ডাচ্- বাংলা ব্যাংকের লুট হওয়া টাকার অধিকাংশ উদ্ধার হয়নি

টাকা সরবরাহকারী কোম্পানির কয়েকজনকে হেফাজতে রেখে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলেও এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার নেই।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2023, 03:50 PM
Updated : 10 March 2023, 03:50 PM

প্রথমে বেশির ভাগ টাকা উদ্ধারের তথ্য জানালেও একদিন পরে এসে পুলিশ বলছে, ডাচ্‌- বাংলা ব্যাংকের বুথে জমা দিতে যাওয়ার সময় লুট হওয়া টাকার অধিকাংশই পাওয়া যায়নি।

শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সোয়া ১১ কোটি লুটের আলোচিত এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তারও দেখায়নি পুলিশ।

তদন্ত কর্মকর্তারা টাকা পরিবহনকারী মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের কয়েকজনকে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তরা) মো. বদরুল হাসান।

আর লুট হওয়া টাকার মধ্যে বাকি ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধারের চেষ্টায় রয়েছে পুলিশ বলে এদিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন তুরাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শরিফুল ইসলাম।

মামলার বরাত দিয়ে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার উদ্ধার হওয়া তিনটি ট্রাংকের মধ্যে দুইটিতে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে।

চাঞ্চল্য তৈরি করা বৃহস্পতিবারের টাকা লুটের এ ঘটনায় তুরাগ থানায় দায়ের করা মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

ঢাকার উত্তরার ১৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সেতু এলাকায় গত বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে টাকা বহনকারী একটি মাইক্রোবাস ছিনতাই হয়। এতে সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিল, যা ডাচ্- বাংলা ব্যাংকের বুথে জমা দেওয়ার জন্য নেওয়া হচ্ছিল।

প্রকাশ্যে ডাকাতির এ ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নেমে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে টাকা উদ্ধারের কথা জানায়।

সন্ধ্যায় গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, তারা মাইক্রোবাসসহ টাকা উদ্ধার করলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তখন লুট হওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার মধ্যে বেশির ভাগ উদ্ধারের তথ্য জানানো হয়েছিল।

এ ঘটনায় মানি প্ল্যান্ট লিংকের কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে ডাকাতি মামলা করেছেন তুরাগ থানায়। এতে অজ্ঞাতনামা ৮ থেকে ১০ জনের লুটের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা বলা হয়েছে।

তুরাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শরিফুল ইসলাম মামলার বরাত দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মোট চারটি ট্রাংক ডাকাতি হয়েছে। এগুলোতে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিল।

"উদ্ধার হওয়ার পর আমরা পেয়েছি তিনটি ট্রাংক, যার একটি খালি। একটি ট্রাংক উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।"

উদ্ধার হওয়া তিনটি ট্রাংকের মধ্যে দুইটিতে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যায় উল্লেখ করে এ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বাকি ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

উদ্ধার করা টাকা নিয়ে ঘটনার পর এক ধরনের তথ্য এবং পরে আরেক ধরনের তথ্য আসায় এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অপরদিকে উদ্ধার না হওয়া একটি ট্রাংকে বাকি সাত কোটির বেশি টাকা থাকার বিষয়টিও হিসাবকে গোলমেলে করে দিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

শুক্রবার ডিএমপির উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার বদরুল হাসান উদ্ধার হওয়ার টাকার বিষয়ে বলেন, “বিষয়টি ডিবি জানে, ডিবি আমাদের তিনটি ট্রাংক বুঝিয়ে দিয়েছে যার একটি খালি। বাকি দুইটিতে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পেয়েছি।“

আরেক প্রশ্নে পুলিশ কর্মকর্তা বদরুল বিষয়টি ‘গোয়েন্দা পুলিশ ভালো বলতে পারবে’ মন্তব্য করে বলেন, "উদ্ধারের সময় ডিবি কর্মকর্তারা যখন এ নিয়ে বক্তব্য রাখেন তখন ট্রাংকগুলো সাংবাদিকদের সামনেই ছিল। এ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি নেই।“

এ বিষয়ে টাকা উদ্ধারকারী ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, টাকার অংকের বিষয়টি তাদের জানা ছিল না। উদ্ধার হলেও তারা টাকা গুনেননি।

"ট্রাংকগুলো উদ্ধার করে তাৎক্ষণিক উত্তরা বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তারাই বলতে পারবে কত টাকা উদ্ধার হয়েছে," বলেন তিনি।

এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উদ্ধারের পরপরই ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, “রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার লো মেরিডিয়ান হোটেলের আশপাশের এলাকা থেকে লুট হওয়া বেশির ভাগ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। চারটি ট্রাংকের মধ্যে তিনটি উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে সেখানে নয় কোটি টাকার মত রয়েছে।"

পরে রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গোয়েন্দা পুলিশ যে তিনটি ট্রাংক উদ্ধার করেছে সেখানে একটি খালি এবং বাকি দুইটিতে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা রয়েছে।

টাকার হিসাব ছাড়াও বড় অঙ্কের টাকা লুটের এ ঘটনা বৃহস্পতিবার নানা আলোচনা তৈরি করে। ডাকাতদের এবং টাকা পরিবহনকারী গাড়িটির নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে অস্ত্র না থাকার বিষয়টি আলোচনার রসদ জোগায়। খালি হাতে মারপিট করে টাকা লুটের ঘটনা সবাইকে বিস্মিত করে।

রাতে পুলিশ জানায়, ডাচ্- বাংলা ব্যাংকের বুথের জন্য সোয়া ১১ কোটি টাকা বহনকারী গাড়িটি সকালের দিকে ঢাকার উত্তরায় যারা লুট করেছিল, তাদের কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না। আর যে নিরাপত্তা কোম্পানিটি টাকা পরিবহনের দায়িত্বে ছিল, তাদের কর্মীদের কাছেও ছিল না কোনো অস্ত্র।

মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি বার্ষিক চুক্তিতে ডাচ্- বাংলা ব্যাংকের নির্ধারিত বুথে টাকা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে আছে। কোম্পানটি গ্রিল ঘেরা একটি টয়োটা নোয়া মাইক্রোবাসে টাকা পরিবহন করছিল।

ছিনতাইকারীরা ভাড়ায় আনা একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস দিয়ে সেটির গতিরোধ করে। এরপর নিরাপত্তাকর্মীদের মারধর করে নামিয়ে দিয়ে মানি প্ল্যান্টের গাড়িটি ছিনতাইকারীরা নিয়ে চলে যায় বলে হামলার শিকার ব্যক্তিরা পুলিশকে জানিয়েছে।

Also Read: ডাচ-বাংলা ব্যাংকের লুট হওয়া টাকার ‘বেশিরভাগ’ উদ্ধার

Also Read: খালি হাতে মারপিট করেই ১১ কোটি টাকা লুট!

Also Read: ডাচ বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকাসহ গাড়ি ছিনতাই