“প্রথমে আমরা কাপড় ও সুতা আমদানি করি, তারপর রপ্তানি করি। এখানে মোট মূল্য এক্সপোর্ট হিসেবে ধরা হয়”, বলেন প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা।
Published : 07 Jul 2024, 07:34 PM
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির হিসাবে একটি ‘ভুল’ ছাড়া এ সংস্থার রপ্তানি আয়ের প্রতিবেদন ‘ঠিক’ আছে বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
রোববার ঢাকার একটি হোটেলে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স-আইসিসি বাংলাদেশ আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন।
রপ্তানি আয়ের হিসাব কষার পদ্ধতির ব্যাখ্যায় সালমান বলেন, “আমরা দুইভাবে রপ্তানি করি। এর একটি হচ্ছে ব্যাংক টু ব্যাংক এলসি (ঋণপত্র)। প্রথমে আমরা কাপড় ও সুতা আমদানি করি, তারপর রপ্তানি করি। এখানে মোট মূল্য এক্সপোর্ট হিসেবে ধরা হয়।
“আবার আরেকটি হচ্ছে কাপড় ও সুতা বিনা মূল্যে ক্রেতারা পাঠিয়ে দেয়। যখন রপ্তানি হয়, ক্রেতারা আমাদের শুধু সিএমটি (কাটিং, মেকিং অ্যান্ড ট্রিমিং) পেমেন্ট করে। কিন্তু ইপিবি এখানে পুরো রপ্তানি মূল্য দেখিয়েছে। আমি মনে করি ইপিবি ভুল করেনি।”
রপ্তানি পণ্যের মূল্য এবং তার বিপরীতে দেশে আসা রপ্তানি আয়ের ব্যবধান র্দীঘদিন ধরে বাড়ছে। সবশেষ গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১০ মাসে ইপিবির তথ্য অনুযায়ী রপ্তানি হয় ৪৭ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা। আর বাংলাদেশ ব্যাংকে এই সময়ে রপ্তানি আয় আসে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারের। তাতে ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ১৪ বিলিয়ন ডলারের ব্যবধান থাকছে।
এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য সমন্বয়ের পর তা উসকে দিয়েছে নানা আলোচনা; বাংলাদেশের রপ্তানি আয় আসলে কত সেই প্রশ্নও সামনে এসেছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, রপ্তানির পরিমাণ বেশি দেখানো হয়েছে। তবে ইপিবি বলছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর যে তথ্য দেয়, সেটিই তারা সরবরাহ করে।
তাহলে কার তথ্য সঠিক- এ বিতর্কের মধ্যে সালমান এফ রহমান বলছেন, “আমি সুতা আর কাপড় বিনামূল্যে পেয়েছি, নাকি কিনেছি, সেটা মূল বিষয় নয়। সেখানে যে সমস্যা তা হল, ইপিবি যখন পুরো মূল্য দেখায় কিন্তু আসলে আমি শুধু সিএমটি পাই। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়।
“তাদের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। ইপিবির যেটা ভুল হয়েছে, ইপিজেড থেকে যে রপ্তানি হয়, তা একবার হিসাবে ধরা হয়, আবার যখন গার্মেন্টস থেকে রপ্তানি হয়; সেটা আবার ধরা হয়। এখানে ডাবল হিসাব হয়। সেটা তারা এবার ঠিক করে দিয়েছেন। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে এ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’’
এদিকে বাংলাদেশে ব্যাংকের সমন্বয়ের পর নতুন হিসাবে প্রকৃত রপ্তানি আয় কত দাঁড়াচ্ছে, তা এখনও প্রকাশ করেনি কোনো সংস্থা। এ নিয়ে নতুন কোনো তথ্যও দেওয়া হচ্ছে না। কবে তা জানা যাবে, সেটিও কেউ বলছেন না।
সেমিনারে আইসিসি এর সহসভাপতি এ কে আজাদ বলেন, “আমাদের হিসাবের সঙ্গে সব সময় ইপিবির একটা দূরত্ব থেকে যায়। ইপিবির হিসাব সঠিক করা উচিত।”
দুই প্রতিষ্ঠানের তথ্যে ‘গলদ’ দূর করতে আজাদের পরামর্শ, কাস্টমস ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে ইপিবি রপ্তানি আয়ের প্রতিবেদন প্রকাশ করলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-বিকেএমইএ এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, “আমি অনেক বছর ধরে বলছি, ইপিবির রপ্তানি তথ্যে ভুল আছে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যকেই প্রাধান্য দিয়েছি সব সময়, এখনও দিচ্ছি।”
দেশের রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ইপিবি। এ সংস্থার তথ্যকে উৎস হিসেবে দেখিয়ে রপ্তানি আয়ের তথ্য বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রকাশ করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল আলম টিটুও বলতে পারছেন না, প্রকৃত রপ্তানি আয় আসলে কত। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বয় করেছে, তারাই বলবে।”
রপ্তানি অনুযায়ী দেশে অর্থ আসছে না– এমন বিতর্কের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিওপি প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহাজীকরণ করা রপ্তানি পণ্যের তথ্য সংশোধনের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতিতে স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রি ও সিএমটি (কাটিং, মেকিং অ্যান্ড ট্রিমিং) হিসাব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতেই প্রকৃত রপ্তানি কমে যাওয়ায় চলতি হিসাব, সার্বিক ভারসাম্য ও আর্থিক হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে বড় পরিবর্তন আসে।
নতুন হিসাবের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক মানে হিসাব শুরু করায় রপ্তানি আয় কমে আসার যে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল তা অবসানের পাশাপাশি রপ্তানি ও রপ্তানি আয়ের মধ্যে থাকা ব্যবধান কমে আসবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানি আয়ের তথ্য সংরক্ষণ করে। এখন থেকে দেশের বাইরে প্রকৃত রপ্তানি কত হল শুধু তাই ধরবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিপরীতে রপ্তানি আয় বিবেচনায় নেওয়া হবে।
“নতুন পদ্ধতিতে রপ্তানি ও আয়ের মধ্যে থাকা ব্যবধান কমে আসবে।’’