তেজগাঁওয়ে ডিমের পাইকারি ডিম বিক্রেতা আল আমিন বলেন, “আমাদের কাছ থেকে কিনে আমাদের চেয়ে খুচরায় দুই টাকার ওপরে বিক্রি করা উচিত না।”
Published : 03 Oct 2024, 12:34 AM
তিন দিনের ব্যবধানে মো. মেহেদী হাসানকে ১০ টাকা বেশিতে কিনতে হচ্ছে ফার্মের এক ডজন লাল ডিম। এ নিয়ে বিক্রেতার সঙ্গে তার দর কষাকষি হলেও শেষে বিক্রেতার চাওয়া দামেই কিনতে হল তাকে।
বুধবার মহাখালী কাঁচাবাজারে ডিম কিনতে এসে অস্বস্তিতে পড়েন মেহেদী। দাম জিজ্ঞাসা করতেই বিক্রেতা মো. রাজু আহমেদ তাকে শোনালেন, এক ডজন ডিম ১৭০ টাকা।
তিনি বিক্রেতাকে বললেন, “তিন দিন আগে রোববার তো আপনার কাছ থেকেই কিনলাম ১৬০ টাকায়। আজ আবার বেশি চাইতেছেন কেন?”
বিক্রেতা রাজু বললেন, “ভাই, আমরা আগে যে দামে কিনতাম; সে দামে তো পাই না। আমাদের কাছে পাইকাররা বেচেছে বেশি দামে। সোমবার থেকে দাম বেশি।”
রাজু আহমেদ এক ডজন লাল ডিম বিক্রি করছেন ১৭০ টাকায়। আর প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। সেই হিসেবে প্রতিটি ডিমের দাম আসে ১৫ টাকা করে। লাল ডিম প্রতি হালি বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকায়।
বাজারে লাল ডিমের সঙ্গে দাম বেড়েছে সাদা ডিমেরও- হালিতে ৫ টাকা ও ডজনে ১০ টাকা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায় ডজন। আর প্রতি হালি ৫৫ টাকা। তবে হাঁসের ডিমের দাম বাড়েনি। বাজারে আগের মত ২১০ টাকা ডজন ও হালিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা করে।
মহাখালী কাঁচাবাজারের ডিম বিক্রেতা মো. রাজু আহমেদ বলেন, “আমরা তেঁজগাও থেকে ডিম কিনি। সেখানে সোমবার থেকেই দাম বাড়তি। একদিকে বন্যা, অন্যদিকে গরম- শুনতেছি এই কারণে উৎপাদন কম। রাস্তায় অতিরিক্ত জ্যামে তেল খরচ বেশি হচ্ছে।
“সব মিলিয়ে আমাদের কাছেই দাম বেশি বলতেছে। আবার দাম বেশি হইলে ক্রেতা কমে যায় আমার।”
মেহেদী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোববারে আমি এই দোকান থেকে ১৬০ টাকা ডজন করে কিনছি। আর আজ শুনতেছি ১৭০ টাকা ডজন। এভাবে দাম বাড়লে আমরা কোথায় যাব? এক ডিমের দাম যদি ১৫ টাকা হয়, তাহলে সেই ডিম আসলে আমাদের জন্য না।”
মো. কবির এক ডজন লাল ডিম কিনেছেন ১৭০ টাকায়।
মহাখালীতে বাজার মসজিদ রোডে মুদি দোকান করিমগঞ্জ স্টোরে সকাল থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ডিম বিক্রি হয়েছে মোট দুই হালি।
বিরক্তি প্রকাশ করে বিক্রেতা আবু তাহের বলেন, “সকাল থেকে এত কিছু বেচছি, খালি ডিমডাই কম বেচা হইছে। এক ডিমের দাম ১৫ টাকা কইরা মাইনষে কিনতে চায় না।”
যে কারণে বাড়ল ডিমের দাম
টানা গরমে উৎপাদন কমে যাওয়া এবং কুমিল্লার পর উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণবঙ্গে বন্যায় অনেক খামার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ডিমের বাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন এলাকার খামারি ও পাইকাররা।
তবে দাম বাড়ায় খামারিরাও আগের তুলনায় টাকা বেশি পাচ্ছেন।
টাঙ্গাইলের সখিপুরে ২০ হাজার মুরগি রয়েছে জাকিয়া পোল্ট্রিতে। এখানে আগে ৯০ শতাংশের ওপরে ডিম পাওয়া গেলেও এখন উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ।
এমন তথ্য দিয়ে ফার্মের কর্ণধার জাহিদ হোসেন বলেন, টানা গরমের কারণে উৎপাদন কমে গেছে। নভেম্বরে বাজারে শীতের সবজি আসা শুরু হলে দাম কমবে। কারণ, তখন ডিমের চাহিদা কমবে।
তবে জাহিদের কথার যৌক্তিকতা নেই বলে দাবি করছেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার। তিনি বললেন, কোনো ফার্মে ৭৫ শতাংশের নিচে ডিম উৎপাদন হলে সেসব মুরগি রাখা হয় না। সেগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়। আর ৬০ শতাংশ ডিম দেওয়া মুরগি ফার্মে রাখা তো কখনই সম্ভব না।
ঢাকার তেজগাঁওয়ে ডিমের পাইকারি দোকান আল আমিন ট্রেডার্সের বিক্রেতা মো. আল আমিন বলেন, সপ্তাহখানেক আগেও একশ লাল ডিমের দাম ১২৪০ টাকা ছিল, দু’দিন আগে ১৩০০ টাকা হয়ে সেটা ২০ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ১২৮০ টাকায়। আর সাদা ডিমও এমনভাবে উঠা-নামা করছে। লাল ডিমের সাথে সাদা ডিমের পার্থক্য একশ বিশ টাকার মত।
এ সময় তাকে ১৫ টাকা করে বিভিন্ন বাজারে ডিম বিক্রির কথা জানালে তিনি বলেন, “পরিবহন খরচ ও লাভ সব মিলিয়ে এক ডিমে বড়জোর এক টাকা বেশি নিতে পারে। কিন্ত আমাদের কাছ থেকে কিনে আমাদের চেয়ে খুচরায় দুই টাকার ওপরে বিক্রি করা উচিত না।”
দাম বাড়ায় ডিম বিক্রি কমছে জানিয়ে আল আমিন বলেন, “সামনে ডিমের দাম কিছুটা কমবে। কারণ মানুষ চাহিদা মত ডিম কেনে ঠিকই কিন্তু দাম অতিরিক্ত হয়ে গেলে কম কেনে।”
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, “এখন খামারে একশ ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১৭০ থেকে ১২৩০ টাকা। আর আড়তে বিক্রি হচ্ছে ১২৯০ থেকে ১৩০০ টাকায়। অথচ বাজারে ২০০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। মানে আড়তের চেয়ে প্রতি ডিমে ২ টাকা করে বেশি বিক্রি করতেছে তারা।”