ব্যবসায়ীদের প্রতি কৃষি পণ্যভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে এক্ষেত্রে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 31 Jan 2016, 12:21 AM
শনিবার চট্টগ্রামে দেশের প্রথম ওর্য়াল্ড ট্রেড সেন্টারের উদ্বোধনে এসে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বিশ্বায়নের এ যুগে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আগের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং।”
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার সৃষ্টির জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
কৃষি পণ্যভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এর বাজার কখনো কমবে না। এই পণ্য নিজের দেশেও লাগবে, বাইরেও পাঠানো যাবে। আপনারা উদ্যোগ নিন, সরকার আপনাদের সব ধরনের সহায়তা দেবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ ব্যবসাবান্ধব সরকার। আমরা ব্যবসা করব না, আপনারাই করবেন। সরকার বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ করে দিয়েছে, আগামীতেও এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।”
বাংলাদেশ এখন যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
পদ্মাসেতু নিয়ে হেয় করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এটি নির্মাণ ছিল আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। এই সেতুর নির্মাণ কাজ নিজেদের অর্থে শুরু করেছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর অর্থনৈতিক মন্দা ছিল, অনেকেই বলেছিলেন রপ্তানি কমে যাবে। যখন বিএনপি-জামাত নাশকতা শুরু করেছিল, তখন অনেকেই চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু ওই অবস্থা আমরা মোকাবেলা করেছি।
“শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশব্যাপী গত সাত বছরে আমরা যে উন্নয়ন করেছি তা ইতোপূর্বে কোনো সরকার করতে পারেনি।”
দেশের অর্থনীতি আগের অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে যথেষ্ট মজবুত-মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা বাজেট পাঁচগুণ বৃদ্ধি করেছি। উন্নয়ন বাজেটের ৯০ ভাগ আমরা নিজেরাই পারছি।”
চট্টগ্রামবাসীর জন্য অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “এসব প্রকল্পের কারণে যোগাযোগ নতুন মাত্রা পাবে। চট্টগ্রামবাসীর জন্য যতটুকু করার করে যাচ্ছি।
“১৯৯৬ সালে এসে বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক করেছি। চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নতি হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চারলেইন হয়েছে। ভবিষ্যতে ছয়লেইন-আটলেইন করা যাবে।’’
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ফলে চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে- আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “বাণিজ্যের প্রসার বাড়বে, বিনিয়োগও বাড়বে।
“এটি প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৬ সাল থেকে চেষ্টা করা হচ্ছিল। জমিও দিয়ে গিয়েছিলাম।”
চট্টগ্রামকে নিজের ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“চট্টগ্রামের সাথে আমার আলাদা সম্পর্ক রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই চট্টগ্রামে আসছি।”
চট্টগ্রামে গ্যাস সংকটের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সমস্যা আছে জানি। ১৯৯৬ এ এসে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছিলাম।
“২০০১ সালে বিএনপি-জামাত এসে সব পিছিয়ে দিয়ে গেছে। ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্যাস আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের গ্যাস সংকট লাঘবের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
প্রধানমন্ত্রী ট্রেড সেন্টারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম চেম্বারের শতবর্ষের অনুষ্ঠানেরও উদ্বোধন করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “অনেকদিন পর চট্টগ্রামের উন্নয়ন দেখে মুগ্ধ হয়েছি। চট্টগ্রামের উন্নয়ন যাতে আরও বেশি হয় সেজন্য সরকারের তরফ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হবে।”
ব্যবসায়ীরা অর্থনীতির ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন মন্তব্য করে তাদের উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দেন অর্থমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, “বিএনপি-জামাত নাশকতা হরতাল অবরোধ করে ব্যবসা বাণিজ্যের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।”
চট্টগ্রামকে দেশের ‘দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজধানী’ ও বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।