বাণিজ্যিক উৎপাদনের চিন্তাও নেই। অথচ পোলট্রি খাতে সরকারের হাতিয়ার হতে পারত প্রতিষ্ঠানগুলো।
Published : 23 May 2024, 01:47 AM
সরকারি মুরগির খামারগুলো যেন ‘শো কেস’; এগুলো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চলে না, বাজারে প্রভাব ফেলার মত সক্ষমতা থাকলেও কাজে আসছে না সম্ভাবনা।
খামারগুলোতে বাচ্চা উৎপাদন ও বিক্রি, ডিম বিক্রি এমনকি খাবার তৈরিরও ব্যবস্থা আছে। ডিম ও মুরগির বাচ্চার দামও তুলনামূলক কম। তবে দীর্ঘ সময় ধরে এসব অবকাঠামো পড়েই থাকছে, কাজে লাগানো হচ্ছে না।
ক্রমেই পোলট্রি খাত বেসরকারি বড় কোম্পানির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার যে অভিযোগ আসছে, সেখানে সরকারি খামারগুলো হতে পারত সরকারের হাতিয়ার।
কিন্তু সরকারি সংস্থার ‘বাচ্চা হয়ে থাকার’ আগ্রহের কারণেই এটি সম্ভব হচ্ছে না। যদিও তারা নিজেদের বলতে চায় ‘রোল মডেল’ বা আদর্শ, তবে সেই আদর্শ কী, সেটি স্পষ্ট নয়।
আগ্রহ না থাকায় খামারগুলোতে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেই, উল্টো বছর বছর ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে সেগুলো। ভেঙে পড়ছে শেড, নষ্ট হচ্ছে বাচ্চা উৎপাদনের ইনকিউবেটর, উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ তো নেইই, উল্টো তা কমতে কমতে তলানিতে নেমেছে।
বাচ্চা কিনতে আগ্রহীদের অর্ডার দিয়ে এক বছরও বসে থাকতে হচ্ছে। এসব কারণে খামারগুলোর সম্ভাবনা আলোচনাতেও আসতে পারছে না। এই সুযোগে বাচ্চা ও মুরগি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
আবার খামারের শেডগুলো ভেঙে পড়ছে, কোথাও কোথাও অকেজো হয়ে পড়েছে। আয় করে চলার কোনো বাধ্যবাধকতা বা শর্ত না থাকায় গা করছে না কর্মীরাও।
অথচ মিরপুরে সরকারি কেন্দ্রীয় খামারটিতেই উদ্ভাবিত হয়েছে সোনালি মুরগির মত জনপ্রিয় জাত। এখন সেটি চলছে যেনতেনভাবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে সরকারি ২৮টি খামারের কোনোটির অবস্থাই মিরপুরের কেন্দ্রীয় খামারের চেয়ে ভালো কিছু নয়।
অন্তত ১৫টি খামারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এগুলোর অধিকাংশ ‘কঙ্কাল’ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কোথাও-কোথাও মুরগি ও বাচ্চা পালনের শেডগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোথাও বা রয়েছে জনবল সংকট। সব মিলিয়ে নিজেদের সক্ষমতা অনুযায়ী খামারগুলো কতখানি কাজে আসছে, সেটি নিয়ে ‘প্রশ্ন’ আছে।
খামারিদের দুটি সংগঠনের নেতারা বলছেন, সরকারি খামারগুলো বাণিজ্যিকভাবে চললে প্রান্তিক খামারিরা সেখান থেকে কম দামে বাচ্চা পেতেন, সেই সঙ্গে বেসরকারি করপোরেট খাতে চাপ তৈরি হতে পারত।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেয়াজুল হক বলছেন, তারা সংস্কার করবেন, তবে বাণিজ্যিক কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।
অধিদপ্তরের এই অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আফতাবুজ্জামান বলেছেন, সরকারকে নীতিমালা পাল্টানো দরকার।
কেন্দ্রীয় খামারেই হতাশার চিত্র
