অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
Published : 28 Jul 2024, 09:32 PM
ইন্টারনেটভিত্তিক সব কিছু ঠিকঠাক হতে শুরু করলেও ফেইসবুক কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য ‘এফ কমার্স’ চালু হওয়ার কোনো লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না।
রোববার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ড বা বিডার সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ছিলেন আরও কয়েকজন প্রতিমন্ত্রী।
সেখানে মোবাইল ইন্টারনেট সচল হওয়া ও সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অঘটনের ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনা হলেও ফেইসবুক চালু করার বিষয়ে কোনো সুখবর আসেনি।
ফেইসবুক-কেন্দ্রিক বিভিন্ন পণ্য ও সেবা বিপণনকে কেন্দ্র করে দেশে কয়েক লাখ উদ্যোক্তা গড়ে উঠেছে, যাদের বড় অংশই নারী।
প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর সভাপতি শমী কায়সার বলেন, “ফেইসবুক কবে খুলে দেওয়া হবে, সে বিষযে সরকার থেকে আজ কোনো পরিষ্কার নির্দেশনা পাইনি। এই মুহূর্তে ফেইসবুক না খুললে উদ্যোক্তাদের জন্য কী করা যায়, সে বিষয়ে আমরা সবাই মিলে একটা পরিকল্পনা করতে বসব।
“ফেইসবুক উদ্যোক্তাদের কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা দেওয়া যায় কি না, সেটাও চিন্তা করছি।”
ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত এক বছরে ই-কমার্স খাতে ডিজিটাল মাধ্যমে ১৬ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আর ক্যাশ-অন ডেলিভারি হয়েছে আরও প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এ থেকে বাংলাদেশে ই-কমার্স খাত সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়।
বৈঠকের আলোচনা প্রসঙ্গে শমী কায়সার বলেন, “সব মিলে তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিয়ে আমরা বৈঠকে কথা বলেছি। তথ্যপ্রযুক্তির অন্যতম শাখা হচ্ছে ই-কমার্স। এখানে কেবল অভ্যন্তরীণ বাজারে দৈনিক প্রায় আট লাখ অর্ডার ডেলিভারি হচ্ছিল।
“বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী অভ্যন্তরীণ বাজারের ক্ষয়ক্ষতি বুঝতে চেয়েছিলেন। সেখানে আমরা ই-কমার্স মার্কেটের হিসাবটা দিতে চেয়েছি। এ খাতে দিনে ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকার মত লেনদেন হত।”
ফেইসবুক বন্ধকালীন বিকল্প কী উপায়ে ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে, সে বিষয়ে আইসিটি খাতের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন ই-ক্যাব সভাপতি।
“আমাদের এখন ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির বড় একটা ব্যবসা হয় ফেইসবুকের মাধ্যমে। এখানে প্রায় ১৫ লাখ উদ্যোক্তা কাজ করছেন। এখন ফেইসবুক বন্ধ থাকার কারণে এই ব্যবসাটা করতে পারছে না। আগামী মাসে তারা কীভাবে বেতন দেবেন, সেটাই একটা চিন্তার বিষয়। অনেকে ফেইসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। সেখানে টাকা কেটে রাখা হলেও বিজ্ঞাপন তো আর শো করছে না। এখানে একটা লস হয়েছে,” বলেন তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার জেরে দশ দিন বন্ধ রাখার পর রোববার বিকালে মোবাইল ইন্টারনেট খুলে দিয়েছে সরকার।
রোববার বিকাল ৩টা থেকে মোবাইল গ্রাহকরা তাদের ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ ফিরে পেতে শুরু করেন। তবে ফেইসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও টিকটক বন্ধ রাখা হয়েছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে দেশজুড়ে সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে গত ১৭ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে পরদিন রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যায়।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সেদিন মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে আগুন দেওয়া হলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়কের ওপর থাকা ইন্টারনেট সেবাদাতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তার। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েকটি ডেটা সেন্টারও।
সে কারণেই সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায় বলে প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য।
মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মোবাইলে আর্থিক লেনদেন, বিদ্যুৎ-গ্যাসের প্রিপেইড কার্ড রিচার্জ নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা। কোথাও কোথাও ব্যাংকের এটিএম বুথও বন্ধ হয়ে যায়।
ইন্টারনেট না থাকায় স্থবির হয়ে পড়ে ই-কমার্স, পোশাক খাতসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য, বন্ধ থাকে বন্দরের কার্যক্রম। ইন্টারনেটভিত্তিক সব ধরনের সংবাদ সেবাও অচল হয়ে পড়ে।
সারাদেশে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েনের পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি শান্ত হতে থাকে। ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ব্যবসায়ীরা। সেখানে তারা ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত ইন্টারনেটা সেবা চালুর ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান।
এরপর ২৩ জুলাই রাতে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা ফেরে। পরদিন রাতে সারা দেশে বাসাবাড়িতেও ব্রন্ডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা সচল হয়, যদিও স্বাভাবিক গতি না ফেরায় গ্রাহকরা সন্তুষ্ট নন।