“ব্যাংকগুলো অনেক সময় ১৪ ও ২৮ দিনের রেপোতে অর্থ নিয়ে ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করে। এসব বন্ধ করা উচিত”, বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা।
Published : 25 Feb 2025, 12:21 AM
দুই ধরনের রেপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর টাকা ধার নেওয়ার সুবিধা বন্ধ হচ্ছে; যা অনেক দিন থেকেই তাগিদ দিয়ে আসছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
প্রথম ধাপে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে ২৮ দিনের রেপো বন্ধ করা হবে। এর তিন মাস পর জুন নাগাদ ১৪ দিনের রেপো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও পরিচালকদের সঙ্গে ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি প্রধানদের একটি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোজার কারণে মার্চের শুরুতে না করে দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে গিয়ে ২৮ দিনের রেপো বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ওই বৈঠকে ২৮ দিনের রেপোর পাশাপাশি ১৪ দিনের রেপোও বন্ধের সিদ্ধান্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছেন উপস্থিত একাধিক ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান।
বর্তমানে ৭, ১৪ ও ২৮ দিনের রেপো হয়। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক রেপোর ব্যবস্থা সপ্তাহে দুইদিনের বদলে একদিন করে। বর্তমানে মঙ্গলবারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিতে পারে। আগে সোমবারেও নিত।
বাণিজ্যিক ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেয়, যা রেপো হিসেবে পরিচিত। এটির সুদহার ঠিক হয় রেপো বা রিপারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টের মাধ্যমে।
আর রিভার্স রেপোর মাধ্যমে (জুলাই থেকে যা পরিচিত এসডিএফ নামে) ব্যাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলে বাজার থেকে অতিরিক্ত তারল্য তুলে নিতে পারে।
এই দুই পদ্ধতিতে সরকারি সিকিউরিটিজ কেনাবেচার মাধ্যমে বাজারে টাকার সরবরাহে ভারসাম্য ধরে রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সভায় উপস্থিত বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মার্চের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় সপ্তাহে ২৮ দিনের রেপো ব্যবস্থা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর জুন নাগাদ বন্ধ হবে ১৪ দিনের রেপো।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন বলেন, “আজ মুদ্রানীতি নিয়ে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে একটি সভা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আগে থেকেই চাচ্ছিল রেপো সুবিধা পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনতে।
“তবে আইএমএফ অনেক ধরনের পরামর্শ দিলেও বাংলাদেশ ব্যাংক সব দিক বিবেচনা করে নিজেই সিদ্ধান্ত নেয়। যে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন, বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সিদ্ধান্ত নেয়।”
তিনি বলেন, “২৮ দিনের রেপো ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে রোজার মাসে যেহেতু ব্যাংকগুলোর তারল্য দরকার হয় বেশি, কারণ তখন সবাই লেনদেন বেশি করে, তাই এখনই এই সুবিধা বন্ধ না করে রোজার মাঝামাঝি বন্ধ করা হবে।
“মার্চের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় সপ্তাহে বন্ধ করা হতে পারে।”
রেপো বন্ধের ব্যাখ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৪ ও ২৮ দিনের রেপোর বদলে ৭ দিনের রেপো পদ্ধতির দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
“ব্যাংকগুলোর তারল্য দরকার পড়লে কলমানি থেকে ধার করবে। তাতে কলমানি বাজারটা শক্তিশালী হবে। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো সেই চর্চা করছে না।”
তিনি বলেন, “আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো উল্টো চর্চা করছে। আন্তঃব্যাংক থেকে ধার করার চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ধার করছে বেশি।”
“ব্যাংক যখন কলমানি কিংবা অন্য জায়গা থেকে টাকা ধার করতে পারবে না, অর্থাৎ একদম না পেরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আসবে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ কর্মকর্তা মনে করেন, “৭ দিনের রেপোই হবে স্ট্যান্ডার্ড ও একমাত্র ব্যবস্থা।
“বাংলাদেশ ব্যাংক মানি মার্কেট পর্যালোচনায় দেখেছে, ব্যাংকগুলো ১৪ ও ২৮ দিনের রেপোর মাধ্যমে টাকা ধার করে সেটা আবার ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করছে। এসব বন্ধ করা উচিত। কারণ বাণিজ্যিক ব্যাংক এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারে না। তাই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”