রাস্তায় ৪০ লাখ ‘বাংলা টেসলা’, উচ্ছ্বসিত বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

“নিজ হাতে তৈরি করছেন, আমাদের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে কাজ করছেন। আমরা তাদের কোনো বাধা দিচ্ছি না," বলেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2024, 04:32 PM
Updated : 8 Feb 2024, 04:32 PM

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে হাজারো অভিযোগ থাকলেও নিজস্বভাবে তৈরি এসব বাহনকে উৎসাহ দেওয়ার পক্ষে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

তিন চাকার এসব বৈদ্যুতিক বাহনকে ‘বাংলা টেসলা’ হিসেবে বর্ণনা করে জাতীয় সংসদে তিনি বলেছেন, “আমরা চাচ্ছি- লেড ব্যাটারি থেকে তারা যেন লিথিয়াম ব্যাটারিতে চলে আসে। এজন্যে একটা পাইলট প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।”

বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনের প্রশ্নোত্তরে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে তিন চাকার বাহন নিয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের দাবি জানিয়ে শামীম ওসমান তার প্রশ্নে বলেন, “ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে। রিকশার মধ্যেও ব্যটারি লাগানো হচ্ছে। এগুলো খুবই বিপদজনক এবং চলাও নিষিদ্ধ। এই অটোরিকশাগুলো যে চার্জ করে, তার ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ চুরি করে। তারা আমাদের ৭/৮ শ মেগাওয়াট বিদ্যুত খরচ করছে। এগুলো একযোগে সারা দেশে বন্ধের কোনো বিশেষ উদ্যোগ নেবেন কি না?”

জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, “এগুলোকে বলা হয়, ইলেকট্রিক ভেহিক্যল। বিশ্বে এখন বিপ্লব চলছে, কত দ্রুত ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমকে ইলেকট্রিকে নিয়ে যাওয়া যায়। এতে সুবিধা দুটো। তেলচালিত গাড়ির ইঞ্জিনের ইফিসিয়েন্সি লেভেল হল ২০ শতাংশ। অপরদিকে ইলেকট্রিক দিয়ে এনার্জি সঞ্চয় করে গাড়ি চালাবেন, তার ইফিসিয়েন্সি হল ৮০ শতাংশ।

“মূলত আমরা উৎসাহিত করি যত দ্রুত পারে বাজারে আসুক ইলেকট্রিক ভেহিক্যলগুলো। এতে তেলচালিত বাহনে কিলোমিটার প্রতি যেতে যদি ১০০ টাকা লাগে, বিদ্যুতচালিত যানে সেই দূরত্ব যেতে লাগবে ২০ টাকা।”

বাংলাদেশে ৪০ লাখের বেশি বিদ্যুৎচালিত থ্রি হুইলার আছে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, এসব বাহন লেড ব্যাটারি ব্যবহার করে। তাতে চার্জ করতে ৭/৮ ঘণ্টা সময় লাগে। লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহার করলে লাগবে মাত্র আধা ঘণ্টা।

এসব অটোরিকশাকে লেড ব্যাটারি থেকে লিথিয়াম ব্যাটারিতে আনতে ‘অচিরেই’ একটি পাইলট প্রজেক্ট শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জিআইজেডের সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

“এই ৪০ লাখ থ্রি হুইলারকে আমি বলি বাংলা টেসলা, নিজ হাতে তৈরি করছেন। আমাদের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে কাজ করছেন। আমরা তাদের কোনো বাধা দিচ্ছি না। হ্যাঁ, যান্ত্রিকভাবে এতে ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু বিদ্যুৎ যেটা ব্যবহার করছে তার রিটার্ন কিন্তু অনেক বেশি। এই ৪০ লাখ রিকশাচালক যারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন, তারা অবশ্যই আয় করছেন।”

২০২৩ সালে ইলেকট্রিক গাড়ির চার্জিং স্টেশন বসানোর নীতিমালা করার কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ নীতিমালা মেনে আবেদন করে যে কেউ চাইলে চার্জিং স্টেশন বসাতে পারবেন।

‘চাই ইলেকট্রিক বাস’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি বাংলাদেশে যত পাবলিক পরিবহন ইউটিলিটি বাস আছে, সেগুলি দ্রুততার সাথে ইলেকট্রিক বাসে নিয়ে আসা উচিত। খরচ কম, পরিবেশবান্ধব। বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টর ১৮ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করে, যার কারণে ইলেকট্রিক ভিহিক্যলগুলো দ্রুততার সাথে আসা উচিত।”

তবে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেন নসরুল হামিদ।

তিনি বলেন, “এটা হল বড় কনসার্ন। আমি অনেক জায়গায় গিয়েছি, আমার কেরানীগঞ্জে রাতে অনেক জায়গায় গিয়ে দেখেছি কী রকমভাবে রিকশা চার্জ করে। তারা মিটার থেকে বিদ্যুতের কানেকশনটা নেয়। আমরা তাদের জন্য ট্যারিফ ঠিক করে দিয়েছি। যারা চার্জিং স্টেশনে বিদ্যুৎ নেবে, তাদের জন্য একটা আলাদা ট্যারিফ আছে। সেটা আমাদের গৃহের ট্যারিফের চেয়ে একটু বেশি।

“আমরা দেখব, এরকম আরও অবৈধ (বিদ্যুৎ সংযোগ) যদি থাকে, ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলো সেগুলোর বিষয়ে নজরে রাখছে। অবশ্য আস্তে আস্তে পরিবর্তন হচ্ছে। বেশির ভাগই এখন অবৈধভাবে বিদ্যুৎ না নিয়ে মিটারের মাধ্যমে নিচ্ছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে বলেছি আপনারা ইভি ভ্যাহিক্যলকে সহযোগিতা করেন।”

বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৯ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াট

এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ক্যাপটিভ ও অফগ্রিড নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বর্তমানে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৯ হাজার ৭২৭ মেগাওয়াট। আর গ্রিডভিত্তিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৬ হাজার ৫০৪ মেগাওয়াট।

এর মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট (৪৩ শতাংশ), ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ছয় হাজার ৪৯২ মেগাওয়াট (২৪ শতাংশ), ডিজেলভিত্তিক ৮২৬ মেগাওয়াট (৩ শতাংশ), কয়লাভিত্তিক চার হাজার ৪৯১ মেগাওয়াট (১৭ শতাংশ), হাইড্রো ২৩০ মেগাওয়াট (এক শতাংশ), অনগ্রিড সৌর বিদ্যুৎ ৪৫৯ মেগাওয়াট (দুই শতাংশ), বিদ্যুৎ আমদানি দুই ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট (১০ শতাংশ)।

প্রতিমন্ত্রী জানান, চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রাপ্যতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার বিপরীতে ১৯ এপ্রিল সর্বোচ্চ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট।

শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় এ বছর শীতকালে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে। আসন্ন গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদার পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হবে।

পুরনো খবর

Also Read: ব্যাটারিচালিত ৩ চাকার যান মহাসড়কে উঠতে পারবে না: আদালত

Also Read: মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণেও নীতিমালা হচ্ছে

Also Read: নতুন নতুন সড়ক হলেও রয়ে গেছে পুরনো বিপদ

Also Read: নীতিমালা হলেই নসিমন-ভটভটির অনুমতি: সংসদে কাদের

Also Read: মহাসড়কে কমেনি তিন চাকার বিপদ