Published : 17 Oct 2024, 08:21 PM
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির আলোচনায় বরাবর মধ্যস্বত্বভোগীদের ভূমিকার বিষয়টি নিয়ে প্রাধান্য পেলেও একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে উল্টো চিত্র।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বা ডিসিসিআই পরিচালিত সেই গবেষণার ফলাফল বলছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদকের ভূমিকাই ‘প্রধান’। মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফার হার তুলনামূলক কম।
চাল, মুরগি, ডিম, সবজির ব্যাপক মূল্য বৃদ্ধিতে তুমুল আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার ঢাকায় সেমিনার করে এই বিষয়টি জানানো হয়।
গবেষণায় দেখানো হয়, নিত্য পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেশে উৎপাদিত ১৬টি পণ্যের মধ্যে ১৩টিরই উৎপাদনের খরচের তুলনায় একদম খুচরা পর্যায়ে যেতে দাম দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।
চাল, পেঁয়াজ, আদা, আলু, লবণ, মরিচসহ এসব পণ্যে সর্বনিম্ন ১০২ শতাংশ থেকে ৮৩০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ার তথ্য উঠে এসেছে।
দাম বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, উৎপাদক বা কৃষক যখন এসব পণ্য বিক্রি করছে, তখনই তারা এসব পণ্যে সর্বনিম্ন ৪৪ শতাংশ থেকে ৪৮০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করেছে।
পাইকারি বা খুচরা পর্যায়ে এসব পণ্যের দাম এক বা দুই অঙ্কের ঘরেই ছিল বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।
ডিসিসিআইএর কার্যালয়ে সেমিনারে সংগঠনটির নির্বাহী সচিব একেএম আসাদুজ্জামান পাটোয়ারী মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ধরেন। জানান, দেশে উৎপাদিত ১৬টি পণ্যের পাশাপাশি আমদানি করা ৯টি পণ্যের ওপর গবেষণা চালিয়েছে ব্যবসায়ীদের এ সংগঠনটি।
৮টি বিভাগের ৬০০ জন উৎপাদক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতাদের ওপর এ গবেষণা চলে।
দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদকের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, “চাল, পোলট্রি মুরগি, গরুর মাংস ও ডিমের ডাম বাড়ার কারণ উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি; পেঁয়াজ ও আদা, রসুনের দাম বাড়ার কারণ সরবরাহে ঘাটতি; পোল্ট্রি মুরগি, গরুর মাংস, লাল ও সবুজ মরিচের বৃদ্ধির কারণ অদক্ষ বাজার প্রক্রিয়া।”
গবেষণার এ ফলকে ‘অপিনিয়ন বা মত’ উল্লেখ করে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, “মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা সমস্ত প্রফিট খেয়ে ফেলছে এটা হয়তবা সম্পূর্ণ সঠিক না। আমরা পত্রিকাতে হেডলাইন করি, ‘তিন টাকার প্রোডাক্ট ঢাকা শহরে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়’। তার মনে ৬৭ টাকা হচ্ছে মার্জিন। এটাই মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের পকেটে যায়।
“আপনি যখন সারাদেশের এভারেজ প্রাইস হিসাব করবেন তখন দেখবেন যে এটা সারা বছর হয় না। এটা হয়ত বছরে একদিনের জন্য সত্যি। কিন্তু একটা মাসের জন্য যখন হিসাবটা করছি তখন দেখা যাচ্ছে এভারেজ মার্জিন কিন্তু এতটা বেশি না।”
উৎপাদকের দাম বৃদ্ধির প্রবণতার পেছনে সব কারণ গবেষণায় উঠে আসেনি বলেও ধারণা করছেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
মধ্যস্বত্বভোগীদের মার্জিন (মুনাফার হার) নিয়ে তিনি বলেন, “তারা সমিতিতে চাঁদা দিচ্ছে, আরও অনেক ধরনের চাঁদা আছে, পরোক্ষ অনেক খরচ আছে, আমরা যদি এই হিসাবগুলো সঠিকভাবে না করতে পারি তাহলে আমাদের সঠিক নীতি নেওয়া সম্ভব না। সঠিক নীতিমালা সুপারিশ করাও সম্ভব না।”
বিরুদ্ধ মত
সেমিনারেই গবেষণার এই ফলাফলের বিরুদ্ধে মত দেন একজন অংশগ্রহণকারী।
উৎপাদকের লাভের প্রবণতা থেকে দাম বাড়ছে না বলে দাবি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) সায়েরা ইউনুস গবেষকের উদ্দেশে বলেন, “আপনি দেখিয়েছেন উৎপাদকরা বেশি দাম বাড়াচ্ছে, এটা কিন্তু তাদের প্রফিট মোটিভ না।
“শুরুতেই যেতে হবে কেন তারা দাম বাড়াচ্ছেন। কাঁচা মাল, বীজ, উপকরণ, খাবার, সব জিনিসেরই দামই বেশি।”
স্থানীয় থেকে সব পর্যায়ে সরকারের তদারকি বৃদ্ধির দাবি করে তিনি বলেন, “মনিটরিং করা না গেলে জিডিপি, দাম নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা যাবে না।”
গবেষণায় উঠে আসা নন-ইকোনমিক ব্যারিয়ার উল্লেখ করে বলেন, “মুদ্রানীতি দিয়ে সবসময় মূল্যস্ফীতি কমানো যায় না।… তাই পলিসি রেট বাড়ালেও মূল্যস্ফীতি কমেনি।”
আরও পড়ুন:
কৃষিপণ্য: বিধিমালা কিতাবে রেখে 'ভুল পথে' বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা