‘আরও কমে’ সুইজারল্যান্ড থেকে এলএনজি কিনছে সরকার

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি জাপানি প্রতিষ্ঠান থেকে এলএনজি কেনা হয়েছে সাড়ে ১৯ ডলার দরে। সুইজারল্যান্ড থেকে আসা এলএনজির দর পড়বে সাড়ে ১৭ ডলার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2023, 04:14 PM
Updated : 9 March 2023, 04:14 PM

এক মাস আগে জাপান থেকে যে দরে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি কিনেছিল সরকার, তার চেয়ে কম দামে পাচ্ছে ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ড থেকে।   

দেশটি থেকে থেকে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ পরিমাণের এক কার্গো এলএনজি ৬১৮ কোটি টাকায় আমদানির সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। সুইজারল্যান্ডের টোটাল ইঞ্জিনিয়ারিং গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড থেকে এই এলএনজি কিনবে পেট্রোবাংলা। 

বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এই প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। 

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জাপানি একটি কোম্পানি থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৯০ কোটি ৪২ লাখ ৯ হাজার ৩১২ টাকা। এই হিসেবে প্রতি ইউনিটের দর পড়েছিল সাড়ে ১৯ ডলার। সুইজারল্যান্ড থেকে আনতে পড়বে দুই ডলার কম, অর্থাৎ সাড়ে ১৭ ডলার। 

বৈঠক শেষে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশি টাকায় এক কার্গো এলএনজির দাম পড়বে ৬১৮ কোটি ২১ লাখ ১৯ হাজার ৪১৯ টাকা। 

এলএনজি আমদানির জন্য বেশকিছু দেশের সঙ্গে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে। কিন্তু খুব কম সময়ে এলএনজি আমদানির প্রয়োজন হওয়ায় এবার সুইজ্যারল্যন্ডে থেকে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত দিল মন্ত্রিপরিষদ। 

আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চমূল্যের কারণে প্রায় আট মাস খোলা বাজার থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ রেখেছিল সরকার। দাম কিছুটা কমে আসায় দেশের চাহিদার কথা মাথায় রেখে গত ১ ফেব্রুয়ারি এক কার্গো এলএনজি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। 

এর আগে সিঙ্গাপুরের ভিটল এনার্জির কাছ থেকে ২০২২ সালের মে মাসের শেষ দিকে সবশেষ এক কার্গো এলএনজি কিনেছিল সরকার, যেখানে প্রতি ইউনিটের দাম পড়েছিল ২৫ দশমিক ৭৫ ডলার। 

দেশে নতুন শিল্প কারখানা বাড়তে থাকায় গ্যাসের চাহিদা মেটাতে ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে আন্তর্জাতিক খোলা বাজার থেকে নয় কার্গো এলএনজি আমদানি করেছিল সরকার। 

পরে একদিকে ডলার সংকট, অন্যদিকে এলএনজির মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে খোলা বাজার থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

ফলে দেশে একই সঙ্গে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট দেখা দেয়। জুলাই থেকে ফিরে আসে লোডশেডিং, গ্যাসের অভাবে অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ রাখতে হয়। তবে ডিসেম্বরে শীত শুরু হওয়ায় গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা কমে আসে; পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। 

গত জানুয়ারিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য গ্যাসের দাম এক লাফে ১৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয়; যা ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। 

তবে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফেব্রুয়ারিতে নতুন দাম কার্যকর না করে খোলা বাজার থেকে আমদানি করা এলএনজি সঞ্চালন লাইনে মিশ্রণ করার পর দাম বাড়ানোর কথা বলেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। 

আরও ১০ ক্রয় প্রস্তাব 

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ২টি এবং ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ১০টি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। 

প্রস্তাবগুলোর মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৬টি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ২টি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ১টি এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ১টি প্রস্তাবনা অনুমোদন দেওয়া হয়। 

এসব ক্রয় প্রস্তাবনার সম্মিলিত ব্যয় ১ হাজার ৯২২ কোটি ২ লাখ ৬ হাজার ৩৬৯ টাকা।

অনুমোদন পাওয়া অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- 

>> নির্বাচন কমিশনের জন্য ‘ব্ল্যাংক স্মার্ট কার্ড সরাসরি ক্রয়’ পদ্ধতিতে কেনার অনুমোদন। 

>> ‘মোংলা হতে চাঁদপুর-মাওয়া-গোয়ালন্দ হয়ে পাকশী পর্যন্ত নৌরুটের নাব্যতা উন্নয়ন’ প্রকল্পের ৪টি লটের সংরক্ষণ ড্রেজিং কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন। 

সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো হচ্ছে- 

>> ‘ময়মনসিংহে কেওয়াটখালী সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে (১) এলইএ অ্যাসোসিয়েটস সাউথ এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড ভারত, (২) ইয়ংমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড কোরিয়া। (৩) দেশ উপদেশ লিমিটেড বাংলাদেশ এবং (৪) ক্রান্তি অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড বাংলাদেশকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে খরচ হবে ৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭ হাজার ৩৮৫ টাকা। 

>> টিসিবির স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি গ্লোবাল করপোরেশনের কাছ থেকে ক্রয়। ১৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকায় এই চিনি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। 

>> টিসিবির আন্তর্জাতিকভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি ৬৮ কোটি ৭৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় কেনার অনুমোদন। আরব আমিরাতের গোল্ডেন উইংস জেনারেল ট্রেডিং এফজেডএই (স্থানীয় এজেন্ট সনজিব লিমিটেড) এর কাছ থেকে এই চিনি কেনা হবে। 

>> বিআইডব্লিউটিএর পানগাঁও টার্মিনাল অবকাঠামো নির্মাণ কাজ তমা কনস্ট্রাকশনের কাছ থেকে ক্রয় অনুমোদন। যার খরচ ১৬৩ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬০৪ টাকা। 

>> বিআইডব্লিউটিএর আশুগঞ্জ কার্গো টার্মিনাল নির্মাণ যৌথভাবে এনডিই বাংলাদেশ এবং দেয়াং কোরিয়া এবং এসএসআরআই বাংলাদেশ থেকে ২১০ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনার অনুমোদন। 

>> বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক চাঁদপুর প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের উন্নয়ন-এর পূর্ত কাজ তমা কনস্ট্রাকশনের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ অনুমোদন। এতে ব্যয় হবে ৯৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫৬৫ টাকা। 

>> বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক বরিশাল প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের উন্নয়ন-এর পূর্ত কাজ যৌথভাবে এনডিই বাংলাদেশ, দেয়াং কোরিয়া এবং এসএসআরআই বাংলাদেশের কাছ থেকে ৯৩ কোটি ৩০ লাখ টাকায় কেনার অনুমোদন। 

>> বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক নারায়ণগঞ্জে একটি ট্রেনিং সেন্টার এর পূর্ত কাজ ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার লিমিটেডের কাছ থেকে ৮২ কোটি ৫০ লাখ টাকায় কেনার অনুমোদন। 

>> বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক ঢাকার শ্মশানঘাট নতুন প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের উন্নয়ন-এর পূর্ত কাজ কোরিয়ার দেয়াং ইন্ডাস্ট্রিয়াল কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের কাছ থেকে কেনার অনুমোদন। যার খরচ ১৮৭ কোটি ৩৪ লাখ ৯৪৬ টাকা। 

>> বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃক কর্ণফুলী ফারটিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ এর কাছ থেকে ১৩তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ১০৫ কোটি ৬২ লাখ ৪৭ হাজার ৬৮৭ টাকায় কেনার অনুমোদন। 

>> শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিসিআইসি কর্তৃক সৌদি আরব থেকে ১৯তম লটে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানি। এতে খরচ হবে ১০৭ কোটি ২৮ লাখ ৭৬ হাজার ১০১ টাকা।