রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল দেশের বিদ্যমান অবকাঠামোতে শোধন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড-ইআরএল।
রাশিয়া থেকে আসা তেলের নমুনা ল্যাবে পরীক্ষার পর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসিতে জমা দেওয়া এক প্রতিবেদন ইআরএল এ মূল্যায়ন জানিয়েছেন।
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ১৪টা আইটেম টেস্ট করেছি। আমাদের অনেক পুরাতন মেশিনারিজ। এই মেশিনারিজ দিয়ে এটা রিফাইন করা সম্ভব না। টেস্ট করে আমরা প্রতিবেদনটা বিপিসিতে জমা দিয়েছি। বিপিসি এটা যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়কে জানাবে।”
ওই প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার কথা জানিয়ে বিপিসি চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইস্টার্ন রিফাইনারি গতকাল প্রতিবেদন দিয়েছে। কেমিকেল অ্যানালাইসিস করে কিছু ফাইন্ডিংস এসেছে। ইআরএল এর যে মেশিনারি, তা রাশিয়া থেকে পাঠানো ক্রুড অয়েলে পরিশোধনের ‘উপযুক্ত না’ বলে প্রতিবেদনে পেয়েছি। এটি আমরা রাশিয়ান কোম্পানিকে জানিয়ে দেব। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।"
যুদ্ধের সংকটের মধ্যে মে মাসে রাশিয়া থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে অপরিশোধিত তেল কেনার প্রস্তাব পায় বাংলাদেশ।
তবে রাশিয়ার তেল বাংলাদেশের রিফাইনারিতে ‘পরিশোধনযোগ্য নয়’ জানিয়ে ওই প্রস্তাব সে সময় এড়িয়ে যাওয়ার ইংগিত দিয়েছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
এরপর রাশিয়া থেকে পরিশোধিত তেল কেনার প্রস্তাব আসে, যা খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করা হয়। এরইমধ্যে গত অগাস্টের শেষ দিকে রাশিয়ার তেল বাংলাদেশে পরিশোধনযোগ্য কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য ৫০ লিটার ক্রুড অয়েলের নমুনা পাঠানো হয়।
ওই নমুনা ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পৌঁছায়। ইআরএল এর জিএম (অপারেশনস ও প্ল্যানিং) রায়হান উদ্দিনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি সেই তেল ল্যাবে পরীক্ষা করে ২০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন তৈরি করে।
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান বলেন, “আমাদের অনেকদিনের পুরাতন মেশিনারিজ। আমরা যেটা রিফাইন করি সেটার সঙ্গে ম্যাচ করে না। আমরা আমদানি করি সৌদি আরব থেকে এএলসি (অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রড) ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে মারবার। ওদের ক্রডটা হালকা। আর এদেরটা (রাশিয়ান) গাঢ়। ঘনত্বে সমস্যা। রাশিয়ারটার ঘনত্ব অনেক বেশি।”
এছাড়া ক্রুডের মধ্যে ডিজেল ও ওপরের গ্যাসোলিন কম থাকায় ইআরএলের সঙ্গে ‘কোনওভাবে ম্যাচ করছে না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিপিসি চেয়ারম্যান আজাদ বলেন, “আমাদের মেশিনারিজ দিয়ে উপযুক্ত না মানে রাশিয়ান ক্রুড খারাপ তা না। সে দেশের জ্বালানির বিশাল জগত। পাঠানো স্যাম্পল সেখানকার একটা জায়গার মাত্র। ক্রুড অয়েলের স্যম্পল আমরা নিজ থেকে আনিনি। রাশিয়ান প্রতিষ্ঠানটি নিজ থেকে পাঠিয়ে আমাদের ফাইন্ডিংস জানার অনুরোধ করেছিল।"
বাংলাদেশ মূলত অপরিশোধিত তেল কেনে সৌদি আরবের সৌদি অ্যারামকো এবং আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি থেকে।
আর পরিশোধিত তেল সরবরাহ করে কুয়েত, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারতের আটটি কোম্পানি। এর মধ্যে চীনের কোম্পানি দুটি।
ইস্টার্ন রিফাইনারির বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন তেল পরিশোধনের সক্ষমতা রয়েছে। অপরিশোধিত তেলের ঘনত্বের মাত্রা বোঝানো হয় এপিআই (আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইন্সটিটিউট) গ্র্যাভিটি দিয়ে। এপিআই গ্র্যাভিটি যত বেশি হবে, ওই তেল তত হালকা হবে। এই মান ১০ এর বেশি হলে তেল পানিতে ভাসবে। আর ১০ এর কম হলে তা পানির চেয়ে ভারী হওয়ায় তলিয়ে যাবে।
ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানির এনার্জি ইনসাইটে দেখা যায়, রাশিয়ার পাঁচ ধরনের অপরিশোধিত তেলের মধ্যে ইএসপিও এর এপিআই গ্র্যাভিটি ৩৬, সাখালিন ব্লেন্ডের ৪৪ দশমিক ৭, সাইবেরিয়ান লাইটের ৩৪ দশমিক ৮, সোকল এর ৩৫ দশমিক ৬ এবং ইউরালস এর ৩০ দশমিক ৬। আর অ্যারাবিয়ান মারবানের এপিআই গ্র্যাভিটি ৪০ দশমিক ৪।