পাওয়ার পরে আমরা যেন সেবাগুলো গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারি।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে এই লাইসেন্সের ফলে আমাদের রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স অনেক সিমপ্লিফায়েড হয়ে গেছে। যেমন আপনার যদি চার-পাঁচটা লাইসেন্স থাকে যাদের বিভিন্ন টাইমফ্রেম থাকে, এগুলোতে বিভিন্ন রকম ‘ডুজ অ্যান্ড ডোন্টস’ থাকে-এইসব ক্ষেত্রে যখন সবগুলো মিলিয়ে একটা লাইসেন্স হয়, ‘ওয়ান সেট অব ডুজ অ্যান্ড ডোন্টস’ আসে এর ফলে আমাদের অপারেশনাল যে বাধাগুলো ছিল সেটা অনেক স্মুথ হয়ে গেছে।

প্রশ্ন: এটা কী অনেক দেরিতে দিল সরকার? আরও আগে হলে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া যেত?

উত্তর: ভালোর আসলে কোনো শেষ নেই। আরও আগে হলে আরও ভালো হতে অবশ্যই। কিন্তু এটা এখন এসেছে। আমাদের এখন দেখতে হবে আমরা এখানে কী কী জিনিস পেয়েছি। আমি যদি কয়েকটা জিনিস বলি, একটা হচ্ছে পৃথক পাঁচ রকমের করণীয়-বর্জনীয়, এটা একটা ভীষণ গোলমেলে ব্যাপার ছিল। এটা রিমুভ হয়ে গেছে।

দ্বিতীয়ত: আগে নয়টা সার্ভিস আমরা দিতে পারতাম, এখন এই লাইসেন্সে আমরা ১৪টার মতো সার্ভিস দিতে পারব। এই যে আইওটি, ক্লাউড, সাইবার সিকিউরিটি, অ্যানালিটিকস, এআই, ফিক্সড ওয়্যারলেস এক্সেস-এই নতুন যে সার্ভিসগুলো দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে এগুলো ছাড়া তো একটা প্রযুক্তিবান্ধব সমাজের কথা ভাবা যায় না। এখন এই সমস্যাগুলোরও সমাধান হয়ে গেছে।

এরপরে আমি যদি আরও দুএকটা বলি, আগে যেমন অপারেটরের অডিট যে কোনো সময় অনেক পেছনে গিয়ে করা যেত। ইনভেস্টররা সবসময় একটা ভয়ের মধ্যে থাকত। এখন এখানে বলা হয়েছে অডিট হবে সর্বোচ্চ দুই বছর পেছনে।

সাইবার সিকিউরিটিটাকে খুব বড় করে নিয়ে আসা হয়েছে এখানে। যেন আমরা আমাদের ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচারগুলোকে অনেক বেশি সুরক্ষিত করতে পারি। এটা একটা বৈশ্বিক উদ্বেগও বটে। সুতরাং আমি বলব, দেরি হয়তো হয়েছে, সময় হয়তো লেগেছে কিন্তু একটা লেয়ারে এটা খুব স্ট্রংভাবে এসেছে। খুবই পজেটিভ, ‘স্ট্রং অ্যান্ড ফরোয়ার্ড লিনিং টুয়ার্ডস স্মার্ট বাংলাদেশ’। এর কিছু কনসার্নও আছে। আমরা সেগুলো নিয়ে কথা বলব পরে। 

প্রশ্ন: এই লাইসেন্সে ফাইভ জির বিষয়টাও এসেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ফাইভ জি অনেক অলোচিত বিষয়। আপনারা ফাইভ জি সেবা দিতে প্রস্তুত কী না? সাধারণ গ্রাহকদের এই প্রযুক্তি কীভাবে লাভবান করতে পারে?

উত্তর: ইউনিফাইড লাইসেন্স আর ফাইভ জি বিষয়টা কিন্তু এক না। ইউনিফাইড লাইসেন্সের ফলে যেটা হয়েছে সামনে আমাদের ফাইভ জির জন্য যেই লাইসেন্সটা লাগত এটা আর লাগছে না। তার মানে এটা নয় যে ইউনিফাইড লাইসেন্সে ফাইভ জি একমাত্র বিষয় এবং সেদিন থেকেই এটা চালু হবে।

কিন্তু আপনি যদি বলেন ফাইভ জির জন্য প্রিপায়ের্ডনেস…। এই ফাইভ জি কিন্তু কখনও স্ট্রং ফাইবার ব্যাকবোন ছাড়া সম্ভব হবে না। তাই ফাইবারাইজেশন করার যে বিষয়টা, গত দুই বছরে আমরা সেটা ডাবল করেছি। তবে আমাদের একটা জিনিস বুঝতে হবে, ইনডিভিজুয়াল কাস্টমার এন্ডে আসলে ফাইভ জি সেরকম বড় কোন ইম্প্যাক্ট আনবে না। ম্যানুফাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিতে, কৃষি বা হেলথে অর্থাৎ অ্যাডভান্সড টেকনোলজির ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফাইভ জির একটা ব্যবহার রয়েছে। এবং পোর্ট বা এয়ারপোর্ট অটোমেশন এই ধরনের বড় বড় বিষয়গুলোতে ফাইভ জি কাজে লাগবে। বাংলাদেশে আমাদের আসলে দরকার খুবই স্ট্রং ফোর জি সার্ভিস।

আমাদের এখন যে বিষয়গুলো দরকার- ফাইবারাইজেশন, নেটওয়ার্ক ইকুইপমেন্ট মডার্নাইজেশন, এই বিষয়গুলোতে আমরা যে কাজগুলো শুরু করেছি সেগুলো শেষ করা দরকার। রাইট টাইমে আমরা যেন ফাইভ জি উইথ ইন্ডাস্ট্রিয়াল সলিউশন নিয়ে আসতে পারি বাংলাদেশে। শেষের কথা হচ্ছে, আমি ফাইভ জি লঞ্চ করলাম এটা কোনো সাকসেস স্টোরি না। ফাইভ জির সাফল্যের গল্পটা এর ব্যবহারেই গাঁথা থাকবে, যদি সেটা সফলভাবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশনে কাজে লাগতে পারে এবং ব্যবহারকারীরা এর মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম আরও দক্ষতার সঙ্গে প্রতিপালন করে গ্রোথ বাড়াতে পারে। একই সঙ্গে এটা আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশের ভিশনকে ফুলফিল করে। সুতরাং এটার একটা রোডম্যাপ থাকতে হবে, লাইসেন্স পাওয়ার দিনই ফাইভ জি হবে বিষয়টা এমন নয়।

প্রশ্ন: কতদিন নাগাদ ফাইভ জি আসতে পারে?

উত্তর: আমার মনে হয় আমরা যদি এখন থেকে কাজ শুরু করি কিছু ইউজ কেইস ধরে। সব দিক চিন্তা করে আমার মনে হয় এটা ২০২৫ বা তার পরে হবে। হয়ত একটা ছোট স্কেলে হবে একটা দুইটা কেইস ধরে। আমি এটাকে (ইউনিফাইড লাইসেন্স) দেখি খুবই পজিটিভ স্টেপ হিসেবে। আমাদের আইসিটি উপদেষ্টা (সজীব ওয়াজেদ জয়) একটা বড় রোল প্লে করেছেন এখানে। বিটিআরসি খুবই দারুণ কাজ করেছে। এবং ফাইনালি আমাদের নতুন টেলিকম প্রতিমন্ত্রী (জুনাইদ আহমেদ পলক) এটাকে দ্রুততর করেছেন। কিছু সমস্যা রয়ে গেছে, আমরা যদি ইতিবাচক মন নিয়ে বসি তাহলে সেগুলোও সমাধান করা সম্ভব।

প্রশ্ন: বৈশ্বিকভাবে এক দশমিক ৪ বিলিয়ন ব্যক্তি মোবাইল ব্যবহারকারী ফাইভ জি ব্যবহার করছেন। ভারতে ১২০ মিলিয়ন মানুষ এখন ফাইভ জি ব্যবহার করছেন। ফাইভ জির কারণে বাংলাদেশ কী পিছিয়ে যাবে?

