ভারত ভিসা দিচ্ছে কম। বিমানবন্দরে কড়াকড়ি বাড়ায় ভিসা থাকলেও যাচ্ছেন না অনেকে। ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রীও পাচ্ছে না এয়ারলাইন্স কোম্পানি।
Published : 11 Sep 2024, 03:10 PM
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাস ভিসা কার্যক্রম সীমিত করার প্রভাব পড়েছে ঢাকা থেকে ভারতের বিভিন্ন রুটে চলা এয়ারলাইন্সগুলোর ব্যবসায়।
যাত্রী খরায় বেশিরভাগ দেশি কোম্পানি ফ্লাইট কমিয়েছে, কোনো-কোনো রুটে ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণাও এসেছে।
এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, ভিসা না পাওয়ায় যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না; আবার ভিসা থাকলেও বিমানবন্দরে ‘হয়রানি; বা আটকের ভয়ে অনেকে ভারতমুখী হচ্ছেন না।
ঢাকা থেকে কলকাতা রুটে সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইট পরিচালনা করত বেসরকারি এয়ারলাইন্স নভোএয়ার। তারা ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে তিনে নামিয়েছে। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্তও হয়েছে।
এই রুটে স্বল্প দূরত্বে ওড়ার উপযোগী এটিআর ৭২-৫০০ এয়ারক্রাফট দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করে নভোএয়ার, যার ধারণক্ষমতা ৭০ জন। বর্তমানে এর অর্ধেক আসনই ফাঁকা যাচ্ছে তাদের।
নভোএয়ারের হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস মেসবাউল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফ্লাইটগুলোতে যাত্রী অর্ধেকেরও কম। এজন্য কলকাতা রুটে ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার ফ্লাইট চালু করা হবে।”
ভারতীয় ভিস্তারা এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশে টিকেট বিক্রি করে এয়ারওয়েজ নামের একটি ট্রাভেলস কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির ডিজিটাল মার্কেটিং কর্মকর্তা আবদুল মোত্তালিব বলেন, “মানুষ ভিসা না পেলে যাবে কীভাবে?”
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ভারতের বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, ভারতের ভিস্তারা এয়ারলাইন্স, এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো।
সংস্থাগুলো ঢাকা থেকে কলকাতা, দিল্লি, চেন্নাই ও মুম্বাই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট সরকার পতন হলে দেশত্যাগ করেন টানা সাড়ে ১৫ বছরের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকার পতনের পরপর ভিসা কার্যক্রম বন্ধ রাখে ভারত। এরপর সীমিত আকারে কার্যক্রম চালু শুরু হলেও ভিসাপ্রাপ্তির সংখ্যা অনেক কম।
ঢাকা থেকে কলকাতা রুটের ভাড়া এয়ারলাইন্সভেদে ১২ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। যাত্রী কম হওয়ায় পরিচালন ব্যয় তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা-কলকাতা রুটে সপ্তাহে ফ্লাইট সংখ্যা ১৪টি থেকে কমিয়ে সাতে নামিয়েছে। একই হারে কমেছে ঢাকা-চেন্নাই ও ঢাকা-দিল্লি ফ্লাইট সংখ্যাও।
বিমানের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকা থেকে কলকাতা, চেন্নাই ও দিল্লি রুটে ধারণক্ষমতার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে। বাকি সিটগুলো ফাঁকা যাচ্ছে। তবে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার ভিসা পাওয়া যাচ্ছে, তাই ফেরার রুটে কিছুটা বেশি যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে।”
কলকাতা রুটে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সপ্তাহে ২১টি ফ্লাইট পরিচালনা করত। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ১৪টি এবং চট্টগ্রাম থেকে সাতটি ফ্লাইট যেত। বর্তমানে তারা ছয়টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ঢাকা-চেন্নাই রুটে সপ্তাহে ১১টি ফ্লাইট থেকে কমিয়ে পাঁচটি করা হয়েছে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ শখার মহাব্যবস্থাপক মো.কামরুল ইসলাম বলেন, “জুলাইয়ের কারফিউয়ের সময় থেকেই যাত্রী ভাটা শুরু হয়। সেটি এখনও অব্যাহত আছে। আমরা চাই এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটুক।”
ভিসা কার্যক্রম সীমিত করায় বিপাকে পড়েছেন ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীরা।
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার জাকির হোসেনের মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়েছে সম্প্রতি। চিকিৎসার জন্য তিনি যেতে চেয়েছিলেন ভারতের চেন্নাইয়ের ভেলোরে ক্রিস্টিয়ান মেডিকেল কলেজ (সিএমসি) হাসপাতালে।
ভিসা না পেয়ে জাকির বলেন, “আমার মায়ের অবস্থা বেশি ভালো না। অগাস্টে ভিসার জন্য আবেদন করি, কিন্তু পাইনি। কেন পেলাম না, সে বিষয়েও দূতাবাস থেকে কিছু জানায়নি।”
কলকাতার নিউমার্কেটে কেনাকাটা ও ব্যবসায়ের কাজে প্রায় প্রত্যেক মাসেই যেতেন ঢাকার ধানমন্ডির আফজাল হোসেন। জুলাইয়ের পর তিনিও আর যাননি।
আফজাল বলেন, “এখন বিমানবন্দরে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে, জেরা করা হয়, এটা আমার জন্য বিব্রতকর। এজন্য আপাতত যাওয়া বন্ধ। শুনেছি ভিসার প্রসিডিউরও ঝামেলাপূর্ণ হয়ে গেছে। যদিও আমার ভিসার মেয়াদ আছে এখনও।”
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা বলেন, সাবেক সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকেই আকাশপথে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেছেন, করছেন। এদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। ফলে, বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
তার ভাষ্য, “বিমানবন্দরে বোর্ডিং পাস থেকে শুরু করে ইমিগ্রেশন এবং বোর্ডিং গেটে প্রত্যেক যাত্রীর কাগজপত্র ও পরিচয় অধিকতর যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পেশাজীবীদের থেকে আগে নির্বিঘ্নে যেতে পারা অনেক ব্যবসায়ী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদেরও জেরা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ঝামেলা এড়াতে যাত্রীরা অনেকেই প্রয়োজন থাকলেও এই মুহূর্তে ভারতমুখী হচ্ছেন না।”