ডিম বিক্রির নিলাম প্রক্রিয়া উন্মুক্ত করার কথাও বলেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক
Published : 15 Aug 2023, 12:21 AM
খামার, আড়ত ও পাইকারি পর্যায়ে ডিম কেনাবেচায় অবশ্যই পাকা রসিদ ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান।
আগামী বুধবার থেকে পাকা রসিদ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে কাজ করবে অধিদপ্তর বলে জানান তিনি।
সোমবার অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে ডিমের উচ্চ মূল্য নিয়ে ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, ফার্ম ও করপোরেট, এজেন্ট-ডিলার ও ডিম ব্যবসায়ী
সমিতির সদস্যদের নিয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভা তিনি এসব কথা বলেন।
পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈঠকের বিষয়ে জানায় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান।
গত সপ্তাহের শেষ দিক থেকে ডিমের বাজার হঠাৎ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। আমিষের সহজলভ্য উৎস ডিমের দাম হঠাৎ বেড়ে প্রতিটি ১৪ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়।
ঢাকার বাজারে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। ডজন হিসাবে ডিমের দাম উঠেছে ১৬৫ টাকায়।
গত বছরের এই সময়েও প্রতি ডজন ডিমের দাম উঠেছিল ১৫৫ টাকা। তবে বর্ষা শেষে তা আবার কমে গিয়েছিল। গত মাস পর্যন্ত ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় ডিম বিক্রি হয়। এরপরই বাড়তে থাকে।
ডিমের দাম হঠাৎ লাফের পর দেশজুড়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থাও অভিযানে নেমেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ভোক্তা অধিদপ্তর।
সভায় মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, “আমরা আগামী ১৬ অগাস্ট থেকে পাকা ভাউচার নিশ্চিত করতে চাই এবং পাকা ভাউচার ছাড়া ডিমের কোনো লেনদেন হবে না।
“পাকা ভাউচার পাওয়া গেলে আমরা ট্র্যাক করতে পারব ডিমের ক্রয়মূল্য
ও বিক্রয়মূল্য কত এবং কত লাভ করা হয়েছে।”
পাকা রসিদ নিশ্চিত করা নিয়ে অধিদপ্তর এক বছর ধরে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন অভিযান পরিচালনাকালে পাকা ভাউচার না পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, “ডিম বিক্রয়ের নিলাম প্রক্রিয়া প্রকৃতপক্ষে উন্মুক্ত হতে হবে। দেখা যায় বর্তমানে নিলাম প্রক্রিয়া ক্লোজ গ্রুপের মধ্যে হয়, যা ত্রুটিপূর্ণ এবং অনৈতিক।”
নিলামে সবার অংশগ্রহণ ও এ প্রক্রিয়া অনলাইনভিত্তিক হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সভায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. শাহিনুর আলম বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৫০ পয়সা। যে কারণে খুচরা মূল্য কোনোভাবেই ১২ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।
ডিম বিক্রির কারসাজির ক্ষেত্রে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেন তিনি।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রান্তিক
খামারিদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ডিম উৎপাদন করেন। অপর দিকে খামারিরা জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে ডিম উৎপাদন করেন। উৎপাদন বাড়ানো গেলে ভোক্তা কম মূল্যে ডিম পাবেন।
বিডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান
বলেন, খামারি থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পোঁছাতে চার হাত বদল হয়। ডিম উৎপাদনে খামারিদের বিনিয়োগ দীর্ঘ সময়ের। পক্ষান্তরে অন্যান্য ব্যবসায়ীর বিনিয়োগ স্বল্প সময়ের। এ খাতের সকলে সমন্বিত হয়ে কাজ করলে শৃঙ্খলার সঙ্গে ব্যবসা করা সম্ভব হবে।
তেজগাঁও বহুমূখী সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি হারুন-উর-রশিদ বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে আমাদের পূর্ব পুরুষরা তেজগাঁও এলাকায় ডিমের ব্যবসা করে আসছে। আমাদের কেউ ব্যবসার নীতিমালা শেখায়নি। আগে ফার্মার এবং আড়তদাররা মিলে ডিমের দাম ঠিক করতেন।
সভায় এফবিসিসিআইর জ্যেষ্ঠ অতিরিক্ত মহাসচিব শাহ মো. আব্দুল খালেক
বলেন, এফবিসিসিআই যেমন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আছে তেমনি ভোক্তা সাধারণের পাশেও আছে। পাকা রসিদ দিতে ব্যবসায়ীদের গাফলতি আছে যা সংশোধন করা দরকার। অসাধু ব্যবসায়ীদের ছাড় না দিয়ে আরও কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
সভায় কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের (ক্যাব) প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আহমেদ
একরামুল্লাহ পাকা রশিদ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা বাস্তবায়ন করার তাগাদা দেন। দাম না কমলে ডিম আমদানির কথা বলেন তিনি।
সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আনোয়ার হোসাইন বলেন, সরকার ডিম আমদানির অনুমোদন দিলে দেশের ডিম উৎপাদনকারীরা
ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সে বিবেচনায় আপাতত ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি উৎপাদন খরচ বিবেচনায় খুচরা বিক্রয় মূল্য ১২ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন।