নতুন এই পদ্ধতি চালু করতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
Published : 17 Jul 2024, 12:53 AM
প্রতিবেদনে বড় ধরনের ‘গড়বড়’ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআর এর সরবরাহ করা রপ্তানি তথ্য ব্যবহার না করে এখন থেকে নিজস্ব পদ্ধতিতে তা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন প্রকাশের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি।
নতুন এই পদ্ধতি চালু করতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
দীর্ঘদিন ধরে প্রতি মাসের শুরুতে সদ্যসমাপ্ত মাসের রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করে আসছিল ইপিবি। তবে গত নভেম্বর থেকে মাসে ৫ বিলিয়নেরও বেশি রপ্তানি আয়ের তথ্য আসতে থাকায় তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা।
এমন পরিস্থিতিতে গত ৪ জুলাই চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাবের তথ্য দিতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানি আয় প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে দেখায়। হঠাৎ রপ্তানি আয়ে এমন পরিবর্তন সব মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১০ মাসে ইপিবির তথ্য অনুযায়ী রপ্তানি হয় ৪৭ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা। আর বাংলাদেশ ব্যাংকে এই সময়ে রপ্তানি আয় আসে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারের। তাতে ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ১৪ বিলিয়ন ডলারের ব্যবধান ধরা পড়ে।
এ ঘটনার পর ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের শেষ মাস জুনের রপ্তানি তথ্য আর প্রকাশ করেনি ইপিবি।
রপ্তানি তথ্যে এমন পরিবর্তন আসার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছিলেন, এনবিআরের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করে ইপিবি। বাংলাদেশ ব্যাংক কেন এখানে পরিবর্তন এনেছে, তা তারাই ভালো বলতে পারবে।
তাহলে রপ্তানি তথ্য কীভাবে প্রকাশ করা হবে, তা নিয়ে এক দিন আগে সোমবার অর্থমন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়। সেখানে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আলোচনা করেন।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইপিবি এতদিন এনবিআরের সরবরাহ করা রপ্তানি ডাটা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করত। আমরা আর এনবিআরের ভিত্তিতে রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করব না। এনবিআর আর বাংলাদেশ ব্যাংক মিলে রপ্তানি ডাটা সমন্বয় করে প্রকাশ করবে।
“ইপিবি অবশ্যই প্রাথমিক ডেটা সংগ্রহ করে প্রকাশ করবে। আমরা চেষ্টা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে খাতভিত্তিক প্রাইমারি ডাটা আমরা উপস্থাপন করব। নতুন করে আবার শুরু করতে হচ্ছে। প্রস্ততি নিতে একটু সময় লাগবে। যখন সব প্রস্তুত হবে, তখন আমরা সবাইকে জানাব।”
নতুন নিয়মে রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করতে কতদিন লাগতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা কাজ শুরু করছি, আজকে মিটিং করেছি। কীভাবে ডেটা কালেক্ট করব, সেটা দেখছি। তথ্য-উপাত্ত আমাদের কাছে আছে। কিন্তু কীভাবে সেটা প্রকশযোগ্য করব, সেজন্য সময় লাগবে। আমি মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সাত দিনের সময় দিয়েছি। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে বলতে পারব কবে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রপ্তানি তথ্য দেওয়া শুরু করব।”
