ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে তিন পর্বের একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে।
Published : 05 Sep 2024, 04:04 PM
ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণের অর্ধেকের বেশি এস আলম গ্রুপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ।
তিনি বলেন, “এস আলম গ্রুপ ঋণের অর্ধেকের বেশি নিয়ে গেছে। তবে পুরো তথ্য পেতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে। গ্রুপটি সম্পদ অতিমূল্যায়ন করে ঋণ বের করে নিছে। ইতিমধ্যে তার সম্পদ নতুন করে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
“এছাড়া ঋণের বিপরীতে যেসব জামানত রয়েছে তা দিয়ে কাভার হবে না। তাই জামানতের বাইরে যেসব সম্পদ রয়েছে তা বের করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।"
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের নতুন বোর্ডের সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন।
এক সময় ঋণ ও আমানতে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের স্বীকৃতি পেলেও অনিয়ম ও কেলেঙ্কারিতে নাজুক দশায় পৌঁছেছে ইসলামী ব্যাংক। জুন শেষে ব্যাংকটির ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকার বেশি।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ব্যাংকটিকে এস আলম মুক্ত করার জন্য পরদিন আন্দোলনে নামেন ইসলামী ব্যাংকের কর্মীরা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে, যাতে ১০ জন গুলিবিদ্ধ হন।
এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব গ্রহণ করে আহসান এইচ মনসুর ইসলামী ব্যাংকসহ ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করেছেন।
মাসুদ বলেন, “নতুন বোর্ড দায়িত্ব নেওয়ার সময় ২৩০০ কোটি টাকা শর্টে ছিল, তা প্রতিদিন কমে আসছে। আজকে কমে তা দুই হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আশা করি এ বছরের মধ্যে তা ইতিবাচক ধারায় ফিরবে।”
ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, “অনেক গ্রাহকের এতোদিন টাকা তুলতে যে সমস্যা হয়েছে তা আজকের পর আর হবে না। কারণ গত এক সপ্তাহ যে পরিমাণ জমা হয়েছে তার চেয়ে বের হয়েছে কম। নিট ব্যালেন্স থাকছে।”
২০১৭ সালের ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রথমে পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনে পর্ষদে আসে এস আলম গ্রুপ। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বিএসইসির করা একটি বিধান এই সুযোগ করে দেয়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট জানিয়েছে, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান, একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ফোন করেন।
এরপর তাদেরকে বাসভবন থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিনই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
কয়েক ঘণ্টা পর একটি হোটেলে সভায় বসে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। পদত্যাগ করা পরিচালকদের স্থলাভিষিক্ত কারা হবেন, তা নির্ধারণ করা হয়। তারপর ধীরে ধীরে নামে বেনামে ৩০ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনে নেয় এস আলম। তারপরই অনিয়ম ও কেলেঙ্কারিতে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ব্যাংকটিতে।
এস আলমের অনিয়মে ইসলামী ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা সহযোগিতা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছেন, এ প্রশ্নের উত্তরে মাসুদ বলেন, “আমরা নিচের দিকে কর্মকর্তা এখনই সরাতে চাচ্ছি না। কারণ নিচে এখন হিট করলে সব ভেঙে পড়বে।
“ইতোমধ্যে উপরের কিছু সরানো হচ্ছে। ধীরে ধীরে সব সরানো হবে। আইন অনুযায়ী সবার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ ছাড় পাবে না। ভুল প্রক্রিয়ায় কাউকে সরানো হবে না।”
ইসলামী ব্যাংককে ঘুরে দাঁড়াতে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে নতুন চেয়ারম্যান বলেন, এ পরিকল্পনায় তিনটি পর্ব থাকছে।
“প্রথমত নতুন বোর্ডের শুরু থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খুঁজে বের করা ও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া। দ্বিতীয়ত ২০২৫-২৬ সাল দেওয়া হয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর বছর। তৃতীয়ত ২০২৭, ২৮ ও ২৯ সাল এগিয়ে যাওয়ার বছর।”