১ পাউন্ডে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের যুক্তরাজ্য শাখা কিনল এইচএসবিসি

সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের পতনে বড় ধাক্কা খেয়েছে প্রযুক্তি খাত। তিন দিন যেতে না যেতে নিউ ইয়র্কভিত্তিক সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ ঘোষণা করে এর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2023, 01:21 PM
Updated : 13 March 2023, 01:21 PM

অর্থ সংকটে বন্ধ হয়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের যুক্তরাজ্য শাখার স্বত্ব কিনে নিয়েছে এইচএসবিসি ব্যাংক; সেজন্য তাদের খরচ হয়েছে কেবল এক পাউন্ড।

বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের সিলিকিন ভ্যালি ব্যাংকের গ্রাহকরা এখন অন্যান্য ব্যাংকের মতই স্বাভাবিকভাবে লেনদেন ও আর্থিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন।

সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের ওই শাখা কিনে নেওয়ার খবর সোমবার নোটিস আকারে নিজেদের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করেছে এইচএসবিসি। সেখানে এক পাউন্ডের বিনিময়ে ব্যাংকটির স্বত্ব অধিগ্রহণের কথা জানায় এইচএসবিসি ইউকে লিমিটেড পিএলসি।

যুক্তরাজ্যের ট্রেজারি বিভাগ বলছে, এইচএসবিসির সঙ্গে চুক্তিতে করদাতাদের কোনো টাকা খরচ হবে না। ব্যাংকটির থাকা আমানত এখন ‘নিরাপদ’ বলে জানিয়েছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড।

বিশেষ করে, প্রযুক্তিখাতের কোম্পানিগুলোকে ঋণ দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ব্যাংক সিলিকন ভ্যালি। কিন্তু মূলধন সংকট ও আমানত ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার কারণে শুক্রবার ব্যাংকটি বন্ধ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক খাতের ইতিহাসে দ্বিতীয় বড় পতনের ঘটনা এটা। সেদিনই ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণে নেয় ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশন (এফডিআইসি)।

গত ডিসেম্বরে ব্যাংকটির সম্পদ ছিল প্রায় ২০৯ বিলিয়ন ডলারের এবং আমানত ছিল ১৭৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। এর চাকা ঘোরা বন্ধ হতে থাকে গত বুধবার।

সেদিন এক ঘোষণায় জানানো হয়, কিছু সম্পদ বিক্রি করে তাদের ১৮০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে। ব্যালেন্স শিট শক্তিশালী করতে ২২৫ কোটি ডলারের নতুন শেয়ার বিক্রি করবে তারা।

ওই ঘোষণার পর প্রধান কোম্পানিগুলোর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয় এবং ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নেওয়া শুরু হয়। এতে সিলিকন ভ্যালি ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের শেয়ারের দাম ৬০ শতাংশ পড়ে যায়। শুক্রবার পুঁজিবাজার খোলার আগেও ৬০ শতাংশ দরপতন হয় শেয়ারের। ফলে দুই দিনে দরপতন হয় ৮৪ শতাংশ।

এ পরিস্থিতিতে সব মিলিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শুক্রবার সকালে ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল প্রটেকশন অ্যান্ড ইনোভেশন।

সিলিকন ভ্যালির আগে ২০০৮ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার মধ্যে অর্থ সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন মিউচুয়াল ব্যাংকের কার্যক্রম স্থগিত করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা, যার সম্পদমূল্য ছিল ৩০৭ বিলিয়ন ডলার।

সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের পতনে বড় ধাক্কা খেয়েছে প্রযুক্তি খাত। এর প্রভাব শুধু আমানতে নয়, ঋণ কার্যক্রম ও অন্যান্য অর্থায়নেও প্রভাব পড়বে।

তিন দিন যেতে না যেতে রোববার নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক সিগনেচার ব্যাংক বন্ধ ঘোষণা করে এর নিয়ন্ত্রণ নেয় ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশন (এফডিআইসি)।

যুক্তরাজ্যের কিছু প্রতিষ্ঠান বিবিসিকে বলেছে, সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের যুক্তরাজ্য শাখার স্বত্ব কিনে নেওয়ার চুক্তির মাধ্যমে তাদের আমানত নিরাপদ না হলে তারা ধ্বংস হয়ে যেত।

এইচএসবিসি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী নোয়েল কুইন বলেন, যুক্তরাজ্যে সিলিকন ভ্যালির গ্রাহকদের আমানত নিরাপদ এবং তারা যথারীতি ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন।

তবে পথে বসা সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের যুক্তরাজ্যের শাখা সচল রাখার সিদ্ধান্তটি সহজ ছিল না।

বিবিসি জানিয়েছে, সোমবার রাতভর বৈঠক করেন যুক্তরাজ্যের চান্সেলর জেরেমি হান্ট, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর এবং এইসএসবিসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এরপর ব্যাংকের স্বত্ব কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বলছে, সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের পতনের কোনো বাস্তব প্রভাব যুক্তরাজ্যের কোনো ব্যাংকে পড়েনি। বিস্তৃত পরিসরের ব্যাংকিং কার্যক্রম এখনও ‘নিরাপদ’ রয়েছে, মূলধনেও কোনো সঙ্কট নেই।

তারপরও সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের যুক্তরাজ্য শাখাকে উদ্ধার করতে উদ্যোগী হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের বিবৃতিতে বলা হয়, “যদিও বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যাংকটির যুক্তরাজ্য শাখায় মাত্র ৩ হাজার গ্রাহক বা কোম্পানির সঙ্গে ছোট পরিসরে লেনদেন ছিল, তারপরও সেটি একটি সেক্টরের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, যে সেক্টরকে অর্থনৈতিক সফলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করে ব্রিট্শি সরকার।”

জেরেমি হান্ট বলেন, “এ ধরনের কোম্পানি বা ফার্মগুলোর অবস্থা শোচনীয়। কিছু ফার্মের সঙ্গে কেবল যুক্তরাজ্যের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ফলে আমরা এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম, যেখানে দেখা যায় আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও সবথেকে কৌশলগত কোম্পানি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, যেটা হতে পারে অত্যন্ত বিপ্জ্জনক।”

তার ভাষ্য, “যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য আমাদের প্রক্রিয়াগত কোনো ঝুঁকি ছিল না।”

যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তি সংস্থা ইউনিভার্সাল কোয়ান্টামের প্রায় ৪০ জন লোকবল রয়েছে। কোম্পানিটি তার সব অর্থ রাখে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের শাখায়।

এর প্রধান নির্বাহী সেবাস্তিয়ান উইডট এইচএসবিসির সঙ্গে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের চুক্তিকে দেখছেন ‘বড় বাঁচা’ হিসেবে।

তিনি বলেন, “অবিশ্বাস্য চাপ ছিল গত ৪৮ থেকে ৭৮২ ঘণ্টা। সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক বন্ধ হওয়ায় আমার কোম্পানি সম্ভাব্য ক্ষতির প্রভাব কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনা করছিল। এ ধরনের একটি চুক্তি না হলে তা পুরো সেক্টরে জন্য বেশ ক্ষতিকর হত।”

আরও পড়ুন-

Also Read: মূলধন সংকট, যুক্তরাষ্ট্রে এক ব্যাংকের পতন

Also Read: যুক্তরাষ্ট্রে ৩ দিনের মধ্যে বন্ধ আরেক ব্যাংক