এলটিএফএফ: দীর্ঘমেয়াদী ঋণে সুদহার কমাল বাংলাদেশ ব্যাংক

ব্যাংকগুলো মেয়াদ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2023, 05:27 PM
Updated : 16 Jan 2023, 05:27 PM

বৈদেশিক মুদ্রায় পরিচালিত দীর্ঘমেয়াদী তহবিল ‘লং টার্ম ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটিজের’ (এলটিএফএফ) থেকে নেওয়া ঋণের সুদহার কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক; এতে উদ্যোক্তাদের আরও কিছুটা কম সুদে ঋণ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

সোমবার এক সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এলটিএফএফ তহবিলের ঋণের সুদহার হবে ব্যাংকগুলোর জন্য মেয়াদ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ শতাংশ। এরসঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ যোগ করে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। নতুন এ সুদহার ১ জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে।

দেশের অভ্যন্তরে ঋণের সুদহার কমে যাওয়া ও লাইবর রেট বেড়ে যাওয়ায় উদ্যোক্তাদের কম সুদে ঋণ দিতে নতুন এ সিদ্ধান্ত বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরিচালক সারওয়ার হোসেন।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আর্থিক খাতের সহায়তা প্রকল্পের (এফএসএসপি) আওতায় পরিচালিত এ তহবিল থেকে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার দাঁড়াবে ব্যাংকভেদে সর্বোচ্চ ৬ থেকে ৭ শতাংশ।

এ তহবিল থেকে ঋণ পেতে এখন সুদহার গণনায় লাইবর হার যুক্ত করার বিষয়টিও তুলে নেওয়া হয়েছে। আগে ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে লাইবর (লন্ডনের আন্তঃব্যাংক সুদহার) এর সঙ্গে ২ থেকে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদহার যোগ করা হত।

২০১৫ সালের জুনে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) সঙ্গে চুক্তির আওতায় এফএসএসপি প্রকল্পের অধীনে এলটিএফএফ তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশের আর্থিক খাতের পরিকাঠামো উন্নয়ন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ সক্ষমতা বাড়ানো, উৎপাদন খাতের উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন পেতে এ তহবিলের অর্থ ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়।

ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বৈদেশিক মুদ্রায় তহবিল যোগান দিতে ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক তহবিলটি পরিচালনা করে আসছে।

এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালের নভেম্বরে তহবিলের সুদহারে পরিবর্তন আনা হয়। তখন লাইবরের সঙ্গে বিভিন্ন মেয়াদে (৫, ৭ ও ১০ বছর) নেওয়া ঋণের জন্য সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ শতাংশ যুক্ত করে সুদহার নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে ঋণ দিত বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর সঙ্গে আরও সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ যোগ করে উদ্যোক্তাদের ঋণ দিত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার গুনতে হত ৮ শতাংশ পর্যন্ত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের অক্টোবরে দেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণের গড় সুদহার ছিল ১২ শতাংশের নিচে।

এদিকে বর্তমানে এক বছর মেয়াদের লাইবর রেট বেড়ে সাড়ে ৫ শতাংশের ঘরে উঠেছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এতে করে আগের সুদহার অনুযায়ী তহবিল পরিচালিত হলে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার দাঁড়াবে সর্বোচ্চ সাড়ে ১১ শতাংশ।

অথচ বাণিজ্যিক ব্যাংকে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ঋণের সুদহারে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশের সীমা রয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে এ তহবিল থেকে দীর্ঘমেয়াদে উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে সুদহার কমানোর এ পদক্ষেপ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তা।

সোমবারের সাকুর্লার অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মান অনুযায়ী মেয়াদভেদে বিভিন্ন সুদহার নির্ধারণ করা হবে। এজন্য বিবেচনায় নেওয়া হবে ‘ক্যামেলস রেটিং’।

ব্যাংকগুলোর ক্যামেলস রেটিং ১ হলে ৩ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ শতাংশ; ক্যামেলস রেটিং ২ হলে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ; ক্যামেলস রেটিং ৩ হলে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারবে।