যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশ সুবিধা বহাল রাখার বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।
Published : 28 Mar 2013, 05:53 PM
বৃহস্পতিবার সকালে (বাংলাদেশ সময় রাত) ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভের দপ্তরে এই শুনানিতে এই সুবিধা বহাল রাখা নিয়ে আপত্তিগুলো তুলে ধরেন দেশটির শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিনিধিরাও।
আধা ঘণ্টার এই শুনানিতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ।
প্রতিনিধি দলের সদস্য জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যে সব বিষয়ে তুলে আপত্তি জানানো হয়েছিল, সে সব বিষয়ে সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
“বাংলাদেশের গৃহিত পদক্ষেপে তারা অনেকটা আশ্বস্ত হয়েছেন বলেই আমার মনে হয়েছে। আমরা আশাবাদী যে জিএসপি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত পেয়ে যাব,” বলেন এই শ্রমিক নেতা।
শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের উপপ্রধান এম এ মুহিত ও কমার্স কাউন্সেলর শফিকুল ইসলাম।
শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনিও আশাবাদী জিএসপি অব্যাহত রাখার ব্যাপারে।
আগামীতে জুন মাসে এই বিষয়ে ইউএসটিআর’র সিদ্ধান্ত জানা যাবে বলে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানিয়েছেন।
শুনানিতে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক ফেডারেশন ‘এএফএল-সিআইও’র প্রতিনিধিত্ব করেন ফেডারেশনের বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সিলেস্ট ড্র্যাক।
তাদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়- বাংলাদেশে পোশাক কারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে কি না, শ্রমিক ইউনিয়নের অবাধ অধিকার রয়েছে কি না, শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচার শুরু হয়েছে কি না, শ্রমিকরা ন্যায্য পারিশ্রমিক পাচ্ছে কি না।
শ্রমিক নেতা সিরাজ বলেন, তৈরী পোশাক খাতে ১৪১টি শ্রমিক ইউনিয়নের সক্রিয়তা তথ্যটি শুনানিতে তুলে ধরা হয়। আমিনুল হত্যকাণ্ডে সন্দেহভাজনদের আইনের আওতায় আনতে সরকারের পদক্ষেপ জানানো হয়।
“গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ড রোধে যতটা সম্ভব পদক্ষেপ অবলম্বনের তথ্যও উপস্থাপন করা হয়েছে শুনানিতে। শ্রমিকের ভাগ্য উন্নয়নে সরকারের আন্তরিকতার কথাও ব্যক্ত করা হয়েছে,” বলেন তিনি।
দুই পর্বে এই শুনানি হয়। প্রথম পর্বে দরখাস্তকারী হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ড্র্যাক এবং দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন- বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান কে এম মমিনুর রহমান, বিজিএমইএ সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ চিংড়ি ও মৎস্য ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাঈদ মাহমুদুল হক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামালউদ্দিন আহমেদ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ফাইজুর রহমান।
এএফএল-সিআইও গত বছর ইউএসটিআর-এ আবেদন করার পর বিষয়টি আমলে নিয়ে বাংলাদেশকে নোটিস দেয়া হয়।
একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে। তবে রপ্তানির প্রধান পণ্য তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি বা শুল্কমুক্ত প্রবেশ সুবিধা পায় না।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাবে, ২০১১-১২ অর্থবছরের বাংলাদেশ মোট রপ্তানি করেছে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে মোট রপ্তানির ২১ শতাংশ (৫০০ কোটি ডলার)।
২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপির সুবিধায় বাংলাদেশ ২ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। এ সুবিধায় রপ্তানি হয়েছিল তামাকজাত পণ্য, খেলাধুলা সামগ্রী, কিচেন সামগ্রী ও প্লাস্টিক পণ্য।