জরিপ চালিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জেনেছে, পোশাক শিল্প মালিকরা ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার টাকা দিতে চান। তবে শ্রমিকদের দাবি ১৮ হাজার।
Published : 08 Oct 2023, 09:37 PM
তৈরি পোশাক খাতের কর্মীদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ, সিডিপি।
এক জরিপের মাধ্যমে পোশাক কর্মীদের চাহিদা ও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন এই বেতন কাঠামোর সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
পোশাকখাতের ক্রেতারা প্রতি পিস পোশাকের জন্য ৭ সেন্ট অতিরিক্ত দিলে শিল্প মালিকরা নতুন এই মজুরি বাস্তবায়নে চাপে পড়বেন না বলে মনে করে সংস্থাটি।
‘গার্মেন্টস খাতে ন্যূনতম মজুরি পুনঃনির্ধারণ: পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা’ বিষয়ে এক সংলাপে রোববার এই সুপারিশ তুলে ধরে সিপিডি।
রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে সিপিডি ও ক্রিশ্চিয়ান এইডের উদ্যোগে এই আয়োজন হয়।
এতে ‘সম্মানিত অতিথি’ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা।
অনুষ্ঠানে শ্রমিক নেতারা বাজার দর মাথায় নিয়ে ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা হওয়া উচিত বলে মত দেন।
মূল প্রবন্ধে সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহকারী তামিম আহমেদ বলেন, ২২৮ জন শ্রমিক ও ৭৬ কারখানায় জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, অনেক কারখানায় শ্রমিকরা ২০১৮ সালে ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি পায় না।
এমনকি শ্রমিকরা কোন গ্রেডে কাজ করছেন তারা জানেন না, পদোন্নতি পেতে ঊর্ধ্বতন গ্রেডে যেতে কতদিন সময় লাগে তাও জানেন না।
বেতন না পেলে কোথায় অভিযোগ জানাতে হবে তাও শ্রমিকরা জানে না বলে গবেষণায় পাওয়া গেছে।
মূল প্রবন্ধে বন্ধ হয়, “কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক অধিদপ্তরের উচিত ছিল, গুরুত্ব দিয়ে মজুরি কাঠামোর বাস্তবায়ন তদারকি করা।”
পোশাক শিল্প মালিকরা ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার টাকা দিতে চান জানিয়ে তামিম আহমেদ বলেন, “কিন্তু শ্রমিকরা চায় ১৮ হাজার টাকা।”
“জীবনযাত্রার ব্যয় ও মূল্যস্ফীতি হিসেবে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা হওয়া উচিত”, বলেন তিনি।
সিপিডি মনে করে, মজুরি কাঠামো প্রজ্ঞাপনের সঙ্গে তা বাস্তবায়নের নির্দেশনাও দেওয়া উচিত। মালিক, শ্রমিক ও শ্রম মন্ত্রণালয়- ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠনের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে মজুরি বাস্তবায়ন কার্যক্রম তদারকি করতে হবে বলেও মত দেয় তারা।
মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা জানান, গত এপ্রিলে বোর্ড গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত তারা তিনটি বৈঠক করেছেন।
এ মাসের শেষের দিকে আরেকটি বৈঠক হবে, যেখানে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো মজুরির ব্যাপারে প্রস্তাব দেবে। নভেম্বরের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় মালিকরাও চায় শ্রমিকের মজুরি বাড়ুক। কিন্তু মালিকদেরও তা দেওয়ার সক্ষমতা থাকতে হবে।”
এই মুহূর্তে অর্ডার কমে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কর্মসংস্থান ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ছে।”
পোশাকের দাম বাড়াতে বিজিএমইএ বিদেশি ক্রেতাদের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিচ্ছে বলে জানান সংগঠনের সভাপতি।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “বিদেশি ক্রেতাদের বায়িং বা সোর্সিং টিম এবং কমপ্লায়েন্স বা ইথিক্যাল টিমের মধ্যে সমন্বয় নেই। বায়িং টিম কম দামে পণ্য চায়, আর ইথিক্যাল টিম বলে ইথিকস (নৈতিকতা) মেনে পণ্য বানাও।
“বায়িং টিম ইথিক্যালি এ কাজ করছে কি না সেটা বায়ারদের ইথিক্যাল টিম দেখে না।
দুঃখজনক হলেও সত্য বায়ার এবং ব্রান্ডরা বাংলাদেশের শিল্প ও শ্রমিকদের রক্ত চুষছে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারি লীগের সভাপতি ও মজুরি বোর্ডের সদস্য সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, “শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ভাড়া বাড়ানো হয়। তাই শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির সুফল পান না।”
এ প্রবণতা বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে পোশাক শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ও গ্রাচ্যুইটি চালুর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “সস্তা শ্রম নিয়ে সস্তা মজুরি দেওয়া বন্ধ করতে হবে, এক্ষেত্রে বায়ারদের দায়িত্বশীল আচরণ করা জরুরি।”
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও মজুরি বোর্ডের সদস্য সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “মজুরি বোর্ডের এমনভাবে নতুন মজুরি প্রস্তাব করা উচিত যাতে কারখানা বন্ধ না হয়।”
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ বলেন, “পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা এবং বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ১০ শতাংশ হওয়া উচিত।”
বাস্তব সংকট বিবেচনায় নিয়ে মজুরি নির্ধারণ করা হলে পোশাক খাত আরও এগিয়ে যাবে বলেও মনে করেন তিনি।