উত্তর: বাংলাদেশের মানুষের টেকনোলজি এডাপ্টেশন অনেক ফাস্টার। বাংলাদেশে এখন টুজি বেসিক ফোন আর স্মার্টফোন দুটোই রয়েছে। আমাদের বাংলাদেশে যদি ফাইভ জি এবং ইন্টারনেট ডেটা ও ডিজিটাল লাইফস্টাইলে যেতে হয় তাহলে আমাদের এই মুহূর্ত থেকেই পলিসি এবং রেগুলেটরসহ অপারেটরদের কাজ করা উচিৎ কী করে আমরা স্মার্টফোনের ব্যবহারটা বাড়াব। বাংলাদেশে সাধারণভাবে বলতে গেলে ডেটার ব্যবহারকারী কিন্তু বাড়ছে না। ওখানে একটা স্থবিরতা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই স্থবিরতা কীভাবে রিমুভ করব এবং স্মার্ট ফোনের ব্যবহার কীভাবে বাড়াব আমাদের সেদিকে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ। যদি আপনার হাতে ডিভাইস থাকে তাহলে কনেক্টিভিটি (ফাইভ জি) লঞ্চ করা হলে সেটা অটোমেটিক কানেক্ট হবে। মূল সমস্যাটা কিন্তু আরও গভীরে যেখানে আমাদের কাজ করা উচিৎ। একই সময়ে আমরা সবাই ফাইভ জির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি, এটা আগামীর বাস্তবতা। কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে স্মার্ট ফোন ও ডেটা ইউজার বাড়ানো।

প্রশ্ন: জনশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের ৩০ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। স্মার্ট ফোনের ব্যবহারকারী ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। এটা আসলে কেন কম? এই হার বাড়াতে কী করা যেতে পারে?

উত্তর: কয়েকটা জিনিস আমার কাছে মনে হচ্ছে যে, যখন আমরা বলি স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভরনেস, স্মার্ট সোসাইটি…এটা আসলে খুবই এনকারেজিং একটা ভিশন। কিন্তু এটার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে মানুষের হাতে কানেক্টিভিটির বিষয়টি। কারণ আধুনিক প্রযুক্তি যে ব্যবহার করছে সে অনেক এগিয়ে গেল আর যারা এর সুযোগ পাবে না তারা অনেক পিছিয়ে গেল। ফলে গ্যাপটা আরও বেড়ে যাচ্ছে।

দ্বিতীয়ত হচ্ছে, একজন ব্যবহারকারী কেন স্মার্ট ফোন ব্যবহার করবে তার কারণ লাগবে। আমি বলব আমাদের সরকার এখন অনেক সার্ভিস ডিজিটালাইজড করে ফেলেছে কিন্তু সেটার জন্য সচেতনতা তৈরি বা মানুষকে শেখানোটা এখনও হয়নি। আমরা জানি কি না, এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স ডিজিটালি আবেদন করা যায় এবং আগের মতো দৌড়াদৌড়ি না করেই হাতে পাওয়া যায়। এই যে, এরকম কিন্তু শত শত সার্ভিস ডিজিটালাইজড হয়েছে। এগুলো মোবাইল ফোনের ইউজ কেইস হিসেবে নিতে হবে।

তৃতীয়ত, এই প্রযুক্তির সুফল পেতে হলে আমাদের স্মার্ট ফোন তো লাগবেই। এখানে দেখার বিষয় স্মার্ট ফোনের এভেইলিবিলিটি বাড়াতে এবং দাম কমানোর জন্য আমাদের সরকার কীভাবে ট্যাক্স রিফর্ম করছে অথবা দেশি উদ্যোক্তাদের সহযোগিতাও করা যেতে পারে যাতে তারা স্মার্ট ফোন তৈরি করতে পারে। এমন কিছু পলিসি দরকার যেখানে বেসিক ফোন আমদানিকে নিরুৎসাহিত করা হয়।

প্রশ্ন: আপনাদের গ্রাহকদের মধ্যে এখন স্মার্ট ফোন ব্যবহারের হার কেমন?

উত্তর: এটা ফিফটি ফিফটি। প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়ার একটা বড় বাধা হচ্ছে মানুষের হাতে স্মার্ট ফোনই নেই। আপনি কী করে সার্ভিসগুলো নিয়ে যাবেন। কীভাবে আপনি তাদের কাছে ফাইভ জি পৌঁছাবেন। ফোর জিতেই তো নিতে পারছি না অর্ধেক লোককে, এখনও টুজির যুগে তারা রয়েছেন। সো ওই কাজগুলো আমাদের করা দরকার। কিন্তু আমি খুবই আশাবাদী এই যে ইউনিফাইড লাইসেন্সের মতো বিষয়গুলো একটা ইন্ডাস্ট্রিতে যদি আনা যায়, তারপর ডিভাইসের জন্য লোন দেওয়া যায়, সরকার যদি ট্যাক্স কমিয়ে একটু উৎসাহিত করে তাহলে খুব দ্রুত এটা পিক করবে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ খুবই প্রযুক্তিবান্ধব। যেমন-বিকাশ বা মোবাইল ফাইনেন্সিয়াল সার্ভিসগুলো রাইডিং অন দ্যা মোবাইল কানেক্টিটিভিটি যেভাবে বিস্তার লাভ করেছে এরকম বড় উদাহারণ আসলে বাংলাদেশসহ আরও দু-তিনটা দেশে হয়েছে। 