রাজধানীর মিরপুরে সরকারি কেন্দ্রীয় মুরগি খামার ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে নতুন শেড নেই বললেই চলে।
৪৩টি শেডের মধ্যে সচল কেবল ২২টি। বাকি ২১টি ক্ষয়প্রাপ্ত বা অকেজো হয়ে গেছে। এর বাইরে পরিত্যক্ত শেডের সংখ্যা ৮টি। দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় সেগুলোতে আগাছা জন্মেছে।
খামারের পরিচালক মো. বজলুর রহমান অকপটে নিজেদের অপারগতার কথা স্বীকার করে নিলেন। বললেন, জাতীয় চিড়িখানার পার্কিং তৈরির সময় খামারের কয়েকটি শেড ভেঙে ফেলা হয়েছে।
খামারের ছয়টি ইনকিউবেটরের (বাচ্চা ফোটানোর যন্ত্র) মধ্যে তিনটিই নষ্ট। সম্প্রতি যশোর থেকে একটি ইনকিউবেটর নিয়ে আসা হয়েছে।
এক সময় এখানে মাসে প্রায় ২ লাখ বাচ্চা উৎপাদন করা হত, এখন ফোটানো হয় ৪০ হাজার, যদিও ডিম উৎপাদন হচ্ছে গড়ে ৮০ হাজার। প্রশিক্ষণ কক্ষ, স্টাফ রুমসহ অন্যান্য অবকাঠামোগুলোর অবস্থাও জরাজীর্ণ।
বজলুর আক্ষেপ করে বলেন, “যখন এখানে প্রথম আসি, এই অবস্থা দেখে আমার খুব কষ্ট লেগেছিল। শেডগুলোতে জোড়াতালি দিয়ে কাজ চলছিল। পরে কিছু-কিছু শেড মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করেছি।
“আমরা চাই অটোমেশন। ক্লাইমেট স্মার্ট শেড। কিছুদিন আগেও যে দাবদাহ ছিল, তখন মুরগি মারা যাচ্ছিল। এটা আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নাই। পরে টিনের চালে পাটের বস্তা দিয়ে বাইরে থেকে দুজন লোক ভাড়া করে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এটা তো আর যুগোপযোগী কোনো ব্যবস্থা না।”
কী ধরনের শেড চাইছেন তার ব্যাখ্যা দিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, “জলবায়ুর যে কোনো ভারসাম্যহীনতায়ও শেডগুলো যেন নিরাপদ হয়, সেই রকম কিছু করা। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে আমি যেন কমাতে পারি, আর্দ্রতার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, এ রকম পদ্ধতি থাকতে হবে, তা না হলে মুরগি টেকানো কঠিন হবে।”
খামারটির পোলট্রি জেনেটিস্ট বিবেক চন্দ্র রায় জানান, ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই ২০ দশমিক ৪৩ একরের খামারটি ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখানে ডিম উৎপাদন, বাচ্চা ফোটানো, খাদ্য উৎপাদন সবই হয়।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও খামারটির পৃষ্ঠপোষকতা করত। খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির গায়ে এখনও এফএওর লোগো দেখা যায়। তবে, এসব মেশিন প্রায় ৫০ বছরের পুরানো।
অর্থাৎ, মুরগির বাচ্চা ও খাবারের দাম ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠার মধ্যে যৌক্তিক দাম নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি এই খামারটি সেই প্রশ্নের জবাব দিতে পারত, তৈরি করতে পারত উদাহরণ।
অন্য যে ২৮টি খামার আছে, সেগুলোতেও যদি একই ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলা যেত, তাহলে এই বাজারে তার একটি প্রভাব পড়তে পারত। কিন্তু সেটি বিশেষ উদ্যোগের বিষয়।
ঢাকার বাইরের চিত্র কেমন?
