পাঁচ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তার আবেদন করা ন্যাশনাল ব্যাংকের গ্যারান্টর হওয়ার জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর চুক্তি সই করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
Published : 26 Sep 2024, 06:35 PM
সংকট কাটিয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে বাংলাদেশ ব্যাংকের জামিনদারিতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজার থেকে তারল্য সহায়তা দেওয়ার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা যত দ্রুত সম্পন্ন হয়; ততই ভালো বলে মন্তব্য করেছেন ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু।
সহায়তা চাওয়া ব্যাংকগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্যারান্টর বা জামিনদার হওয়ার চুক্তি সই করলেও এখনও কোনো সবল ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা পায়নি দুবল ব্যাংক।
এ বিষয়ে মিন্টু বলেন, সহায়তা পেতে যত দেরি হবে, সহায়তা তত বেশি লাগবে; আর যত কম সময় লাগবে, সহায়তাও তত কম লাগবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের উদ্দেশে কথা বলার সময় এই তাগিদ দেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডজনখানেক দুর্বল ব্যাংকের মধ্যে এরই মধ্যে সাতটি ব্যাংক তারল্য সহায়তা অর্থাৎ নগদ টাকার সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছে, সব মিলে যার পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকও রয়েছে।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে ১০টি ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপকরা (এমডি) দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দিতে তাদের সম্মতি দেন।
সাংবাদিকদের আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ব্যাংকগুলোতে যে সমস্যা আছে, তা সমাধানে যা যা করা দরকার সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক করবে। যেসব কারণে ব্যাংকগুলো এই পর্যায়ে গেছে, সেসব বিষয় দেখে ব্যবস্থাপনা ঠিক করার আহবান জানিয়েছেন গভর্নর। বর্তমানে যে সমস্যা ব্যাংকগুলোতে রয়েছে, সেগুলো ঠিক করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যা যা করার, করবে।
গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর ক্ষমতার পালাবদলের হাওয়ায় ব্যাংকিং খাতেও সংস্করণ শুরু হয়। দুর্বল ব্যাংকগুলোতে ‘অবৈধভাবে টাকা ছাপিয়ে’ তারল্য সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দেন অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়োগ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর।
তারল্য সহায়তা পেতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে পাঁচটি দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে তাদের সহায়তা পাইয়ে দিতে গ্যারান্টর হওয়ার চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও এখন পর্যন্ত সেই সহায়তা দেওয়ার জন্য ‘সম্মত’ ব্যাংকগুলো থেকে কোনো তহবিল আসেনি বলে খবর রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুর্বল ব্যাংকগুলোর পাশে দাঁড়াতে রাজি হয়েছে সোনালী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।
দুর্বল ব্যাংকগুলোর পাশে দ্রুততম সময়ে দাঁড়ানোর তাগিদ দিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংক চেয়ারম্যান মিন্টু বলেন, “ডে টু ডে ক্যাশ ফ্লোতে সমস্যা হচ্ছে। সাহায্য পেতে যত দেরি হবে, সহায়তা তত বেশি লাগবে।”
“কিছু কিছু ব্যাংকের এই মূহূর্তে ক্যাশ ইনফ্লোর সমস্যা আছে। সেই সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি উনি ( গভর্নর) বের করেছেন এবং এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল রয়েছেন।”
গভর্নরের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত কখনও যেন কোনো দুষ্ট চক্রের হাতে না পড়ে এবং এই খাত যাতে সর্বদা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য কন্ট্রিবিউট করতে পারে; সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আহসান মনসুর গভর্নর হওয়ার পর আগের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়, যেখানে চেয়ারম্যান হন মিন্টু।
পাঁচ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তার আবেদন করা ন্যাশনাল ব্যাংকের গ্যারান্টর হওয়ার জন্য ১৯ সেপ্টেম্বর চুক্তি সই করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আবেদন করা সাত ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহায়তা চেয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, যারা সাত হাজার ৯০০ কোটি টাকার চাহিদা দিয়েছে।
ইসলামী পাঁচ হাজার কোটি, এক্সিম চার হাজার কোটি, গ্লোবাল ইসলামী তিন হাজার ৫০০ কোটি, স্যোশাল ইসলামী দুই হাজার কোটি এবং ইউনিয়ন ব্যাংক দেড় হাজার কোটি টাকা চেয়ে আবেদন করেছে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিপত্র সইয়ের পর রোববার সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুক্তি হয়। তবে তারা কী পরিমাণ সহায়তা পাবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।