১০ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণে এখন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।
Published : 23 Jan 2023, 09:19 PM
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া ১০ কোটি টাকা বা এর বেশি অঙ্কের ঋণ দিতে পারবে না বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক।
ঋণ অনিয়মের কারণে আলোচনায় থাকা ব্যাংকটির ঋণ বিতরণে সোমবার নতুন করে লাগাম টানতে দেওয়া এ নির্দেশনার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
এর আগে ঋণ কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশ হওয়ায় ২০২২ সালের মে মাসে ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ বিতরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আট মাস পর গত ২৯ ডিসেম্বর সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার হয়েছিল।
সম্প্রতি ব্যাংকটির সবশেষ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহমুদ হোসেনের পদত্যাগের ঘটনার পর এমন সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবার ঋণ বিতরণ বন্ধ না করে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হল।
ঋণ সীমার এ নির্দশনা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিঠিও পাঠিয়েছে বেসরকারি ব্যাংকটিকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, চলতি মূলধন, ভোক্তা, কৃষি, সিএমএসএমই খাতে ঋণ দেওয়া যাবে। এর বাইরে অর্থাৎ প্রকল্প ঋণ, আমদানি অর্থায়ন বা রপ্তানি বিলের বিপরীতে কোনো ঋণ বিতরণ করতে পারবে না ব্যাংকটি।
“এছাড়া আমদানিতে উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলতে শতভাগ নগদ অর্থ পরিশোধের শর্তও বাধ্যতামূলক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মঞ্জুর হওয়া ঋণ বা মঞ্জুরকৃত চলমান ঋণের অর্থ ছাড়েও এই শর্ত প্রযোজ্য হবে”, যোগ করেন তিনি।
তিনি জানান, বিতরণ বা আগে মঞ্জুর করা ঋণের অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে তা ১০ কোটি টাকা অতিক্রম করলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।
ঋণ অনিয়মসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় থাকা ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহমুদ হোসেন গত বুধবার ব্যাংকের পর্ষদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পর্ষদ তার পদত্যাগপত্র অনুমোদন বা গ্রহণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি এখনও।
এ বিষয়ে পর্ষদের সিদ্ধান্ত জেনে বাংলাদেশ ব্যাংক পরের পদক্ষেপ নেবে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন মেজবাউল হক।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকটির পর্ষদে রয়েছে সিকদার গ্রুপের কর্তৃত্ব। ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে এখন মনোয়ারা সিকদার। নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য পারভিন হক সিকদার।
দীর্ঘদিন থেকে এ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের মেয়াদ পূরণ করার আগেই পদত্যাগ করতে দেখা যাচ্ছে। ২০২১ সালেও তিন মাসের বেশি সময় ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদটি শূন্য ছিল।
ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জে (ডিএসই) জমা দেওয়া ব্যাংকটির অনীরিক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির ঋণস্থিতি ৪১ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। ২০২২ সালের প্রথম ৯ মাসে ব্যাংকটি লোকসান গুনেছে ৩৮৬ কোটি টাকা। শেয়ার প্রতি লোকসান (ইপিএস) ছিল ১ টাকা ২০ পয়সা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরের শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। মোট ঋণের মধ্যে খেলাপির হার ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
সোমবার ডিএসইতে ব্যাংকটির শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৮ টাকা ৩০ পয়সায়।