প্রশ্ন:  ফাইভ জি বাস্তবায়নে আপনাদের তথ্য সংরক্ষণের সক্ষমতা বাড়ানো, ফাইবার অপটিক কেবলের খুবই শক্ত নেটওয়ার্ক প্রয়োজন। এসবের জন্য রেগুলেটরের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা কী?

উত্তর: আমি যদি একটু অন্যভাবে বলি। তিনটা সেক্টর। একটা হচ্ছে লাইসেন্সটা ইউনিফাইড করে আমাদের সার্ভিস প্রোভাইড করার সুযোগ দেওয়া হল। এবং অনেকগুলো রেগুলেটরি জটিলতা কমিয়ে দেওয়া হল, এটা খুবই ইতিবাচক। এই সার্ভিস আমাদের গ্রাহকদের কাছে নেওয়ার জন্য আমাদের দুটো জিনিস দরকার। আমরা যেন রাইট, অ্যাফোর্ডেবল প্রাইসে সাসটেইনেবল ওয়েতে আমরা কাস্টমারের কাছে নিতে পারি। আমরা যেন ইনভেস্ট করতে পারি।

ফাইবার হচ্ছে খুবই ইম্পরটেন্ট। আমাদের যদি ডার্ক ফাইবার না দেওয়া হয়, আমাদের যদি ব্যান্ডউইথের ওপর রান করতে হয়, ফাইভ জিতে ডেটার যে পরিমাণ আমাদের ব্যান্ডউইথ দরকার এটা যদি আমরা নিজেরা করতে না পারি অথবা এনটিটিএন লাইসেন্স অপারেটরদের কাছ থেকে আমরা ডার্ক ফাইবার নিতে না পারি তাহলে খরচ অনেক বেড়ে যাবে। এই খরচের বোঝাটা তখন যাবে গ্রাহকদের ঘাড়ে। তখন এখানকার ওভারঅল ইকোনমিটা কিন্তু ধীর হয়ে যাবে। সরকারও কিন্তু তখন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ এটা একটা হাই ট্যাক্স ইন্ডাস্ট্রি। এখানে লাভের সবচেয়ে বড় অংশটা সরকার পায়।

আরেকটা সাইড হচ্ছে ইনভেস্টমেন্ট। একটা বড় চ্যালেঞ্জ আছে এখানে, আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রিতে ডিসপুট রেজুলেশনের (বিবাদ মীমাংসার) কোনো সুযোগ নেই। এটা না থাকার কারণে ফরেন ইনভেস্টররা, যেটা এখন বাংলাদেশের বড় প্রয়োজন, তারা কিন্তু অনেক সাবধানী হয়ে যায়। সুতরাং আমি বলব সামনের দিক থেকে লাইসেন্স ইউনিফাইড করে সেবার সুযোগ বাড়ানো, লাইসেন্সের শর্তগুলো এক জায়গায় আনা হচ্ছে একটা দারুণ উদ্যোগ। আমাদের এখন বাকি দুটো জায়গায় দেখতে হবে।

প্রশ্ন: ডেটার দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে যাচ্ছে-এমন একটা অভিযোগ আছে। সেটা সমাধানে আপনারা কী উদ্যোগ নিচ্ছেন?