কথা প্রসঙ্গে ‘তিন মাস’ সময় নেওয়ার তথ্য দিয়ে টিটু বলেন, “তিন মাস সময়ে নিয়ে নিয়েছি, যেন প্রতিদিন প্রশ্নের মুখে না পড়ি। তবে আমরা নিশ্চিত যে এর আগেই হয়ে যাবে। তিন মাস হয়ত লাগবে না। যেহেতু একবার সমস্যা হয়ে গেছে, তাই এবার নিশ্চিত করতে চাচ্ছি যে, আমরা যেই ডাটা প্রকাশ করব, তার একটা ব্যাখ্যা যেন আমাদের কাছে থাকে।”
রপ্তানি তথ্যে হেরফের হওয়ার একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায় প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে।
“বাংলাদেশ ব্যাংক যে তথ্য দিচ্ছে সেটা হচ্ছে রপ্তানির বিপরীতে কত টাকা পাচ্ছে সেটা। এনবিআর দিচ্ছে এইচএস কোড অনুযায়ী কোন পণ্য কত টাকায় রপ্তানি হয়েছে সেটা। আমরা দিতে চাচ্ছি পোশাক, চামড়া শিল্পসহ অন্যান্য খাত ভিত্তিক বা পণ্য ভিত্তিক তথ্য। সামগ্রিকভাবে কত মূল্যের পণ্য উৎপাদন হল, এসব বিষয় মিলিয়ে। এখন মেনুয়াল যে ডাটা বিশ্লেষণ পদ্ধতি আছে, এটাকে আমরা স্বয়ংক্রিয় করব। পাশাপাশি প্রাইমারি সোর্স থেকে ডাটা কালেকশন করতে হবে। ডাটা ইনপুট দেওয়ার জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে। এর জন্য খাতগুলোকে একসেস দিতে হবে। সবার কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে সামগ্রিক বিশ্লেষণ আমরা দেব,” বলেন তিনি।
ব্যাখ্যা আছে অর্থ মন্ত্রণালয়েরও
সোমবারের বৈঠকের সূত্র ধরে মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রণালয় থেকে রপ্তানির তথ্য নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
সেখানে বলা হয়েছে, সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত রপ্তানির উপাত্তসংক্রান্ত সংবাদের প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এর রপ্তানি তথ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থার উপাত্ত সংগ্রহের ক্ষেত্রে বর্তমানে একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। ফলে আশা করা যায়, এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রকাশিত রপ্তানি তথ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য থাকবে না।
মাথাপিছু আয় কমবে?
অর্থমন্ত্রণালয়ের ভাষ্য হচ্ছে- রপ্তানির বিপরীতে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা প্রকৃতপক্ষে দেশে আসে বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু সেই পরিমাণ অর্থ দেশের রপ্তানির পরিমাণ হিসেবে প্রকাশ করে থাকে। জিডিপির হিসাব করার সময় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বাংলাদেশ ব্যাংকের এ হিসাবকেই বিবেচনায় নেয়। ফলে সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় রপ্তানি কমে যাওয়া এবং এর ফলে জিডিপি ও মাথাপিছু আয় কমে যাওয়ার যে আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে তা সঠিক নয়।
ব্যালেন্স অব পেমেন্ট?
ব্যালেন্স অব পেমেন্টের চলতি হিসাব এবং আর্থিক হিসাবের কিছু ক্ষেত্রে উপাত্তের পুনর্বিন্যাস হয়েছে। তবে এর ফলে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের সার্বিক ভারসাম্যে কোনো পরিবর্তন আসবে না। এরই মধ্যে সবার অবগতির জন্য পুনর্বিন্যস্ত ব্যালেন্স অব পেমেন্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রণোদনা বাবদ বেশি খরচ হল?
অর্থমন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রপ্তানির ক্ষেত্রে দেওয়া নগদ আর্থিক প্রণোদনার পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রকৃত রপ্তানি আয় প্রাপ্তি এবং থার্ড পার্টি অডিটরের মাধ্যমে প্রকৃত ক্যাশ ইনসেন্টিভ নিরুপণের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। সুতরাং রপ্তানির বিপরীতে সরকার যে নগদ আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে, তা সঠিক রয়েছে।
আরও পড়ুন
‘আইএমএফের চাপে’ সমন্বয়, চলতি ও আর্থিক হিসাবে বড় পরিবর্তন
রপ্তানি আয়ের তথ্যে এত ‘ব্যবধান’ কেন? যা বললেন সালমান এফ রহমান