ঋণে অনিয়ম, পর্ষদের ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
Published : 21 Dec 2023, 05:41 PM
নিয়ম ও বিধি ভাঙাসহ বিভিন্ন কারণ তুলে ধরে নানা অনিয়মে ধুঁকতে থাকা বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পরামর্শে বৃহস্পতিবার পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার কারণ হিসেবে ঋণের নিয়ম না মানা, বিধি-বিধান ভেঙে ঋণ অনুমোদন, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় পর্ষদের অনাকঙ্খিত হস্তক্ষেপ করা এবং পর্ষদের ক্ষমতার অপব্যবহারের কথা বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘পরিচালক পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে দেওয়া হয়েছে।’’
সিকদার গ্রুপের মালিকানায় থাকা ব্যাংকটির নতুন পর্ষদ দ্রুত দায়িত্ব নেবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়েছে ড. সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারকে, যিনি এখন মেঘনা ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক।
আগের পর্ষদে থাকা সিকদার পরিবারের তিনজনসহ ছয়জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং তিনজনকে রাখা হয়েছে, যাদের মধ্যে সিকদার পরিবারের এক সদস্য রয়েছেন।
বর্তমান পরিচালকদের মধ্যে পারভিন হক সিকদারকে রাখা হয়েছে নতুন পর্ষদে। আরও রয়েছেন খলিলুর রহমান এবং সিকদার ইন্স্যুরেন্সের পক্ষ থেকে মনোনীত পরিচালক শফিকুর রহমান।
নতুন নিয়োগ পাওয়া পরিচালকদের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম ও সাউথ-ইস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেনকে স্বতন্ত্র পরিচালক করা হয়েছে। নতুন আরেক পরিচালক হলেন ব্যাংকটির উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন।
বাদ দেওয়া হয়েছে পর্ষদে থাকা সিকদার পরিবারের মনোয়ারা সিকদার (বাতিল পর্ষদের চেয়ারম্যান), রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদার এবং জাকারিয়া তাহের, স্বতন্ত্র পরিচালক নাইমুজ্জামান ভুইয়া মুক্তা ও মুর্শিদ কুলি খান।
ব্যাংকটির দীর্ঘদিনের চেয়রাম্যান জয়নুল হক সিকদার মারা যাওয়ার পর থেকে তার স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
পরিচালকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে ন্যাশনাল ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) গত সোমবার স্থগিত করে আদালত। এজিএম স্থগিত হওয়ায় বুধবার রাতে জরুরি বৈঠকে বসে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ব্যাংকটির পরিচালক পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার। পরে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে ফারহাত আনোয়ারের নাম সুপারিশ করে পর্ষদ ভেঙে বোর্ড পুর্নগঠনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দেয় কমিশন।
বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ন্যাশনাল ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে ফারহাত আনোয়ারকে চেয়ারম্যান করে বোর্ড গঠনের সুপারিশ করা হয়।”
বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত সেই চিঠিতে সাড়া দিয়েছে বলে জানান তিনি।
ডিসেম্বর ২০২২ সমাপ্ত বছরের জন্য বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির এজিএম করার কথা ছিল। তবে পরিচালকদের একটি পক্ষ আদালতে গেলে গত সোমবার তা স্থগিত করে উচ্চ আদালত। পরদিন তা বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এজিএম কবে হবে তা এখনও ঠিক করা হয়নি।
ঋণ অনিয়মে ধুঁকতে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংক গত ২০২২ সালে এক বছরেই ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান দিয়েছে।
এর আগে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো ব্যাংকের এক বছরে এত বেশি লোকসান দেওয়ার তথ্য নেই। ওই বছরে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ১০ টাকা ১৩ পয়সা।