“সারা পৃথিবীর গড় আমদানি শুল্ক মাত্র ৬ শতাংশ।”
Published : 29 Jan 2024, 03:45 PM
অতিরিক্ত আমদানি শুল্কই দেশের রপ্তানি বৈচিত্রে প্রধান বাধা এবং এই শুল্ক বাধাই বিদেশি বিনিয়োগে গতিহীনতা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রধান কারণ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ জায়েদি সাত্তার।
বুধবার ‘ট্যারিফ প্রটেকশন অ্যান্ড এক্সপোর্ট ডাইভার্সিফিকেশন আর নট মিউচ্যুয়ালি এক্সক্লুসিভ, প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক একক বক্তব্যে তিনি এই মত প্রকাশ করেন।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার বলেন, বাংলাদেশের গড় আমদানি শুল্ক প্রায় ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ। আমদানি শুল্কের এই হার বাংলাদেশের রপ্তানি ও বিনিয়োগ প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। যেমন- ইন্দোনেশিয়ায় ৮ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ, থাইল্যান্ডে মাত্র ৯ দশমিক ৭ শতাংশ।
“আমাদের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এবং প্রতিবেশী ভারতে এই হার ১৮ দশমিক ১ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ২২ দশমিক ৪ শতাংশ।”
তিনি বলেন, “ভারতের উদ্দেশ্য ভিন্ন। কারণ ভারতে প্রায় সকল ধরনের শিল্প পণ্যের কাঁচামাল দেশে উৎপাদিত হয়। তাই আমদানি নিরুৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে কিছুটা উচ্চ রাখা হয়েছে। তারপরও বাংলাদেশের চেয়ে কম।”
জায়েদি সাত্তার বলেন, সারা পৃথিবীর গড় আমদানি শুল্ক মাত্র ৬ শতাংশ। যার মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের গড় ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ, নিম্ম মধ্যম আয়ের দেশের আমদানি শুল্কের গড় ৭ দশমিক ২ শতাংশ, উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের গড় আমদানি শুল্ক ৩ দশমিক ৭ শতাংশ এবং উচ্চ আয়ের দেশের গড় আমদানি শুল্ক মাত্র ২ শতাংশ।
“আমাদের দেশে রপ্তানি ও বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশে শিল্পায়ন গড়ে তোলার কথা বলা হলেও নীতি গ্রহণ করা হয়েছে তার উল্টো।”
তিনি বলেন, “আমাদের রপ্তানি পোশাকের কাঁচামাল আমদানিতে শূন্য শুল্ক। সেই সুবিধা নিয়ে দেশে পোশাক তৈরি করে তা বিদেশে রপ্তানি করছে। তৈরি পোশাক এককভাবে মোট রপ্তানির প্রায় ৮৫ ভাগ রপ্তানি করছে। এই সুযোগ অন্য কোনো খাতকে না দেওয়ার ফলে বাংলাদেশ থেকে একক কোনো খাত ১০০ কোটি ডলারও রপ্তানি করতে পারছে না।”
ড. সাত্তার বলেন, ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যের মধ্যে পোশাক খাতের বাইরে রপ্তানি হয় প্রায় ১ হাজার ৩৯৩ ধরনের পণ্য। কিন্তু রপ্তানি করে মাত্র মোট রপ্তানি ১৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অন্যদিকে তৈরি পোশাক খাতের মাত্র ৫৮৪টি আইটেম থেকে বাকি প্রায় ৮২ শতাংশ রপ্তানি হয়।
“দেশে গড়ে উঠেছে বাইসাইকেল নির্মাণ শিল্প। দেশে তৈরি বাই সাইকেল ইউরোপ আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে। এ শিল্পের কাঁচা মাল আমদানিতে প্রায় ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ আদায় করা হচ্ছে। এই শিল্পের মত অনেক শিল্প আছে, তাদেরকে তৈরি পোশাকের মত সুযোগ দিলে রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।”
একইভাবে আমদানি শুল্কের উচ্চ হারকে দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতির ‘প্রধান কারণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন পিআরআই চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, দেশে ফার্মের লেয়ার বা ব্রয়লার মুরগির খাদ্য তৈরিতে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। এসব আমদানির ওপরও উচ্চ শুল্ক আদায় করা হচ্ছে।
“যদি কম শুল্কায়ন হত, তাহলে অবশ্যই ফার্মের মুরগি এবং ডিমের উৎপাদন খরচ কম পড়ত। অথচ পরিকল্পনামন্ত্রী বলছেন ডিম আর মুরগির কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।”
সরকার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ এবং রপ্তানি বাড়বে বলে মন্তব্য করেন জায়েদি সাত্তার।
বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন সংস্থার মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।
(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)