বিক্রেতারা বলছেন, একদিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে মাছের দাম।
Published : 13 Apr 2025, 11:26 PM
প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের আগে বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে ওঠা ইলিশ নিয়ে চলে মাতামাতি। বছরের এ সময়টাতে কদর বেড়ে যাওয়ায় বিক্রেতারা দাম তুলে দেন আকাশে, অন্যদিকে ক্রেতারাও মরিয়া হয়ে খোঁজেন রুপালি ইলিশ।
সোমবার বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেবে মানুষ। তার আগেরদিন বাজার ঘুরে ইলিশ নিয়ে সেই পুরনো চিত্রই দেখা গেল।
রোববার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের দেখা গেছে, ক্রেতা-বিক্রেতার দর কষাকষিতে ইলিশের বাজার সরগরম।
বিক্রেতারা হাঁক দিচ্ছেন- ‘এই সস্তায় ইলিশ, গেল গা, গেল গা’। কেউ আবার মাছ দেখিয়ে ডাকছেন- ‘সস্তায় খাইলে এই দিকে’।
যদিও দামদর শুনে মোটেই সস্তা মনে হয়নি। বিক্রেতাদের ডাকে আগ্রহী হয়েই ক্রেতারা কেউ-কেউ সেদিকে ছুটলেও দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ অবশ্য বেশি দামেই কিনছেন।
দাম কেমন
হিমাগারে অনেকদিন রেখে বিক্রি করা আর তুলনামূলক তাজা- দু’ধরনের ইলিশ মাছের দামই বাড়তি। বিক্রেতারা বলছেন, একদিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে মাছের দাম।
কারওয়ান বাজারে প্রতিটি দেড় কেজি ওজনের নদীর ইলিশ বিক্রি হচ্ছে গড়ে সাড়ে তিন হাজার থেকে ৩৬০০ টাকায়। ১২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৪০০ টাকায়। আর ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকায়।
এছাড়া, ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ দুই হাজার টাকা; ৮০০ গ্রাম ওজনের মাছ ১ হাজার ৮০০ টাকা; ৭০০ গ্রামের ইলিশের দাম এক হাজার ৬০০ টাকা; ৬০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ৪০০ টাকা; ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ টাকা; আর, ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এরচেয়ে ছোট আকারের ইলিশের দামের কোনো যেভাবে পারছেন রাখছেন।
দাম বেশি, মানছেন বিক্রেতারাও
বৈশাখের আগে যে ইলিশের দাম বেড়েছে, সেটি মানছেন ব্যবসায়ীরাও।
কারওয়ান বাজারে মাছ ব্যবসায়ী মো. আজিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৈশাখ উপলক্ষে মাছের দাম একটু বাড়তি। ভোরে ঘাটে মাছ মেলে না। আমার এই মাছ মিলিয়ে এনেছি তাও কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আগের দিনের থেকে বেশি দিয়ে। কাল যে মাছের দাম ছিল ৮০০ টাকা আজ ৯০০ থেকে সাড়ে ৯০০ টাকা করে কিনতে হয়েছে।
“মনে করেন ৫০০ গ্রামের দাম ১৩০০ টাকা, সেটা ৫৫০ গ্রাম হলেই ১০০ টাকা দাম বেশি। অর্থাৎ, ৫০ গ্রামেই ১০০ টাকার পার্থক্য।”
সরকার ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ঘোষণা করেছে।
সেই প্রসঙ্গ ধরে এই বাজারের আরেক বিক্রেতা মো. নয়ন বলেন, “ইলিশ ধরা এখন নিষেধ। তাই বাজারে মাছও কম। তবু, বাজারে তো আসেই। হিমাগারে রেখে বিক্রি করা ইলিশের দাম বর্তমানে তাজা মাছের তুলনায় কিছুটা কম। কারণ এগুলো আগে কেনা।”
কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের বিক্রেতা মো. সালাম বলেন, “মাছের দামটা একটু বেশি। বৈশাখ আর ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞার কারণে সরবরাহও কম। গত সপ্তাহে এক কেজির মাছ বিক্রি করছি দুই হাজার টাকা করে। আজ বিক্রি করছি দুই হাজার ২০০ টাকা করে।”
এই মার্কেটের আরেক বিক্রেতা মো. মারুফ বলেন, “বৈশাখের আগে অনেকেই ইলিশ মাছ কেনে, এজন্য একটু দাম বাড়তি থাকে কয়েকদিন। ঘাট থেকেই বেশি দামে আনতে হয়। তাই একটু বাড়তিই বিক্রি করা লাগে।”
বৈশাখের আবেদনে নিরুপায় ক্রেতারা
কিচেন মার্কেটে মাছ কিনতে এসেছিলেন দুলামিন নামের একজন। তিনি কারওয়ান বাজারের কাছেই একটি বাড়িতে নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করেন। মালিকের জন্যই মূলত মাছ কিনতে আসা। বেশি দামেই নিলেন ইলিশ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি নিয়মিতই মালিকের বাজার করে দিই। আজ একটু বেশি দামেই নিলাম। বৈশাখ উপলক্ষে দাম বাড়তে থাকে প্রতিবারই। তাই বলে তো আর খাওয়া বন্ধ হয় না। যাদের সামর্থ্য আছে, কিনে খায়।”
বনানী থেকে গলদঘর্ম হয়ে ইলিশ মাছ কিনতে কিচেন মার্কেটে এসেছিলেন মো. রিয়াজ। বেশ কিছুক্ষণ দাম-দস্তুর আর যাচাই-বাছাই করে ১ হাজার ৮০০ টাকা করে দুটো ইলিশ কিনলেন তিনি।
তিনি বলছিলেন, “বৈশাখ দেখে দাম বেশি। তবুও দুটো মাছ কিনলাম প্রায় দুই কেজির কাছাকাছি। এই সময়ে আসলে ইলিশের দামটা একটু বাড়তিই থাকে।”
পান্তা-ইলিশে ফের নিরুৎসাহিত করলেন উপদেষ্টা
গেল সোমবার সচিবালয়ে ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৫’ ঘোষণা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। সেদিন পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খেতে নিরুৎসাহিতও করেন তিনি।
রোববার বিকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে দয়ালভরসা মৎস্য বাজারে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৫ উপলক্ষে মতবিনিময় সভায় সেই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে উপদেষ্টা।
আড়তের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “প্রতিজ্ঞা করেন-জাটকা ধরবেন না, দয়া করে মাছের দাম অহেতুক বাড়াবেন না।”
ফরিদা আখতার বলেন, “অনেকেই জাটকাকে ইলিশ মনে করে; আবার যারা হিমায়িত ইলিশ সরবারহ করছে তারা মানুষকে ভুল বার্তা দিচ্ছে। কারণ পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ আমাদের সংস্কৃতির অংশ নয়। এসময় কোনো ইলিশ সরবারহ করা হবে না সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”
ইলিশ মাছ যেন সবাই কিনে খেতে পারে সেজন্য কাজ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জুনের পর এই জাটকা যখন ইলিশে পরিণত হবে তখন তা বাজারে আসবে। বাংলাদেশের নব্বই শতাংশ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ হয়তবা ইলিশ মাছ কিনে খেতে পারে না। ইলিশ মাছ যেন আমরা কিনে খেতে পারি সে কাজটিই আমাদের করতে হবে। জুনের পর ইলিশ যেন ক্রয়সীমার মধ্যে থাকতে পারে সে লক্ষ্যে আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে।”