গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডের পর সেখানকার অনেক রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
Published : 12 Mar 2024, 11:03 PM
“গতবারও এদিকে প্রচুর ভিড় হইত রেস্টুরেন্টগুলায়। এবার আইসা দেখি ম্যাক্সিমাম রেস্টুরেন্টই বন্ধ। যেগুলা খোলা আছে, অতো চাপ নাই মাইনষের। আগুন লাগার ঘটনার পর থিকা একটা আতংক রয়ে গেছে মানুষের মনে।”
মঙ্গলবার বিকালে বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রিন কোজি কটেজের সামনে একটি রেস্তোরাঁয় ইফতারি কেনার সময় বলছিলেন বেসরকারি চাকুরে হাবিব ইকবাল।
শান্তিনগর এলাকার এ বাসিন্দা বলছিলেন, “গতবারও এখানে ইফতারের বিভিন্ন খানা-পিনার ব্যাপক আয়োজন ছিল। রেস্টুরেন্ট ছাড়াও ফুটপাতগুলাতে দোকান ছিল। এবার সেই জৌলুস নেই এখানে।”
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণ যায়। বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে অনুমোদন নিলেও সেখানে রেস্তোরাঁ করার অনুমতি ছিল না।কিন্তু আট তলা ওই ভবনে ব্যবসা করছিল ১৪টি রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকান।
ভবনটিতে ছিল না কোনো অগ্নিনির্গমন পথ। একমাত্র সিঁড়িতে রাখা ছিল গ্যাস সিলিন্ডারসহ রেস্তোরাঁর মালামাল। কাচে ঘেরা ভবনের উপরের ফ্লোরগুলো থেকে নামতে না পেরে ধোঁয়ার বিষক্রিয়ায় এ বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়।
এরপর রাজউক ও সিটি করপোরেশনের অভিযানে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে বেইলি রোড ছাড়াও, ধানমন্ডি, খিলগাঁওসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকার রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অভিযানে বেইলি রোডে বন্ধ হওয়া নবাবি ভোজ, ফখরুদ্দিন বিরিয়ানিসহ বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁকে রোজার প্রথম দিন বন্ধ অবস্থাতেই দেখা গেছে। এমনকি এ এলাকায় ফুটপাতেও কোনো ইফতার সামগ্রীর দোকান চোখে পড়েনি।
আর সেই গ্রিন কোজি কটেজের সামনে এখনো ব্যারিকেড আছে। আগুনে পোড়ার চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভবনটির নিচে পাহারায় কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে দেখা গেল।
তবে গ্রিন কোজি কটেজের আশেপাশে গুটিকয়েক রেস্তোরাঁ খোলা দেখা যায়; যদিও বেশির ভাগেরই নেই ইফতার আয়োজন।
এর মধ্যে ‘জ্যাগেরি রেস্তোরাঁ ও পিঠাঘর’ নামে একটা রেস্তোরাঁয় কিছুটা ভিড়ে চোখ আটকাল। সেখানে লাইন ধরে ইফতারি কিনছিল মানুষ।
সেখানে ছোলা, বুট, মগজ ভুনা, খাসির হালিম, গরুর চপ, গরুর শামি কাবাব, মাটন লেগ রোস্ট, জালি কাবাব, শিক কাবাব, রেশমি এখানে কাবাব, সুতি কাবাব, ভেজিটেবল রোল, বাসমতির জর্দা, চাটনি, পনির সমুচা, বুন্দিয়া, হালিম, দই বড়াসহ হরেক ইফতারি বিক্রি হতে দেখা গেল।
ইফতার কিনতে সেখানে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন বেইলি রোডের বাসিন্দা আয়শা হাবিব তন্বী।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসলে এই রেস্তোরাঁ থেকে আমি আগে ইফতার সামগ্রী কিনিনি। এবারই এলাম প্রথমবার। এখানকার অন্য রেস্টুরেন্টেগুলোতে গিয়েছি।
“তবে এই দিকটাতে অনেকগুলো রেস্তোরাঁ থাকায় অন্যান্যবার যে ভিড় দেখা যায়, এবার সেটি চোখে পড়ছে না। সত্যি বলতে আমার নিজেরও মনের মধ্যে একটু ভয় ঢুকে গেছে। তাই অন্যবার ভিতরে বসে ইফতার করলেও এবার সাহস পাচ্ছি না। কিনে নিয়ে যাচ্ছি।”
এই এলাকার আরেক রেস্তোরাঁ এ ওয়ান ফুড আন্ড রেস্টুরেন্টের বিক্রয়কর্মী সালেহীন বলেন, “ইফতারের আয়োজনের জন্য ঐতিহ্যবাহী এই বেইলি রোড।
“কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের পর অনেক রেস্তোরাঁ অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা সঠিক না থাকার কারণে বন্ধ রয়েছে। এজন্য এবার বেইলি রোডে ইফতারের তেমন জমজমাট নেই।”
সেখানে ইফতার কিনতে আসা রাসেল মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কিছুটা অবাকই হয়েছি এখানে এসে। অন্যান্য রোজায় এখানে অনেক ভিড়ভাট্টা থাকত। এবার তেমন কিছুই নেই।”