রাজধানীর হাটগুলোয় এবার সব ধরনের গরুই এসেছে। তবে ছোটো এবং মাঝারি গরুর সরবরাহ বেশি। এসব গরুর দামও তুলনামূলকভাবে বেশি।
Published : 27 Jun 2023, 05:56 PM
ঈদের ছুটির প্রথম দিন রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা বাড়তে শুরু করলেও বেচাকেনায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে আষাঢ়ের বৃষ্টি।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় দিনের প্রথম ভাগে হাটে ক্রেতা ছিল কম। তবে দুপুরের পর থেকে হাটে ক্রেতা আসা শুরু করেছে। বৃষ্টি না থাকলে বিকেলের পর থেকে পুরোদমে বেচাকেনা শুরুর আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর হাটগুলোয় এবার সব ধরনের গরুই এসেছে। তবে ছোটো এবং মাঝারি গরুর সরবরাহ বেশি। এসব গরুর দামও তুলনামূলকভাবে বেশি।
ক্রেতারা বলছেন, গরুর দাম গত বছরের চেয়ে বেশি। আর বিক্রেতারা বলছেন, পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় কোরবানির বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। দাম বেশি মনে হলেও তারা ‘ন্যায্য দাম’ পাচ্ছেন না।
উত্তরার ১৬ এবং ১৮ নম্বর সেক্টর সংলগ্ন খালি জায়গায় বসানো কোরবানির হাটে অনেক পশু এসেছে। তবে ছোট এবং মাঝারি আকারের গরুই বেশি।
এক হাজার ১৪০ কেজি ওজনের হলেস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড় নিয়ে চুয়াডাঙ্গার আশরাফুল হক এবং তার স্ত্রী রোববার ভোরে ঢাকার এই হাটে এসেছেন। বাদশা নামের বিশাল এই গরুটির দাম প্রথম দিকে ১২ লাখ টাকা চাইছিলেন তিনি। কিন্তু ক্রেতা না পাওয়ায় গরুটি ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিতে চান তিনি।
“এই হাটে বড় গরুর চাহিদা কম। অন্য হাটে যে নিয়া যাব সেই সুযোগ নাই। ৪-৫ জন মানুষ লাগে এইটারে নিয়া যাইতে। থাকা-খাওয়ার খুব কষ্ট। এইজন্য এই দামে বেচলেও লস৷ যারা গরু পালে তারাই জানে খরচ কেমন।"
আব্দুল হাসিব রংপুর থেকে একটা গরু নিয়ে এসেছেন রোববার। এখনও গরুটি বিক্রি করতে না পারা হাসিব বলেন, “কাল থেকে মাত্র একজন কাস্টমার দাম জিজ্ঞেস করছিল৷ কাস্টমারই নাই, ভয়ে আছি বিক্রি না হয় কিনা৷ তবে আরও একটা দিন আছে, দেখি আল্লাহ কি করেন।"
বৃষ্টির কারণে হাটে ক্রেতা সমাগম কম বলে জানালেন জামালপুর থেকে আসা মো. শ্যামল। ২২টি খাসি নিয়ে আসা এই ব্যবসায়ীল ভাষায়, এবার বাজার ‘সুবিধার না’।
“এই পর্যন্ত তিনটা খাসি বিক্রি করছি। তবে আজ দুপুর পর্যন্ত একটাও বেচতে পারি নাই। খাসির হাটে কোনো তেরপল নাই। খাসি ভিজা গেলে ঠাণ্ডা লাইগা যাবে। আর পানিতে ভিজলে খাসি ভালো দেখা যায় না, দাম কমে যাওয়ার ভয় আছে।”
উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের পাকুরিয়া এলাকার মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, হাটে ভালোই গরু এসেছে। কিন্তু বড় গরুর চাহিদা কম।
“দুই লাখ টাকার নিচে দাম এমন গরু চলছে বেশি। এই আকারের গরুর দামও বড় গরুর চেয়ে বেশি। আমাদের বাজেট ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আর এর চেয়ে বেশি দামের গরু কিনছে ব্যবসায়ীরা। সাধারণ মানুষ কম দামের গরু কিনছে।"
রোববার গাবতলী হাটে ১০টি গরু নিয়ে এসেছেন চুয়াডাঙ্গার খামারি মো. হাজ্জাজ আলী। মঙ্গলবার পর্যন্ত একটিও গরু বিক্রি করতে পারেননি তিনি।
হাজ্জাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ক্রেতা সমাগম মোটামুটি, বৃষ্টি না হলে ক্রেতা বেশি আসত। যারা আসছেন, তারাও ভালো দাম বলছেন না।
“আমি আজ তিনদিন ধরে একটাও গরু বিক্রি করতে পারিনি। আমার যে টাকা খরচ হয়েছে সেই দামেও বলছে না ক্রেতারা। এই মৌসুমের শুরুতে যে খাবার কেজি ২০-৩০ টাকা ছিল তা বাড়তে বাড়তে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত ঠেকেছে। এখন কস্টিং না উঠলে কীভাবে গরু বিক্রি করি।”
ঝিনাইদহ থেকে আসা আরেক খামারি আলতাফ হোসেন বলেন, “ঢাকার ক্রেতাদের একটা সমস্যা হল তারা সারা বছর গরুর মাংস ৭০০ টাকার বেশি করে কিনে খায়। কিন্তু কোরবানির হাটে এসে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি হিসাব করে দাম বলে। এমন বললে গরু ফেরত নিয়ে যাব, কেজি দরে বিক্রি করলেও ভালো দাম পাব।”
এই হাট থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছেন মিরপুরের পল্লবীর বাসিন্দা আশরাফ আলী।
তিনি বলেন, “এবার দাম গত বছরের চেয়ে বেশি। আমি যেটা কিনছি সেটার দাম ১ লাখ ১০ হাজার টাকা হলে ঠিক ছিল।”