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, মিরপুরের কেন্দ্রীয় খামারটি ছাড়া সারাদেশে আরও ২৭টি খামার আছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে খামারের সংখ্যা দুটি। এগুলোর একটি পাহাড়তলী ও অপরটি সীতাকুণ্ডে। ঢাকাতেও মিরপুরের পাশাপাশি সাভারে আছে একটি খামার।
বাকি ২৪ জেলায় খামার আছে একটি করে। উত্তরে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও,রংপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জে; দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে পশ্চিমাঞ্চলে যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও বরিশালে; মধ্যাঞ্চলে টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ,মানিকগঞ্জ ও জামালপুরে; উত্তর পূর্বে সিলেটে এবং চট্টগ্রাম বিভাগে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও রাঙামাটিতে বাকি খামারগুলো স্থাপন করা হয়।
এর মধ্যে ১৫টি খামারের কর্মীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলছেন, এই খামারগুলোতে অন্তত ৪৯টি শেড অকেজো হয়ে গেছে। সচলগুলোর বেশিরভাগই জরাজীর্ণ। অন্তত ১৩টি খামারে জনবল সংকটের কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
টাঙ্গাইলের সরকারি মুরগি প্রজনন খামারের পোলট্রি ডেভেলপমেন্ট অফিসার (পিডিও) মো. এনামুল হক বলেন, “আমাদের এখানে ১১টি শেড আছে। এর মধ্যে ৮টি মোটামুটি সচল। আর বাকি ৩টি অকেজো। সচলগুলোর অবস্থাও জরাজীর্ণ। যে ইনকিউবেটর আছে, সেট্র অবস্থা খুব একটা ভালো না।”
জামালপুরের মুরগি প্রজনন খামারের ব্যবস্থাপক মো. দিদারুল আহসান বলেন, “আমাদের এখানে মাত্র একটি শেড আছে। সেটার অবস্থাও ভালো নয়। কোনোমতে কাজ চলছে।”
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের খামারটির পিডিও সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তাদের ১৪টি শেডের মধ্যে অন্তত চারটি অকেজো।
রাঙামাটির মুরগি প্রজনন খামারের ব্যবস্থাপক পলি রাণি ঘোষ বলেন, “আমাদের শেড আছে চারটি। দুটি একেবারেই অকেজো। বাকি দুটির অবস্থাও ভালো নয়। জেলা পরিষদ থেকে একটি শেড করে দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি হয়নি। লোকবলেরও সংকট আছে।”
রংপুরের খামারের পিডিও মো. আশরাফুল আলম বলেন, তাদের ১৯টি শেডের মধ্যে তিনটি অকেজো। বাকিগুলোর অবস্থাও সুবিধার নয়।
যে উদ্দেশ্যে গড়া
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ১৯৩৭ সালে ব্রিটিশ সেনাদের মুরগি ও ডিমের চাহিদা মেটাতে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জে প্রথম সরকারি মুরগির খামার গড়ে তোলা হয়েছিল। এরপর নানা সময়ে আরও সাতটি খামার গড়ে তোলা হয়।
পরে ১৯৭৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত সরকারি উদ্যোগে ২০টি মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা করা হয়। তারপর থেকে গত ৩০ বছরে দেশে কোনো সরকারি মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা হয়নি।
মিরপুর কেন্দ্রীয় সরকারি মুরগির খামারের কর্মকর্তা বিবেক চন্দ্র রায় বলেন, “এক সময় ব্র্যাকের ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র চিক রেয়ারিং ইউনিট ছিল। সরকারের সঙ্গে ওদের চুক্তি ছিল। ওখান থেকে ওরা খাদ্য, বাচ্চা এগুলো নিয়ে যেত। এখন আমাদের নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা উৎপাদন করি।
“মূলত আমরা ন্যায্যমূল্যে প্রান্তিক পর্যায়ের সম্বলহীন গরিব মানুষদের ব্যক্তিগতভাবে পালনের জন্য মুরগির বাচ্চা দিই। এতে তারা নিজেদের আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি মুরগির বাচ্চা বা ডিম বিক্রি করে আর্থিকভাবে কিছুটা লাভবান হন। পাশাপাশি সরকারি খামার দেখে মানুষ যেন বাণিজ্যিকভাবে খামার গড়ে তুলতে উৎসাহী হয়। আরেকটা উদ্দেশ্য হল, উন্নত জাতের মুরগির বিশুদ্ধ জাত সংরক্ষণ করা।”
খামারগুলোতে সোনালি, হোয়াইট রক, ফাওমি, রোড আইল্যান্ড রেড (আরআইআর), বিপিআর ও এলএস— এসব মুরগির জাত সংরক্ষণ করা হয়।
এই খামারগুলো নিয়ে আলাদা কোনো ওয়েবসাইট নেই। বা বিশেষ কোনো তথ্য সরাসরি পাওয়ার সুযোগ নেই।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে ২০টি হাঁসের খামার রয়েছে, সেগুলোতেও একই চিত্র।
