“আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন মানি না।”
Published : 05 Dec 2024, 11:57 AM
এক দশক ধরে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ শফিক বিন আবদুল্লাহর পুনর্নিয়োগের আবেদন নাকচ হলেও দায়িত্ব ছাড়েননি তিনি; মানতে নারাজ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা।
তদন্তে অনিয়ম-দুর্নীতির ‘প্রমাণ পাওয়ার’ যুক্তিতে গেল মাসে তার পুনর্নিয়োগের আবেদন নাকচ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু দায়িত্ব না ছেড়ে শফিক বিন আবদুল্লাহ বলছেন, তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন মানেন না।
২০১৪ সাল থেকে বিদেশি খাতের ব্যাংকটিতে দায়িত্ব পালন করে আসছেন শফিক বিন আবদুল্লাহ। সম্প্রতি তার মেয়াদ নবায়নের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন পাঠায় আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
সেই আবেদন নাকচ হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে আরেকটি চিঠি পাঠায় আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। এতে বলা হয়, শফিক বিন আবদুল্লাহই ব্যাংকটির এমডির দায়িত্বে বহাল থাকবেন।
এ কারণে তাকে যেন এমডি হিসেবেই রাখা হয়, সে বিষয়টিও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পুনর্বিবেচনা করতে বলেছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।
গেল সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক নিয়ে তদন্ত নেমে এমডি মোহাম্মদ শফিকের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সন্ধান পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
“আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে এসব বিষয় তুলে ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাকে আবার এমডির দায়িত্ব না দেওয়ার কথা জানিয়ে দেয়। চিঠিতে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাও ছিল।”
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শফিক বিন আব্দুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠি পাওয়ার পর পুনরায় আমরা তাদের চিঠি দিয়েছি।
“চিঠিতে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাকে আবার এমডি হিসেবে চেয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে আবার বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।”
অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন মানি না। কারণ এই তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমার সুনাম ক্ষুন্ন করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
“গভর্নরের সঙ্গে এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করব। বিষয়টি আমরা চিঠিতে উল্লেখও করেছি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি।”
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চেয়েছেন কি না বা অভিযোগের বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করেছেন কি না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে আমাকে সুযোগ দেয়নি।”
নতুন করে পাঠানো আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের চিঠির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, “এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যালোচনা করছে।”
গভর্নরের সঙ্গে তার দেখা করার পর বিষয়টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা নিয়ে কাজ চলছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেছেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক শফিক বিন আব্দুল্লাহকে পুনরায় নিয়োগ দেয়নি। তারপরও তিনি অফিস করছেন। তার বিষয়ে অনিয়ম বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রভাব খাটিয়ে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করতে চাচ্ছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, “পুনর্নিয়োগের আবেদন নাকচ হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক অভিযোগ তুলেছে যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা তার সুনাম ক্ষুন্ন করতে চাচ্ছেন।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাকে পুনরায় নিয়োগ দেয়নি। তারপরও তিনি অফিস করছেন। তার বিষয়ে অনিয়ম বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে।
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে এমডির পুনর্নিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের 'না'