“বাংলাদেশে তথ্য আদান-প্রদান হয় না বললেই চলে। যার যার তথ্য, তার তার কাছেই থাকে।”
Published : 15 Dec 2024, 07:56 PM
চিকিৎসার নামে প্রতিবছর পাঁচ বিলিয়ন ডলারের সমসরিমাণ অর্থ বিদেশে চলে যাওয়ার তথ্য দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, এই টাকা কোথায় খরচ হয়, তা অজানাই থেকে যায়।
রোববার রাজধানীতে ডেটাবিষয়ক এক কর্মশালায় তিনি বলেন, “আমাদের দেশে ডেটা স্টোরেজের কোনো পলিসি নাই। বাংলাদেশে এখনো ডোমেস্টিক ক্লাউড সার্ভিসগুলো তেমন উন্নতি করতে পারেনি।
“এটা ছাড়া তথ্যগুলো সংরক্ষণ করতে পারব না; সেটা চিকিৎসা খাত হোক, পর্যটন হোক, কিংবা অর্থনীতির অন্য খাত হোক।”
রাজধানীর একটি হোটেলে 'ক্রস বর্ডার ডেটা ফ্লো: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট' শিরোনামে এ কর্মশালা আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)।
গভর্নর বলেন, “বিদেশে চিকিৎসায় প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ৫০০ কোটি ডলার চলে যায়। কিন্তু তারা সেই টাকা কোথায় খরচ করেন আমরা জানি না। অনেকে পর্যটন ভিসায় বিদেশে গিয়ে ডাক্তার দেখান।”
বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় ‘এনঅ্যাবলিং ক্রস বর্ডার ডেটা ফ্লোস উইদিন বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া, নেপাল, শ্রীলংকা টুয়ার্ডস রিজিওনাল ইন্টিগ্রেশন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই কর্মশালা আয়োজন করা হয়।
আহসান মনসুর বলেন, “পৃথিবীর সব দেশে এখন খনির চেয়ে ডেটাকে প্রাধান্য দেয় বেশি। কয়লা খনি বা তেল খনি থেকেও ডেটা খনি অনেক বড়।
“বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষ আছে। এখানে অনেক ডেটা তৈরি হচ্ছে। আমাদের মোবাইল সিস্টেম থেকে হচ্ছে, আমাদের ক্ষুদ্র-মাঝারি খাত থেকে হচ্ছে, পর্যটন খাত থেকে হচ্ছে, কিন্তু সেটা ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে এর কোনো মূল্য আমরা পাচ্ছি না।’’
তিনি মনে করেন, “স্বাস্থ্য খাতে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক কিছু করার আছে। আমরা গবেষণা করতে পারছি না। কারণ বিগ ডেটা আমাদের কাছে নাই। যদি থাকত তাহলে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা বুঝতে পারতাম যে কোনটি বেশি কার্যকর।
“আমি মনে করি ডেটাবেইজ, ডেটা মাইনিং ও ডেটা স্টোরেজসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে যদি আমরা উন্নতি করতে পারি, তাহলে অনেক বেশি উন্নতি করতে পারব। এর জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আইনি কাঠামো তৈরি এবং আচরণ পরিবর্তন করতে হবে।”
কর্মশালায় সঞ্চালনা এবং সূচনা বক্তব্য দেন পিআরআই চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদি সাত্তার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ব ব্যাংকের ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট নিধি পারেখ এবং প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআই প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান।
আহসান মনসুর বলেন, “বাংলাদেশে তথ্য আদান-প্রদান হয় না বললেই চলে। যার যার তথ্য, তার তার কাছেই থাকে। এমনকি নিজেদের মধ্যেও তথ্য আদান-প্রদান করা হয় না।
“আমাদের আইনিভাবে কাজ করতে হবে; এক্ষেত্রে সরকারকে কাজ করতে হবে। যদি স্থানীয় পলিসিগুলোকে আমরা মানানসই না করি, তাহলে কিন্তু তথ্যের ব্যবহারটা হবে না।”
জায়েদি সাত্তার বলেন, “তথ্য আদান প্রদানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সবচেয়ে কম সংযুক্ত। এখানে রাজনৈতিক সীমানা অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের নিজেদের মধ্যে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়ানোর আরও সুযোগ রয়েছে। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে যা আরও বেশি বাস্তব।”
কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পিআরআই এর গবেষণা পরিচালক বজলুল হক খন্দকার, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের ডেপুটি ডিরেক্টর মহিবুল ইসলাম, ব্র্যাক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. সাব্বির হোসেন।