অনেকে ভিড় করছেন কারওয়ান বাজারে তিতাস গ্যাসের অফিসে।
Published : 25 Jul 2024, 10:09 PM
তিতাস গ্যাসের প্রি-পেইড মিটারে গত এপ্রিলে দুই হাজার টাকা রিচার্জ করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন শিক্ষক, যিনি অবসরের পর মিরপুরে বসবাস করছেন।
রিচার্জের সেই টাকা কোনো কারণে মিটারের সার্ভারে যুক্ত হয়নি। মাঝে মে ও জুন শেষে জুলাই মাসও শেষ হতে চলেছে। এরইমধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর ইন্টারনেট ফিরলেও সব জায়গায় তা কাজ করছে না। এমন প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার সকালে ওই শিক্ষকের বাসায় ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স শেষে গ্যাসের চুলা বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিন বিকালে ঢাকার কারওয়ান বাজারে তিতাস গ্যাসের প্রধান কার্যালয়ে ওই শিক্ষকের কর্মচারী জাহাঙ্গীর আলম এসেছিলেন মিটার রিচার্জ করতে। ইন্টারনেট সংযোগ ব্যাহত হওয়ার কারণে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে থাকা মোবাইল ইন্টারনেটভিত্তিক রিচার্জ পয়েন্টগুলো কাজ করছে না। এ কারণে তিনি এসেছিলেন তিতাস গ্যাসের অফিসে।
ইন্টারনেট বন্ধ থাকাকালীন সময়ে তিতাসের প্রধান কার্যালয় থেকেই চালানো হচ্ছে মিটার রিচার্জের কাজ।
এ দায়িত্বে থাকা তিতাসের কর্মকর্তা আরিফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ গ্রাহকের গত এপ্রিল মাসে রিচার্জ করা টাকা মিটারে যুক্ত করা হয়নি। ফলে নতুন করে আবার টাকা রিচার্জ করা যাচ্ছে না।
তিতাস ভবনে রিচার্জ করতে আসা মিরপুরের আরেক গ্রাহক ইকবাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার মতো ঢাকার অনেক প্রিপেইড মিটার গ্রাহকরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। মিটারে থাকা ‘বি’ ও ‘এ’ নামের দুটি বাটন নির্দিষ্ট সময় চেপে ধরে রেখে একটা নির্দিষ্ট সময়ে কার্ড মিটারের সংস্পর্শে এনে রিচার্জ করতে হয়। এ কাজ করতে গিয়ে একাধিকবার বিপত্তি ঘটলে মিটার লক হয়ে যায়।
তিনি বলেন, সাধারণত গ্রাহকরা ইউটিউব ভিডিওতে টিউটরিয়াল দেখে কাজটি করেন। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বিষয়টি আরেক বিপত্তির কারণ হয়ে পড়েছে।
এবার ইন্টারনেট বন্ধ থাকাকালীন সময়ে রিচার্জ নিয়ে ঝামেলায় পড়েছিলেন কল্যাণপুরের বাসিন্দা জান্নাত চামেলী। পরে একটি দোকানে কার্ড রিচার্জ করতে পারেন তিনি। তবে মিটারে এসে সেটা লোড করতে গিয়ে তিনি প্রক্রিয়াটি গুলিয়ে ফেলায় তার গ্যাস চালু হয়নি।
চামেলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগে তো ইউটিউব দেখে ‘এ’ বাটন ‘বি’ বাটন চেপে ধরে রিচার্জ করতে পারতাম। এখন ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তো একেবারেই চোখ থাকিতে অন্ধের মত অবস্থা। আমাদের অজ্ঞতা বেরিয়ে আসলো। পরে আবার দোকানদারের কাছে গিয়ে তাদের নির্দেশনা নিয়ে এসে রিচার্জ করতে পারলাম। কিন্তু গ্যাস চালু হলেও মিটারের ডিজিটাল স্ক্রিনে গ্যাসের পরিমাণ দেখা যাচ্ছে না। আপাতত গ্যাস আসছে এটাই বড় সান্তনা।”
মিটার রিচার্জ ও ইমার্জেন্সি লোন যেভাবে
দোকানে থাকা পস মেশিন থেকে কার্ডে টাকা রিচার্জ করে আনার পর প্রিপেইড মিটারের কাছে আসতে হবে।
>> মিটারে ‘এ’ বাটনে পরপর দুইবার এক সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে চেপে রেখে ছেড়ে দিতে হবে। এর পর দেখা যাবে মিটারের স্ক্রিনে ইংরেজি বর্ণে `IN’ লেখাটি মিট মিট করে জ্বলছে।
>> এবার মিটারের গায়ে আঁকা চার কোণা চিহ্ন যা দেখতে অনেকটা রিচার্জ কার্ডের মতো সেখানে কার্ডটি ধরতে হবে। `IN’ লেখাটি `END’ লেখায় পরিণত হলে কার্ড সরানো যাবে। এভাবে কার্ডটি রিচার্জ হয়ে যাওয়ার কথা।
এ প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা হলে ০১৭০৩৭২৯৫০৫, ০১৭০৩৭২৯৩৮৯, ০১৭০৩৭২৯৪৫১, ০১৭৮৮৫৬৭২৯৬, ০১৭৮৮৫৬৮২৭৬, ০১৩০০২৮৭৫২০- নম্বরে যোগাযোগ করে পরামর্শ পাওয়া যাবে।
কী বলছে তিতাস?
তিতাসের প্রিপেইড মিটার প্রকল্পের পরিচালক মীর মোবারক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেসব এলাকায় নেট আসছে ওইসব এলাকায় ওয়াইফাই দিয়ে রিচার্জের কাজ করা যাচ্ছে। গত তিন দিনে কারওয়ান বাজার থেকে আমরা তিন হাজারেরও বেশি গ্রাহককে রিচার্জ সেবা দিয়েছি। আমাদের মোট গ্রাহক চার লাখ ২০ হাজার।“
হটলাইনে কী ধরনের অভিযোগ আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কাস্টমাররা অনেক সময় পেনিকড হয়েও ফোন করছেন। অনেকের আরও ১০/২০ দিন চলার মতো গ্যাস আছে। তারাও কার্ড নিয়ে তিতাসের কাছে চলে আসছেন রিচার্জ করার জন্য। আবার কাস্টমাররা উল্টাপাল্টা চেপে মিটার লক করলে ফেলতেছে। আমরা মোবাইলে কল করলেই সেটা সমাধান করে দিচ্ছি।”