উত্তর: আমার মনে হয় একটু যদি বেঞ্চমার্কিং করা হয় তাহলে ডেটার দামে বৈশ্বিকভাবে আমরা একদমই কম। প্রতি এমবির দাম এখনও এক পয়সারও নিচে। মানুষের যে বিষয়টা হয়েছে, এখন ডেটার ব্যবহার কিন্তু বেড়েছে। আগে প্রয়োজন ছিল এক গিগাবাইট, সেটা কিছুদিনের মধ্যে হয়েছে ছয় গিগা বাইট। এটা হয়তো অচিরেই হয়ে যাবে ২০ গিগা বাইট। আমরা অপারেটররা গিগাবাইট প্রতি দাম কমিয়ে দিয়েছি, কিন্তু গ্রাহকদের দিক থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়ানোর কারণে খরচ বাড়ছেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কী কাজে ব্যবহার করেন তার ওপর নির্ভর করবে দাম কম না বেশি। যে ব্যক্তি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করেন ডেটা দিয়ে তিনি বলছেন, প্রয়োজনে দাম আরও বেশি রাখো, কিন্তু কানেকশন যেন বাধাহীন হয়। যে গেমিং করে সে বলে আরও দাম নাও, লেটেন্সি (লেটেন্সি হচ্ছে ক্লিকের পর সাড়া দেওয়ার সময়ের ব্যবধান) ঠিক থাকতে হবে। আমি যদি সারাদিন সোশাল মিডিয়াতে থাকি তাহলে আমার মনে হতে পারে আমার টাকা অনেক বেরিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারে ভারসাম্য আনতে হবে। তাহলে আমরা দেখব যে এটা আমাদের জীবনে সুফল বয়ে আনছে।

কিন্তু আমরা এখন এতটুকু বলব যে, যে পরিমাণ নিড এখন কাস্টমারদের সেটা ভবিষ্যতে বাড়বে। আপনি যদি মালয়েশিয়ায় দেখেন সেখানে পার কাস্টমার ইউজ করে ৩১ গিগাবাইট আর আমাদের এখানে সেই ব্যবহার ৬ থেকে ৭ গিগাবাইট। তো ৩১ গিগাবাইটে গ্রাহকপ্রতি ব্যবহার, আর আমাদের যদি ইফিসিয়েন্সি, প্রফিটেবিলিটি, ইনভেস্টমেন্ট একই নেচারে থাকে আর একই প্রাইস থাকে তাহলে ‘ইটস নট অ্যাফোর্ডেবল ফর দ্যা কাস্টমার’। তাই আমাদের যেটা করতে হবে নতুন নতুন টেকনোলজি আনতে হবে এক্সট্রিমলি ইফিশিয়েন্ট হতে হবে, এআই ড্রিভেন হতে হবে, ডেটা এনালিটিকস ড্রিভেন হতে হবে-যেন আমরা আমাদের ভিত্তি মূল্যটিকে আরও অনেক বেশি কমিয়ে আনতে পারি।

সরকার যদি কর কাঠামোটা পুনর্বিবেচনা করে…কারণ এখন আমাদের বিলাসবহুল পণ্যের (লাক্সারি গুড) ট্যাক্স দিতে হয়। টেলিকম এখন আর বিলাসবহুল পণ্য নয়। এখানে যদি আমরা বেশি ইনভেস্ট করতে পারি, তাহলে কম দামে দিতে পারব। তাতে ব্যবহার বাড়বে, সেই হিসেবে ট্যাক্স কালেকশনও বাড়বে। আমরা আমাদের ইনভেস্টমেন্টও চালিয়ে যেতে পারব। এটাকে একটা ইকো সিস্টেম হিসেবে দেখতে হবে। শুধু অপারেটর এখানে একা কিছু করতে পারবে না।

প্রশ্ন: গত নভেম্বরে এক মাসে দুবার ডেটার দাম নির্ধারণ করা হল। বিষয়টিতে গ্রাহকদের ক্ষেত্রে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে? আর এই বছরের শুরুর দুই মাসে ইন্টারনেট ব্যবহারও কমেছে। এটার সঙ্গে নতুন দর বেঁধে দেওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে কী?

উত্তর: আমাদের কেন জানি মনে হয় গ্রাহক কমে যাওয়ার সঙ্গে দর বেঁধে দেওয়ার একটা সম্পর্ক আছে। আমরা শুরু থেকেই বলেছি নতুন কাস্টমার আসতে এটাতে বাধাপ্রাপ্ত হবে এবং এটা এই খাতের জন্য ভালো নয়। আমরা এই ব্যাপারে শুরু থেকেই একটা অভিমত ছিল। আমাদের একটা বোঝাপোড়া ছিল যে আমরা এটা রিভিউ করবো এবং কালেক্টিভ অ্যাকশন নেব। চিন্তা-ধারাগুলো আসলে ভালো ছিল বলতে হবে। কেন আমরা তিন দিনের ডেটা দিচ্ছি, সাত দিনের কেন নয়। কিন্তু গ্রাহকদের একটা অংশ তো তিন দিনের ডেটা কম দামে কিনে ব্যবহার করতে চায়। খরচ করার ক্ষমতা সবার তো এক রকম না। আমার মনে হয় একটা বড় অংশ আছে যাদের সামর্থ্যের বাইরে চলে গেছে। কিছুটা হলেও তাদের ব্যবহার কমে গেছে এবং কাস্টমার ঝড়ে পড়েছে। আরেকটা অংশ হচ্ছে যারা আগে একাধিক সিম ব্যবহার করতেন তারা এখন এক সিমেই থিতু হয়েছেন। কারণ গ্রাহক দেখছেন তিনি এখন সাত দিন ব্যবহার করছেন একই পরিমাণ ডেটা।

আমার মনে হয় ইন্ডাস্ট্রি অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত (রেগুলেটেড) হওয়া উচিত না। আমার মনে হয় এখানে কিছু বাউন্ডারি সেট করে দেওয়া উচিত অপারেটররা যাতে মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে কাস্টমারদেরকে ভুল পথে প্রবাহিত করতে না পারে। তিন দিনে যদি ৫০ গিগা অফার দিই তাহলে সেটা কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। মানে অফারগুলো এক দিনের বা এক ঘণ্টার বা এক মাসের হবে কী না তা নির্ধারিত হবে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে। এখানে আমাদের কম্পিট করতে দেওয়া উচিত। তাহলে গ্রাহকও উপকৃত হবে।

আমাদের এখন ইন্টারনেটটাকে পজিটিভলি দেখা উচিত। যার জন্য অনেক বেশি রেগুলেটেড না হয়ে আমাদের প্রতিযোগিতা করতে দেওয়া উচিত। কম্পিটিশন কিন্তু ইনোভেশন নিয়ে আসা উচিত।

প্রশ্ন: সেবার মান নিয়ে সবসময়ই একটা প্রশ্ন থাকে। কলড্রপ এখনও একটা বড় ইস্যু। এসব সমাধানে আপনারা কী করছেন?

উত্তর: বাংলাদেশে আমরা যদি কলড্রপ পারসেন্টেজের কথা বলি তাহলে আমরা সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছি। এখন খবরে আসে যে গ্রামীণফোনের সবচেয়ে বেশি কলড্রপ। কিন্তু গ্রামীণফোনের নম্বর অব মিনিটসও সবচেয়ে বেশি। হিসাবটা হওয়া উচিত একশটার মধ্যে আমার কয়টা। আমরা যদি দেখি যে বাংলাদেশে ছয়শ স্পট আছে যেখানে টাওয়ার দেওয়া যাচ্ছে না। এই ছয়শ পকেটের মধ্যে একশটার মতো আছে স্ট্রাটেজিক লোকেশন। যেমন আগে ছিল কোর্ট, সংসদ ভবন, এমপি হোস্টেল এলাকা যেটা গতবছর আমরা সমাধান করেছি।

এরকম সব জায়গায় যদি নেটওয়ার্ক না থাকে তাহলে অপারেটরের বিশ্বাসযোগ্যতা কোথায় নেমে যায়! কিন্তু আমরা তো হেল্পলেস ছিলাম। আমাদের জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনেক বেশি কল যায় এবং তারা সবাই গ্রামীণফোন ব্যবহার করেন। তারা যদি কল করতে না পারেন…। তবে আমরা এখন সেগুলোর সমাধান করেছি। সরকারি সংস্থাগুলোতে তাও আমরা সাইট বসাতে পারছি। কিন্তু শহরে এখন বড় বড় বিল্ডিং হয়ে যাচ্ছে। আগে একটা পাঁচতলা ভবন ছিল একজন মালিক, ছাদে সাইট বসানো গেছে। এখন সেখানে ২০ তলা হয়েছে ৪০ জন মালিক। এই ছাদের ওপর একটা সাইট বসানোর সিদ্ধান্ত কে দেবে? ঢাকা শহর পৃথিবীতে কিন্তু একটাই, একেবারে ইউনিক। এত ডাইনামিক পরিবর্তন হচ্ছে, এত নির্মাণ হচ্ছে। এখানে আমাদের নিজেরা শিখেই কিন্তু সমস্যার সমাধান করতে হচ্ছে। আমাদের কিন্তু কেউ শিখিয়ে দিতে পারছে না।

প্রশ্ন: এখন গ্রামীণফোনের সঙ্গে সরকারের প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার অডিট আপত্তির বিষয়টি অমীমাংসিত রয়ে গেছে। আপনারা দুই হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন। কোন পথে এটার সমাধান দেখছেন?

