বিক্রেতাদের দাবি, মাসের শুরুতে বৃষ্টির কারণে ফলনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে সেই বৃষ্টিতে উৎপাদন বাড়ার কথা।
Published : 26 Dec 2023, 04:39 PM
বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেই, কিন্তু শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাজারে কম বলছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারা বিস্মিত, এই সময়ে এত দাম!
শীত পড়ার আগে দর হারাতে থাকা সবজিগুলো ভরা মৌসুমে এসে আবার চড়ছে দেখে আগারগাঁওয়ের বিএনপি বাজারে আসা ক্রেতা নিগার সুলতানা বিরক্ত।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এই সময়ে শিমের দাম চায় ৮০ টাকা। ভাবা যায়! কদিন আগেও তো ৪০ টাকা ছিল। আবার বিচিওয়ালা শিম হলে একশ টাকার বেশি চায়।”
একই বাজারে আসা আবুল হাসনাত বলেন, “এখন তো সবজির দাম কমার কথা। কিন্তু বাড়ছে। এগুলো তো আর বললে কিছু হয় না। দাম যতই থাকুক কিনতে হয়, কী আর করা!”
বিক্রেতাদের দাবি, মাসের শুরুতে বৃষ্টির কারণে ফলনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ কারণে এখন মফস্বল থেকে সবজির চালান কম। তাই দাম বেশি।
উত্তরবঙ্গে বগুড়ার মহাস্থানের হাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে দাম কমার বদলে বেড়ে গেছে। তবে উৎপাদন কম, এমন কথা বলছেন না কৃষক। দাম বেশি পাওয়ায় তারা কিন্তু বেশ খুশি।
সবজির কী দর
রাজধানীর মহল্লার বাজারগুলোতে এখনও ফুল কপি ও বাঁধাকপি ৫০ টাকা বা আশেপাশের দরে বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো দিন দাম চড়ে তার চেয়ে বেশি।
অথচ দুই সপ্তাহ আগে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় একেকটি ফুল কপি পাওয়া গেছে।
শিম বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত। কিছুদিন আগে তা নেমে এসেছিল ৪০ টাকার আশেপাশি।
বেগুনের দামও ৪০ থেকে ৫০ টাকা থেকে লাফ দিয়ে উঠেছে এখন ৭০ থেকে ৮০ বা তার চেয়ে বেশিতে।
অবাক করা ঘটনা হচ্ছে এই সময়ে নতুন আলুর দাম থাকে ২০ টাকার নিচে, এবার তা এখনও ৭০ থেকে ৮০ টাকা, যদিও দুই সপ্তাহ আগে তা ছিল ৫০ টাকা।
মুলার কেজি এখন মোটামুটি ৪০, শালগম ৫০ থেকে ৫৫, শীত আসার আগে সবজির উচ্চমূল্যের মধ্যেও যে পেঁপে ২০ টাকায় পাওয়া গেছে, তার দাম এখন ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায়।
সরকারি কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বাজারে ফুল কপি ও বাঁধা কপি ৩৩ থেকে ৮০ শতাংশ, লাউ ৫০ শতাংশ, বেগুন প্রায় দ্বিগুণ, কাঁচা পেঁপে ৪০ শতাংশ, মুলা ৩৩ শতাংশ এবং কাঁচা মরিচ ৮০ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতা ও সরকারি সংস্থার ভিন্ন বক্তব্য
কারওয়ান বাজারের সবজির আড়ৎদার আব্দুল মোতালেব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার সবজির দামটা বেশি। কাঁচামালের বাজারে কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। কিছুদিন আগে বৃষ্টির কারণে সবজি নষ্ট হয়েছে এবং সেই কারণে দামটা বেড়েছে।”
শনিবার মধ্যরাতে কারওয়ান বাজারে পাইকারি সবজি বিক্রি করতে বসেছিলেন মোহাম্মদ জুলহাস। তিনি বলেন, “এইবার আমদানি কম, দাম বেশি।”
হাতে থাকা ছোট আকারের ব্রোকলি দেখিয়ে বলেন, “কিনছি ৪০ ট্যাকায়, বেচব ৪৫ থেইক্যা ৫০ ট্যাকায়।”
তবে বিক্রেতাদের এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (সম্প্রসারণ ও কো-অর্ডিনেশন) মো. ছাইফুল আলম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার সবজির আবাদ কম হয়েছে এটি সঠিক নয়। কদিন আগে যে বৃষ্টি হয়েছে তাতে আবাদের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। উৎপাদন কম হওয়ার কথা বলে কেউ দাম বাড়ালেও বাজারে কিন্তু সবজির অভাব নেই।”
নড়াইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, “কিছু দিন আগে যে বৃষ্টি হয়েছিল সেটা সবজির জন্য বরং ভালো হয়েছে। এই জেলায় উৎপাদনেও কোনো সমস্যা হয়নি। তবুও বাজারে যদি দাম বেশি থাকে সেটাতে কৃষকের লাভ “
মোকামের খবর কী?
উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সবজির হাট বগুড়ার মহাস্থানে কাঁচা বাজারে বেশিরভাগ সবজির দাম বেড়েছে বলেই ব্যাপারীরা জানালেন। দাম কমেছে আলু, গাজর, টমেটোর।
প্রতিদিন এই হাট থেকে ৫০ থেকে ৬০টি ট্রাকে শাক সবজি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলায় যায়।
ভোর থেকে ব্যাটারিচালিত ভ্যান, অটোরিকশা, ছোট পিকআপে করে সবজি নিয়ে বাজারে আসতে থাকেন কৃষক। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিক্রি করেন কারা।
শিবগঞ্জ উপজেলার গুজিয়ার শহীদ মন্ডল জানান, রোববার ৩০ টাকা কেজি হিসাবে ফুলকপি বিক্রি করছেন তিনি। কিছুদিন আগে বিক্রি করেছিলেন ২৫ টাকা দরে।
বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ ২৮ হাজার টাকা জানিয়ে তিনি বলেন, “খরচ গত বছরের মতই আছে। উৎপাদন বিঘায় ৬০ থেকে ৭০ মণ।”
পাতাকপি বিক্রেতা মহাস্থানগড়ের তাহের মিয়া প্রতিটি দুই কেজি ওজনের একেকটি কপি বিক্রি করেছেন ২৫ টাকা কেজি দরে। হরতাল অবরোধও একই দামে বিক্রি করেছেন।
হামিদ মিয়া নামের আরেকজন জানান, হরতাল বা অবরোধ হলে কৃষকরা জমি থেকে কম সবজি উঠায়। ফলে এই সময় পাইকার কম থাকলেও দাম কমে না।
শিবগঞ্জের হাফিজার আলী সবচেয়ে ভালো মুলা ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। প্রতিবিঘা তার খরচ ১৬ হাজার টাকা এবং উৎপাদন হয়েছে বিঘায় ৭০-৮০ মণ।
বগুড়া সদরের বাঘোপাড়ার কৃষক তমছের করলা ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। কদিন আগে দর ছিল ৫৫ টাকা।
শিবগঞ্জের সোলায়মান ৭০ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করছেন। কদিন আগে পেয়েছেন ৪০ টাকা করে।
কাহালুরের বাসিন্দা জসিম মিয়া ৭০ টাকা কেজি করে পাকড়ি আলু বিক্রি করছেন। সপ্তাহখানেক আগে দর ছিল ৪০ টাকা।
বিক্রেতাদের তথ্য বলছে, দাম কমেছে হাতে গোনা দুই একটির।
বগুড়া সদরের কালিবালার মো. নুরুন্নবী নতুন পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৯০ টাকা কেজি দরে। ১০ দিন আগেও দর ছিল ১২০ টাকা।
কৃষক শিবগঞ্জের কৃষক কুদ্দুস মিয়া ৬০ টাকা কেজি দরে কাঁচামরিচ বিক্রি করেছেন। এক সপ্তাহ আগে দর পেয়েছিলেন ৮৫ টাকা।