“মানুষ অধৈর্য হয়ে গেছে, এটাই স্বাভাবিক। প্রধান উপদেষ্টাকে বললাম বাজারে দাম কমানো শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ না।"
Published : 13 Nov 2024, 04:39 PM
আমদানি পর্যায়ে নিত্যপণ্যের শুল্ক কমানো হলেও ‘বাজারে বিশৃঙ্খলার কারণে’ দাম কমছে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
বুধবার পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত ‘পিকেএসএফ দিবসের’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, "বাজারে এতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, মানুষ বলছে দাম কমছে না, অথচ এনবিআর অনেক সুবিধা দিয়েছে।”
দুই অংকে পৌঁছে যাওয়া মূল্যস্ফীতিতে লাগাম দিতে সরকার আমদানি পর্যায়ে চালের পাশাপাশি পেঁয়াজ, আলু আর ভোজ্যতেলের শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু তার কোনো প্রভাব খুচরা বাজারে নেই।
বরং গত এক মাসে আলুর দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা, চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ থেকে ১২ টাকা, পেঁয়াজের দাম ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, রসুনের দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে।
এসব পণ্যের দর বৃদ্ধি স্বল্প আয়ের মানুষদের জীবন আরও কঠিন করে তুলেছে, কারণ স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের খাদ্যের পেছনে ব্যয়ের বেশিরভাগ করেন এসব পণ্য কিনতেই।
পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত অগাস্টে খাদ্য খাতে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল, সেপ্টেম্বরে তা ছিল ১০ দশমিক ৪০; আর অক্টোবরে হয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি।
কয়েক দিন আগেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলানো সালেহ উদ্দিন আহমেদ পিকেএসএফের অনুষ্ঠানে বলেন, “ট্যাক্স কমিয়ে দিলাম, তারপরও নিত্যপণ্যের দাম কমে না। মানুষ অধৈর্য হয়ে গেছে, এটাই স্বাভাবিক। প্রধান উপদেষ্টাকে বললাম বাজারে দাম কমানো শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ না।"
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দাম না কমার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উপদেষ্টা বলেন, "এখানে অনেকগুলো ফ্যাক্ট আছে। মানুষের বাজারে কষ্ট হচ্ছে ৫০০ টাকা নিয়ে গেল দুমুঠো শাক, অন্যান্য… কিন্তু টাকা শেষ হল। আমি চেষ্টা করছি বাজারে দাম কমানোর জন্য।"
ভারতে ইলিশ রপ্তানিকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হলেও বিষয়টি ইতিবাচক হিসেই দেখতে চান সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন।
তিনি বলেন, "আমার ছোট ভাই ফোন দিয়ে বলে ভাই, ইলিশ মাছ দিয়ে দিলেন, ফেইসবুকে আপনাকে গালি দিয়ে ভরে দিচ্ছে। আমার কিন্তু ফেইসবুক নাই।
“একটা সিজনে ৫ লাখ ৩০ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়, ভারতে দিলাম মাত্র ৩ হাজার টন। অনেকে বলছে ভারতে ইলিশ দেওয়া ভালো সিদ্ধান্ত।"
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “আমরা চলে গেলেও মানুষ মনে টনে রাখবে। কারণ, আমরা ভালো কাজ করেছি। মানুষ বলবে, ‘স্যার আপনি ওখানে ছিলেন, আপনি অমুক কাজ করছেন’।
"অনেকে আমাদের ধন্যবাদ দেয় যে– ‘স্যার আপনি ট্যাক্সের অমুক কাজটি ভালো করেছেন।’ বন্ডের ট্যাক্স তুলে দেওয়াতে মানুষ আমাদের অনেক ভালো বলে। সঞ্চয়পত্রেও আমরা ভালো করেছি। এখন সঞ্চয়পত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিনিউ হচ্ছে। ভালো জিনিস যত তাড়াতাড়ি করা যায় ততই মঙ্গল।"
সেই সঙ্গে আক্ষেপও করেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, "অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু আবার প্রতিষ্ঠান নেই– এমন অবস্থা। ভালো প্রতিষ্ঠানের বড্ড অভাব। বিল্ডিং আছে, কিন্তু মানুষ নেই, সেখানে স্বচ্ছতার অভাব, জবাবদিহিতার অভাব। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলি, যে তুমি এটা দেখ।"
সারা বিশ্বে এ সরকারের বিষয়ে সবাই ‘ইতিবাচক মন্তব্য করে’ দাবি করে সালেহ উদ্দিন বলেন, “আমাদের দিকে কেউ মুখ বাঁকা করছে না। বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ সভায় গেলাম, ৭ থেকে ৮ দিন ছিলাম, এতগুলো সভা করতে গিয়ে আমরা ক্লান্ত। সবাই আমাদের বিষয়ে ইতিবাচক। সভা করতে করতে আমরা হয়রান হয়ে গেছি।
"সবাই আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চায়। তবে সব থেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিছু শর্ত থাকে, তবে শর্ত কঠিন নয়। প্রত্যেকে হাত বাড়িয়েছে।"
দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি বলেন, “সার্বিকভাবে বাংলাদেশের সম্ভাবনা আছে। দেশের কৃষক মজুর ও পোশাক শ্রমিকের অবদানের কারণে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা মানুষের সঙ্গে মিলে মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাব। আমরা দায়িত্ব পালন করছি। আমরা শর্ট টার্ম সংস্কার করব, লং টার্ম সংস্কার করবে না। লং টার্ম সংস্কার করবে নির্বাচিত সরকার। আমরা চাইলেই সব কিছু পারি না, আমাদেরও কিছু বাধা আছে।
পিকেএসএফ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য 'অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে অর্থায়ন'। পিকেএসএফ চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদিউর রহমান; স্বাগত বক্তব্য দেন এর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের।
কর্মসৃজনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮০-এর দশকে একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গঠনের উদ্যোগ নেয়। কয়েক বছর ধরে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে মতবিনিময় এবং বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে পিকেএসএফ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়।
১৯৮৯ সালের ১৩ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি সেই প্রস্তাবে অনুমোদন দিলে পিকেএসএফ গঠিত হয়। সে অনুযায়ী ১৩ নভেম্বরকে 'পিকেএসএফ দিবস' হিসেবে উদযাপন করা হয়।