“চাপমুক্ত রেখে নারী কর্মীকে মা হওয়া সুযোগ দেওয়া এবং অফিসের কাজে যেন পিছিয়ে না পড়েন, সেজন্যেই এ উদ্যোগ,” বলেন রবির প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা।
Published : 10 Dec 2024, 08:40 AM
মা হওয়া আর নবজাতকের লালনপালনের সঙ্গে কর্মস্থল সামলানো নারী কর্মীদের বিশেষ এ সময়কালের জীবনযাত্রা ‘সহজ করতে’ ব্যতিক্রমি এক কর্মসূচি চালু করেছে মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি রবি আজিয়াটা।
এর আওতায় মাতৃত্বকালীন ছুটির আগের ও পরের দুই মাস তাকে সহযোগিতা করবেন আরেক সহকর্মী; যেটিকে ‘ব্লুম’ নামের এ কর্মসূচির ভাষায় বলা হচ্ছে ‘রিলিভার’।
ছুটিতে যাওয়ার আগে সেই নারী আরেকজনকে তার কাজ বুঝিয়ে দিয়ে যাবেন। ছয় মাস সেই কাজ সামলাবেন ‘রিলিভার’। ছুটি শেষ হলে ‘রিলিভার’ সদ্য মা হওয়া কর্মীর সঙ্গে থেকে কাজ করবেন, তাকে কাজ বুঝিয়ে দেবেন।
একজন নারী কর্মী যাতে মাতৃত্বের বাধা নিদ্বিধায় ডিঙাতে পারেন, সেজন্য এ কর্মসূচি নিয়েছে রবি আজিয়াটা, যেটির নাম দিয়েছে ‘ব্লুম কর্মসূচি’।
‘চাপমুক্ত রেখে’ নারী কর্মীকে মা হওয়ার সুযোগ দেওয়া এবং অফিসের কাজে যেন ‘পিছিয়ে না পড়েন’, সেজন্য এ উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন রবির প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মারুফউল আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “প্রথম দুই মাস রিলিভার নিজের দায়িত্ব ছেড়ে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা নারী বসের কাজে সহযোগিতা করেন। তিনি (নারী কর্মী) ছুটিতে গেলে তার সব দায়িত্ব বুঝে নেন। আবার ছুটি থেকে ফেরার পরও দুই মাস একই পদে কাজ করে যাবেন রিলিভার। যাতে ওই দুই মাসে ছুটি থেকে ফেরা নারী কর্মী চাপমুক্ত অবস্থায় নিজের কাজ বুঝে নিতে পারেন।”
মারুফউল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আমাদের সাইড থেকে দেখেছি, লম্বা ছয় মাসের ছুটিতে যাওয়ার সময় যথাযথ একটা দায়িত্ব হস্তান্তর না হওয়ার ফলে ছুটিতে যাওয়ার পরও তাদের (নারী কর্মীদের) হয়ত অফিস থেকে ফোনের যন্ত্রণা পোহাতে হয়। ‘এটা কী করেছ, ওটা কী করেছ’- এরকম ফোন পেতে হয় ছুটিতে থাকার সময়। ওই জায়গা থেকে আমরা চিন্তা করলাম বিষয়টা আরও দুই মাস আগে থেকে শুরু করার।
“আরেকটা বিষয় দেখলাম, আমাদের নারী সহকর্মীরা লম্বা এই ছুটি শেষে ফিরে অফিসের কাজের পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারছে কি না। এমনিতে করপোরেট জগৎ খুবই গতিশীল, ছয় মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিতিতে কাজের ধরনে হয়ত অনেক পরিবর্তন এসেছে। আবার নতুন মা হওয়া একজন নারী ছুটি শেষে ফেরত আসার পর দেখা যায় বাসায় তিনি ছয় বা সাত মাস বয়সী যে সন্তানকে রেখে আসেন তার একটা টেনশন থাকে। অবশ্যই অফিসের কর্মপরিবেশে খাপ খাওয়ানো তার জন্য অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়।“
এমন প্রেক্ষাপটে এ উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মাতৃত্বকালীন ছুটি যেখানে শেষ হচ্ছে, সেখান থেকে বিষয়টা আরও দুই মাস সম্প্রসারণ করা। রিলিভারও একজন ফুলটাইম এমপ্লয়ি। তিনি এই দুটো যাত্রা সহজ করার জন্য নারী সহকর্মীকে সাহায্য করবেন।”
মা হতে যাওয়া নারী কর্মীদের জন্য রবির কার্যালয়ে বিশ্রামের ব্যবস্থা থাকার তথ্য দিয়ে মারুফউল বলেন, “এ সময়টাতে অনেকের হয়ত স্বল্প সময়ের জন্য বিশ্রাম বা ন্যাপের প্রয়োজন হয়। সেজন্যও আমাদের অফিসে ব্যবস্থা আছে, আছে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকও। আবার মা হওয়ার পরে নারী কর্মীরা যেন তাদের সদ্যজাত শিশুদের নিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন, সেজন্য অফিসে আছে ‘ডে কেয়ার সেন্টার’।
এ কর্মসূচির আওতায় রিলিভার নিয়োগের ফলে কোম্পানির খরচ বাড়লেও রবি সেটাকে ‘বিনিয়োগ হিসেবে দেখছে’, যোগ করেন তিনি।
এর মাধ্যমে জ্যেষ্ঠ পদে থাকা কর্মকর্তার কাছ থেকে তার নিচের পদের কর্মীর কাজ শেখার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এতে অভ্যন্তরীণ পদোন্নতির পাইপলাইন তৈরির একটি সুবিধাও যোগ করছে বলে মনে করেন প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা।