বিমান বলছে, গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনগুলোতে তথ্যের ‘বিভ্রান্তি’ রয়েছে, যা জনমনে বিমান সম্পর্কে ‘নেতিবাচক ধারণা’ সৃষ্টি করছে।
Published : 11 Nov 2024, 06:11 PM
ফ্লাইট চলাকালে ‘বারবার খাবার চেয়ে’ ক্রেবিন ক্রুদের সঙ্গে ‘অসদাচরণ’ করার অভিযোগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিককে পুলিশে সোপর্দ করার ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা বিমানের বিজি-২০৮ ফ্লাইটের যাত্রী ফয়েজ আহমেদ খানের সঙ্গে কেবিন ক্রুদের কথা কাটাকাটি হয়। পরে অন্য যাত্রীরা তাকে থামানোর চেষ্টা করলে তাদের সঙ্গেও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। ফয়েজ একজন ক্রুর ‘গায়েও হাত তোলেন’ বলে বিমানের অভিযোগ।
২৮ অক্টোবর দুপুর ১টা ৫ মিনিটে ফ্লাইটটি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর সিভিল এভিয়েশন ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হলে ওই যাত্রীকে আটক করে সিলেট এয়ারপোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশের পর ঘটনাটি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ফয়েজ উচ্চ ডায়াবেটিসের রোগী। সে কারণে তিনি ফ্লাইট চলাকালে বার বার খাবার চাইছিলেন ।
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
সেখানে বলা হয়, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা প্রতিবেদনগুলোতে তথ্যের ‘বিভ্রান্তি’ রয়েছে, যা জনমনে বিমান সম্পর্কে ‘নেতিবাচক ধারণা’ সৃষ্টি করছে।
বিমান বলছে, ওই ফ্লাইটের সিলেটগামী একজন যাত্রী ফ্লাইটে ওঠার পর কেবিন ক্রুদের বারবার ডাকতে থাকেন এবং খাবার দিতে বলেন। কেবিন ক্রুরা তাকে নির্ধারিত মিলের বাইরেও বেশ কয়েকবার খাবার ও ড্রিংকস সরবরাহ করে। পরবর্তীতে তিনি কিছুক্ষণ পরে আবারও একজন কেবিন ক্রুকে ডাকেন। সেই ক্রু তখন ফ্লাইটের অন্য যাত্রীদেরকে খাবার পরিবেশনে ব্যস্ত থাকায় আসতে কয়েক মিনিট দেরি হয়।
“এরপর ওই যাত্রী উত্তেজিত হয়ে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। এবং এক পর্যায়ে দায়িত্বরত কেবিন ক্রুকে অশালীন ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন।
“এক পর্যায়ে তিনি ওই নারী কেবিন ক্রুকে ধাক্কা দেন এবং গায়ে হাত তোলেন। তখন একজন পুরুষ কেবিন ক্রু তাকে নিবৃত করতে গেলে তিনি তার টাই টেনে ছিঁড়ে ফেলেন।”
বিমানের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আশপাশের অন্যান্য যাত্রীরা তাকে থামাতে গেলে তিনি তাদের প্রতিও ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করেন এবং শারীরিকভাবেও হেনস্তা করেন।
“পরে কেবিন ক্রুরা বিষয়টি পাইলটদের অবহিত করলে ক্যাপ্টেন ওই যাত্রীকে বুঝিয়ে সিটে বসানোর নির্দেশনা দেন। পাইলট ঘোষণা দেন, যদি তিনি নিবৃত না হন, তাহলে ফ্লাইট নিকটস্থ অন্য কোনো এয়ারপোর্টে জরুরি অবতরণ করানো হবে। পাশাপাশি কেবিন ক্রুদের ডিউটি পজিশনও পরিবর্তন করে দেওয়া হয়।”
বিমানের দাবি, “অনেকে প্রচার করছেন তাকে যথাযথ খাবার দেওয়া হয়নি। এটি ঠিক নয়, ফ্লাইটের যাত্রীদের নিয়মানুযায়ী সব ধরনের সার্ভিস সময় মত প্রদান করা হয়েছে। ওই যাত্রীকে নির্ধারিত মিলেও বাইরেও অতিরিক্ত সার্ভিস প্রদান করা হয়েছে।
“সার্ভিস প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ব্যত্যয় হয়নি। প্রচার করা হচ্ছে ফ্লাইটের ভিতর যাত্রীকে বেঁধে রাখা হয়েছে, যা সঠিক নয়। যাত্রীকে নিবৃত করতে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি; বরং তাকে বুঝিয়ে নিবৃত করা হয়।”
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর ওই যাত্রীকে সিভিল এভিয়েশনের সিকিউরিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে সিভিল এভিয়েশন সিকিউরিটি তাকে থানায় হস্তান্তর করলে থানা থেকে পরিবারের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিমানের দাবি, ওই যাত্রী কেবিন ক্রু ও অন্যান্য যাত্রীদের সাথে যে আচরণ করেছেন, সে তুলনায় এভিয়েশন পলিসি (থ্রেট লেভেল) অনুযায়ী বিমানের পক্ষ থেকে যাত্রীর বিরুদ্ধে কোনো ‘কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি’।
পুরনো খবর-