গ্যাস-বিদ্যুতের দাম মাসে মাসে সমন্বয়ে নীতিমালা হচ্ছে: প্রতিমন্ত্রী

প্রতিমন্ত্রী বলছেন, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন সংশোধন করা হয়েছে, যাতে সরকার ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’ প্রতি মাসে মূল্য সমন্বয় করতে পারে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2023, 12:02 PM
Updated : 9 Jan 2023, 12:02 PM

এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইনের সংশোধনী সংসদে পাসের আনুষ্ঠানিকতা সারা হলেই প্রতি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ে নীতিমালা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

সোমবার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে সংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও তেলের দাম সমন্বয় করা হয়। বাংলাদেশেও ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’ এ পণ্যগুলোর দাম সমন্বয় করা হবে।

বর্তমানে গ্যাস বিদ্যুতের মূল্য পরিবর্তন বা সমন্বয় করতে হলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে আবেদন করতে হয়। সেই আবেদনের যথার্ততা যাচাই ও গণশুনানি করে কমিশনই ন্যায্য মূল্য ঠিক করে দেয়।

খুচরায় বিদ্যুতের দাম বাড়াতে এমনই একটি গণশুনানি রোববার নিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি। শুনানিতে বিতরণ সংস্থাগুলোর খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ভারিত গড়ে ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট ৮ টাকা ২৩ পয়সা করার সুপারিশ করেছে কমিশনের কারিগরি কমিটি। অবশ্য সব পক্ষের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে কমিশন এর চেয়ে কম-বেশি করতে পারে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “রেগুলেটরি কমিশন ভোক্তা, খুচরা বিক্রেতা ও বিদ্যুতের কোম্পানিগুলোকে সাথে নিয়ে শুনানি করেছে। তারাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে আমার কাছে মনে হয়- বিইআরসি সহনীয় পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করবে।”

‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’ জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম সরাসরি বাড়ানো কিংবা কমানোর ক্ষমতা কমিশনের পাশাপাশি সরকারের হাতে রাখতে ইতোমধ্যে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি হয়েছে। নিয়ম মাফিক গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদকে এ বিষয়ে অবহিতও করা হয়েছে। 

আইনের যুক্ত করা নতুন ধারায় বলা হয়েছে, “এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে, জনস্বার্থে, কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহস্থালী কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এর উৎপাদন বৃদ্ধি, সঞ্চালন, পরিবহন ও বিপণনের নিমিত্ত দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে বিদ্যুৎ উৎপাদন, এনার্জি সঞ্চালন, মজুতকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয় করিতে পারবে।”

এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আইনটা নিয়ে আসা হয়েছে, সেটা হচ্ছে, ক্ষেত্র বিশেষে সরকার যাতে মূল্য সমন্বয় করতে পারে সেজন্য। আমরা আইনটা সংশোধন করতে যাচ্ছি, বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রতি মাসে যেন একটা অ্যাডজাস্টমেন্টে যেতে পারি। পাশের দেশেও নিয়মিত এনার্জির দাম সমন্বয় করে, এর সঙ্গে বিদ্যুতের দামও সমন্বয় করে।

“এখন সারা বিশ্বে একটা মন্দা অবস্থা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। জ্বালানির দাম বেড়ে গিয়েছিল। ইতোমধ্যে বিদ্যুতের উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। এখন খুচরা পর্যায়ে বিইআরসি কী করে সেটা দেখার বিষয়। তারাই নতুন দাম ঘোষণা দেবেন।”

বিশ্বে জ্বালানির দাম অনেক বেশি হলেও দেশে ভর্তুকি দিয়ে এখনও কমিয়ে রাখা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সরকার হয়তো কিছু ভর্তুকি দেবে। তবে সেটা এত বেশি না। পাশের দেশ ভারতে গ্যাসের মূল্য প্রতি ইউনিট ৩২ টাকার বেশি, আর আমাদের দেশে ১২ টাকার মত। আমরা এখানে ভর্তুকি দিচ্ছি।”

বিইআরসির শুনানিতে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিতরণ সংস্থাগুলোর অভ্যন্তরীণ সিস্টেম লস দূর করে বিদ্যুতের বাড়তি দাম সমন্বয় করা সম্ভব। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নসরুল হামিদ বলেন, “সিস্টেম লস এক সময় ৪৪ শতাংশ ছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ২২ শতাংশ সিস্টেম লস ছিল। এখন আমাদের ৭ শতাংশের মত সিস্টেম লস। তাহলে অপচয়টা হচ্ছে কোথায়? এখন যেটা অপচয় হচ্ছে, সেটা গ্রাহক পর্যায়ে। অনেক সারাদিন বিদ্যুতের সুইচ চালু করে রাখছে। এসি চলছে। এগুলোর দিকে নজর রাখতে হবে।”