যারা যাচ্ছেন, তারা দেখে আর দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন বলে বেপারীরা জানিয়েছেন। ক্রেতারা বলছেন, দাম এখনও বেশি।
Published : 26 Jun 2023, 01:48 AM
কোরবানির ঈদের বাকি আর তিন দিন, প্রস্তুতি শেষে রাজধানীর হাটে রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে পশু বেচাকেনা। প্রথমদিন বেচাকেনা কম হলেও সোমবার থেকে হাট জমজমাট হওয়ার আশা প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এবার কোরবানির পশুর হাট ২০টি। এর মধ্যে উত্তর সিটিতে হাট আছে ১০টি, দক্ষিণে এই সংখ্যা ৯। এছাড়া কচুক্ষেত রজনীগন্ধা সুপার মার্কেটের পাশে বসেছে আরেকটি হাট, যেটি পরিচালনা করছে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড।
হাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির পশু আসছে এখনও, তবে সেভাবে বেচাকেনা শুরু হয়নি।
মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গায় বসা হাটে ক্রেতাদের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়েনি। ক্রেতারা এসে দর-দাম করে চলে যাচ্ছিলেন।
মেহেরপুরের গাংনী থেকে ১৫টি গরু নিয়ে শনিবার রাতে এই হাটে আসেন নাসির উদ্দীনসহ আরও ৬ জন।
নাসির বলেন, “লোকজন আসছে দাম জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছে।”
এবার গরুর দাম গত বছরের চেয়ে বেশি হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “গরুর খাদ্যের দাম অত্যধিক বেশি। এক বস্তা খাদ্য গত বছর যেটা ১২শ টাকায় কিনছি, এইবার সেইটা হইছে ২ হাজার টাকা।
“ভুষি ছিল সাড়ে পাঁচশ টাকা, এইবার হইছে সাড়ে সাতশ। আমরা নিজেদের গরু আনছি, আবার কিনেও আনছি, গতবারের চেয়ে প্রতিটা গরু ২০-২৫ হাজার টাকা বেশিতে কিনতে হয়েছে।”
নওগাঁর সাপাহার থেকে ৬টি গরু নিয়ে আসা রহমত আলী বলেন, তার কাছে দুপুর পর্যন্ত ৫-৬ জন ক্রেতা এসেছেন। দরদাম করেই চলে যান।
“কেউ কিনে না, খালি জিগায়। মনে হয়- কাইল থেকে বেচা শুরু হবে। এইবার ইন্ডিয়ার গরু খুব একটা আসে নাই। দেশি গরুর দাম বাড়তির দিকে।”
ইস্টার্ন হাউজিংয়ের হাটে আসা মিরপুরের জনতা হাউজিংয়ের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম জানালেন, হাটে গরু দেখতে এসেছেন, তবে দামে বনছে না।
“ব্যাপারীরা যেই দাম বলে তাতে আজ গরু কেনা যাবে না। প্রথমদিন বলে হয়ত তারা দাম বেশি চাচ্ছে। আমিও কিনছি না। আরও সময় গেলে হয়তে দাম কম বলবে। আমিও আরও দুয়েকটা হাট দেখে পরে কিনব।”
কচুক্ষেত হাটে এরইমধ্যে বেচাকেনা কিছুটা শুরু হতে দেখা যায়। এই হাট থেকে ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কেনেন ভাসানটেকের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন।
তিনি বলেন, “পরে দাম বাড়ে কি না কমে- জানি না। গরু পছন্দ হয়েছে, তাই কিনে ফেললাম। তবে দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি।”
তেজগাঁও পলিটেকনিক মাঠ হাটে গিয়ে দেখা গেল, এখানে গরু এসেছে ভালোই। কিন্তু এখনও বিক্রি সেভাবে শুরু হয়নি।
হাটে গরুর দরদাম করছিলেন কাফরুলের হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, “কোনো গরুর দামই এক লাখের নিচে বলছে না। যেটাই জিজ্ঞেস করি, দাম এক লাখের উপরে।
“অবশ্য তাদেরই দোষ দেই কীভাবে? সবকিছুর দাম বাইড়া গেছে। একটা বাছুর কিনলেও ৫০ হাজারের কমে পাওয়া যায় না।”
এই হাটের ইজারাদার মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০ থেকে ২৫টা গরু বিক্রি হয়েছে। কাল থেকে বিক্রি বাড়বে বলে তার আশা।
“আমাদের এখানে বেশ ভালোই গরু এসেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিক্রি শুরু হয়নি। কাল থেকে বাড়বে হয়ত। বিক্রি না হওয়ার কারণও আছে। ঢাকায় অনেকের বাড়িতেই গরু রাখার জায়গা নাই। আবার এখনও অফিস-আদালত বন্ধ হয় নাই। সে কারণে অনেকে এসে ঘুরে যাচ্ছেন, গরু কিনছেন না।”
ঢাকা উত্তরে হাট
আফতাব নগর, দক্ষিণখানের কাওলা শিয়ালডাঙ্গা হাট, উত্তরা দিয়াবাড়ি ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের পাশের বউ বাজার এলাকার খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদনগর) সংলগ্ন খালি জায়গা, মোহাম্মদপুরের বছিলা, গাবতলী হাট, মিরপুর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ, কাঁচকুড়া রহমান নগর আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা এবং মস্তুল পশ্চিম পাড়ার খালি জায়গায়।
ঢাকা দক্ষিণে হাট
উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাবের পাশের খালি জায়গা, ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা ও কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ সংলগ্ন খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন খালি জায়গা এবং লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা ও আমুলিয়া মডেল টাউন সংলগ্ন খালি জায়গায় কোরবানির পশুর হাট বসেছে।