এই হাঁস-মুরগির খামারগুলোতে খাদ্য, ওষুধ, বিদ্যুৎ, পানি, প্রভৃতি খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩৩ কোটি ১৫ লাখ টাকার কিছু বেশি।
বাচ্চার দাম কম, তবু সুফল পায় না খামারি
গত দুই বছর ধরে ব্রয়লার মুরগির দামে লাফের পেছনে খামারিরা বাচ্চার দামের বিষয়টি সামনে এনেছেন। তারা বলেছেন, বাচ্চার দাম কখনো কখনো একশ টাকাও ছুঁয়ে ফেলে।
মিরপুর কেন্দ্রীয় খামারের পরিচালক বজলুর রহমান বলেন, “নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি এই সময়ে অর্থাৎ শীতকালে এক দিনের বাচ্চা ১২ টাকা করে বিক্রি হয়, আর অন্য সময়ে ১৫ টাকা করে বিক্রি হয়।”
আর বাচ্চা ফোটানোর উপযোগী ডিম গড়ে সাড়ে ৭টাকা এবং বাচ্চা ফোটানোর অনুপযোগী খাবার ডিম ৮ টাকা করে বিক্রি হয়।
বাচ্চার দামে আকাশ পাতাল পার্থক্য থাকলেও তা বাজারে আলোচনা তৈরি করতে পারেনি এ কারণে যে, সরকারি খামার এত অল্প পরিমাণ বাচ্চা সরবরাহ করে, যা বড় পুকুরে এক মগ পানি ফেলার মতও না।
সরকারি খামারে যে বাচ্চা বিক্রি হয়, সে তথ্যও কম মানুষই জানে। আর জানলেও সেই বাচ্চা কিনতে পারার নিশ্চয়তা নেই।
মিরপুরের কেন্দ্রীয় সরকারি খামারটির পোলট্রি জেনেটিস্ট বিবেক চন্দ্র রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রান্তিক মানুষ তাদের এখানে যে মানের বাচ্চা পাবে, অন্য কোথাও এত ভালো মানের বাচ্চা তারা পাবে না। সেজন্য আগামী বছর পর্যন্ত মানুষ বাচ্চা চেয়ে সিরিয়াল দিয়ে রেখেছে।”
খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারি খামারগুলো থেকে যদি প্রান্তিক খামারিদের বাচ্চা সরবরাহ করা যেত, তাহলে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে হঠাৎ ডিম ও মুরগির দাম বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হত।
“স্বাভাবিকভাবেই আমরা এসব করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছি। সরকারি খামারগুলো এক্ষেত্রে এগিয়ে এলে এই সমস্যাটা থাকত না। কিন্তু তাদের সঙ্গে তো আমাদের সংযোগ নেই।”
খামারিদের আরেক সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজঅ্যাসোসিয়েশনের (বিপিআইএ) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এ কে ফজলুল হক বলেন, “প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে মুরগির বাচ্চার মূল্য নির্ধারণে একটা কমিটি করা হয়েছিল ২০১০ সালে। সেই কমিটির সদস্য আমিও। সেখানে লেয়ার মুরগির বাচ্চার দাম ৫৭ টাকা, আর ব্রয়লারের দাম ৫৫ টাকা নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু ৯০-১০০ টাকা দিয়েও বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি খামারগুলো এগিয়ে এলে এই সমস্যা সমাধান হয়ে যেত।”
বাণিজ্যিক উৎপাদনের চিন্তাও নেই
পোলট্রি শিল্পে বাচ্চা ও ডিমের দাম নির্ধারণে উদাহরণ তৈরির সক্ষমতা থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে বাচ্চা উৎপাদন বা সরবরাহের পরিকল্পনা নেই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রেয়াজুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের যে খামারগুলো আছে, এগুলো বহু পুরনো। একটা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, শিগগিরই সেটি অনুমোদন হবে। সেটি অনুমোদন হলে এগুলোর চেহারা পালটে যাবে।
“দেশে বড় যে খামারগুলো দেখছেন, এগুলোও কিন্তু আমাদের দেখেই উৎসাহিত হয়েছে। অন্য খামারগুলোও আমাদের দেখে উৎসাহিত হবে এটাই আমাদের লক্ষ্য। বাণিজ্যিক উৎপাদন আমাদের লক্ষ্য নয়।”
কেন এই চিন্তা নেই, সে প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়েই ‘ধন্যবাদ’ বলে ফোন কেটে দেন এই কর্মকর্তা।
তবে খামারগুলোর বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আফতাবুজ্জামান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এই খামারগুলো লোকসানে থাকে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
“চাইলেই বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব। সেজন্য খামারগুলোর নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে হবে। এদের হ্যাচারিগুলোর সক্ষমতা কম। বাচ্চা উৎপাদন বাড়াতে হলে ডিম উৎপাদন বাড়াতে হবে।”