উত্তর: আপনারা যেটা জানেন যে দুই হাজার কোটি টাকা আমরা জমা দিয়েছি। এর মধ্যে আবার অনেকগুলো আপত্তি সমাধান হয়ে গেছে যেগুলো আদালতে ছিল, এনবিআর থেকে ছিল। মোটামুটি এনবিআর এ যে সমস্যাগুলো ছিল মোটামুটি সবই কিন্তু সমাধান হয়েছে। বিটিআরসির টুজির বিষয়টিও সমাধান হয়েছে। একচুয়ালি এখন আর কোনো পাওনা নেই, সবই কিন্তু পরিশোধ করা হয়েছে। এখন যেটা দরকার একটা এমিকেবল সলিউশন বের করে নিয়ে আসা উচিত যে দুইটা পার্টি ‘উইদ আ রাইট গভর্নেন্স’ এটাকে রিভিউ করে দেখবে যে এই জমা দুই হাজার কোটি টাকার বাইরে আর কী কী রিজলভ হয়ে গেছে। যেটা রিজলভ হয়নি সেটাকে কী করা যায়। তা না হলে বছরের পর বছর এভাবে ঝুলতে থাকে। অপারেটর হিসেবে, ফরেন ইনভেস্টর হিসেবে এভাবে ঝুলতে থাকা কিন্তু আমাদের জন্য ভালো না। এটাতে এক ধরনের ভীতি কাজ করে। আর আমরা যেহেতু একটি লিস্টেড কোম্পানি এই তথ্যগুলো কিন্তু সব প্রকাশিত তথ্য। এর ফলে অন্য কোনো ইনভেস্টর যখন আসতে চায় তখন কিন্তু তারা অনেক সাবধানী হয়ে এগোয়। সুতরায় এটা একদিকে আমাদের জন্য ভালো না, দেশের জন্যও ভালো না। আমরা গত চার বছরে রেগুলেটরের সঙ্গে সম্পর্কের অনেক উন্নতি ঘটিয়েছি। আমার মনে হয় এটা সঠিক সময়, এসবের সমাধান করে ফেলা। এটা কিন্তু ফরেন ইনভেস্টমেন্ট এট্রাক্ট করার ক্ষেত্রে একটা ইতিবাচক বার্তা দেবে যে, সরকার লম্বা সময় ধরে ঝুলে থাকা আপত্তিগুলো মিটিয়ে ফেলছে।

প্রশ্ন: আপনি কম্পিটিশনের কথা বলছেন যেখানে বড় তিনটি অপারেটর। এখানকার মার্কেটের কী অবস্থা দেখছেন?

উত্তর: আমরা গ্লোবালি দেখছি টেলিকম মার্জার (একীভূত) হচ্ছে। অনেক বেশি অপারেটর একই সঙ্গে সাসটেইন করা কঠিন। আগে ভয়েস কলের যুগে যে মার্জিন নিয়ে বিজনেস করত, আসলে সেটা এখন আর হচ্ছে না। শুধু এশিয়াতে না ইউরোপের দেশগুলোতেও এসব নিয়ে আলাপ হচ্ছে। একটা মার্কেটে দুটো অপারেটর খুব বেশি হলে তিনটা হলে ঠিক আছে। আমরা কিন্তু চারটা অপারেটর নিয়ে মার্কেটে অপারেট করছি। বাংলাদেশের মতো মার্কেটে চারটা অপারেটর সাসটেইন করা কঠিন হবে। কারণ এখানে এত বেশি ইনভেস্টমেন্ট লাগে। যখন আমরা ডিজিটাল লাইফের কথা বলছি যে পরিমাণ ইনভেস্টমেন্ট আমাদের ডেটার ‘ভলিউম ক্যাটার’ করার জন্য লাগবে তাতে অপারেটরের প্রফিটেবিলিটি নিয়ে বড় উদ্বেগ তৈরি হবে। গ্রামীণফোনের মতো বড় অপারেটরের প্রফিটেবিলিটি যদি দেখেন কমছে যেহেতু ইনভেস্টমেন্ট বেড়ে যাচ্ছে তাহলে অন্যদের উদ্বেগটা তো আরও বড়।