ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান টিম বলছে, ৯৪ টাকায় চিনি কিনে ৮৪ টাকায় বিক্রির মতো মিথ্যা তথ্যও দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
Published : 22 Oct 2022, 05:49 PM
সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশিতে চিনি বিক্রির দায়ে ঢাকার মিরপুরের সাত প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
শনিবার মিরপুরের শাহ আলী মার্কেট, শাহ স্মৃতি মার্কেট এবং সিটি করপোরেশন মার্কেটে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদাউসের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।
ভোক্তা অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের কাছে হট লাইন বা বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছে যে বাজারে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না এবং বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে আমরা এই অভিযান পরিচালনা করেছি।”
বেলা ১২টার দিকে অভিযান পরিচালনাকালে দেখা যায়, শাহ স্মৃতি মার্কেটের তন্ময় এন্টারপ্রাইজে গিয়ে চিনির দর জানতে চায় ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান টিম।
কিন্তু ওই দোকানের সত্ত্বাধিকারী ব্যবসায়ী কামাল আহমেদ জানান তার দোকানে চিনি নেই। গত ১৬ অক্টোবরের পর থেকে মিল থেকে চিনি পাননি। তাই বিক্রিও করতে পারছেন না।
সেসময় ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদাউস দোকানের নথি ঘেঁটে দেখতে পান, গত ১৯ অক্টোবরেও ৩২০ বস্তা চিনি এনেছেন ব্যবসায়ী কামাল। সবগুলো চিনি তিনি পাইকারি দামে একজনের কাছে বিক্রি করেছেন।
প্রতি বস্তা চিনি ৪ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করেছেন বলে অভিযান টিমকে মিথ্যা তথ্য দেন এবং পরবর্তীতে ক্ষমা চান। মিল থেকে কত টাকায় চিনি কিনেছেন সেই রশিদও দেখাতে পারেননি কামাল। এরপর মিথ্যা তথ্য দেওয়া এবং বেশি দামে চিনি বিক্রির দায়ে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিদপ্তর।
একইভাবে মিরপুরের তিনটি মার্কেটে অভিযান চালিয়ে বেশি দামে চিনি বিক্রির দায়ে সাত প্রতিষ্ঠানকে অপরাধ বিবেচনায় ১০ হাজার, ৫ হাজার ও ৩ হাজার টাকা করে জরিমানা করে অধিদপ্তর।
অভিযানের পর জান্নাতুল ফেরদাউস সাংবাদিকদের জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন প্রজ্ঞাপন জারি করে জানিয়েছে যে, খুচরা খোলা চিনির সর্বোচ্চ হবে প্রতি কেজি ৯০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি হবে ৯৫ টাকা।
“অভিযানে আমরা কিছু দোকানে চিনি পেয়েছি আবার কিছু দোকানে চিনি পাইনি। তবে তারা অনেক সময় মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। তারা বেশি দামে বিক্রি করেছে আসলে। কিন্তু তারা দাবি করেছে সঠিক দামে বিক্রি করেছে।”
এই কর্মকর্তার ভাষ্য, “কোনো কোনো দোকানে আমরা এমনও পেয়েছি যে, তিনি ৯৪ টাকায় কিনেছেন কিন্তু ৮৪ টাকায় বিক্রি করছেন- এমন মিথ্যা তথ্যও দিচ্ছেন। চিনি যে আসলেও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি।
“আবার অনেক পাইকারি দোকানদার আমাদের জানিয়েছেন, তারা গত ৫/৬ দিন ধরে চিনি পাচ্ছেন না, তাই চিনি বিক্রি করছেন না। এরপর তাদের রেজিষ্ট্রার এবং নথিপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে আমরা দেখলাম, তারা গতকাল কিংবা গত পরশুদিনও চিনি বিক্রি করেছেন। তারা সেগুলোর কোনো এন্ট্রি রাখেননি। রেজিষ্ট্রারে লেখা আছে যে চিনিটা তাদের দোকান থেকে বের হয়েছে, কিন্তু কত দামে বিক্রি হয়েছে সেটা নেই।”
জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, আমরা পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোকে এসব অনিয়মের কারণে জরিমানার আওতায় এনেছি। অভিযানে আমরা খুচরা এবং পাইকার মিলে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি।
মিল থেকে কেন চাহিদা অনুযায়ী চিনি আসছে না, তা দেখার জন্য মিলে মিলেও অভিযান পরিালনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কেউ বেশি দাম নিলে তা ভিডিও করে বা অন্য কোনো প্রমাণ নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করার পরামর্শও দেন এই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন-