বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে লুৎফর রহমান বাদলকে অপসারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
Published : 29 Oct 2015, 04:26 PM
ব্যাংকটিতে সালমান এফ রহমান নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদে সদস্যের পাশাপাশি নির্বাহী কমিটি এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন বাদল।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, গভর্নর আতিউর রহমান ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৯৯১ এর ৪৮ (১) ধারার আওতায় গঠিত স্থায়ী কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে লুৎফর রহমানকে অপসারণের আদেশ দিয়েছেন।
সিদ্ধান্ত জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও কোম্পানি সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালুর মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত এনটিভি ও আরটিভির অন্যতম অংশীদার বাদলের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনে নাশকতায় মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বাদলকে অপসারণের ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের সভায় টানা অনুপস্থিতির পাশাপাশি নাশকতার মামলায় পুলিশের তদন্তে নাম আসার কথাও জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চিঠিতে বলা হয়েছে, “গাজীপুরের জয়দেবপুর থানায় দায়ের করা এক মামলায় দেশে নাশকতা ছড়ানো এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে অর্থ সরবরাহের অভিযোগ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (৩)/২৫ (ঘ) ধারায় অপরাধ পুলিশের তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এবং বিদেশে পলাতক থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।”
২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ১৮টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন বাদল। তার অনুপস্থিতির কারণে গত বছরের ১৪ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির কোনো সভা হয়নি।
সরকারের ৩২ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকা ব্যাংকটির ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অন্যান্য পরিচালকদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
“এ অবস্থায় জনস্বার্থ এবং আমানতকারীদের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপ এবং ব্যাংকের যথাযথ ব্যবস্থাপনা ব্যাহত করার অভিযোগসমূহ সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৯৯১ এর ৪৬ ধারার ক্ষমতাবলে তাকে (বাদল) ২৯ অক্টোবর ২০১৫ তারিখ থেকে আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে,” বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আগামী তিন বছর বাদল ওই ব্যাংক কোম্পানি বা অন্য কোনো ব্যাংক কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকতে পারবে না বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।
বাদল ২০০৬ সালের ২৯ এপ্রিল প্রথম আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হন। ২০১২ সালের ১১ জুলাই তিনি পুনঃনিয়োগ পান। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন।
২০১৫ সালের ৩০ জুনের তথ্য অনুযায়ী, আইএফআইসি ব্যাংকে বাদলের ২ কোটি ৫৭ লাখ ৮৩ হাজার ৪১৬টি শেয়ার রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার পুঁজিবাজারে আইএফআইসি ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ার ২১ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। এ হিসাবে ব্যাংকটিতে বাদলের প্রায় ৫৫ কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে।
ঢাকা সিটি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রির পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৩ সালে হিসাব বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী বাদল বিএনপি নেতা ফালুর ছত্রছায়ায় পুঁজিবাজারে ঢোকার মাধ্যমে অর্থশালী হয়ে ওঠেন বলে মনে করা হয়।
বাদল পুঁজিবাজারের ব্রোকারেজ হাউস লতিফ সিকিউরিটিজ এবং পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ‘নিউ ইংল্যান্ড ইকুইটি’র মালিক।
বিভিন্ন সময় পুঁজিবাজারে কারসাজিতে বাদলের নাম এসেছে। কয়েক বছর আগে পুঁজিবাজারে ধসের পর গঠিত খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি যাদের বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্তের সুপারিশ করেছিল, তার মধ্যে বাদলের নামও ছিল।
বাদল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবসহ বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ‘লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ’র মালিক হিসেবে গত বছর বিসিবি সভাপতিকে নিয়ে বিতর্কিত উক্তি করে আলোচনায় এসেছিলেন বাদল। তখন তাকে ক্রিকেট থেকে আজীবন নিষিদ্ধ করে বিসিবি।