মহাকাশে প্রায় অফুরন্ত জায়গা আছে। পাশাপাশি, সেখানে অভিনব শক্তি ও কুলিং প্রযুক্তি ব্যবহারের অনেক সম্ভাব্য বিকল্প রয়েছে, যা পৃথিবীতে সম্ভব নয়।
Published : 24 Jun 2024, 05:22 PM
সাম্প্রতিককালে গোটা বিশ্বে রীতিমতো ঝড় তুলেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আর এ উদীয়মান প্রযুক্তি বিভিন্ন এমন অলৌকিক কাজও করছে, যা করতে বিশাল কম্পিউটিং সক্ষমতা প্রয়োজন।
এখন পর্যন্ত প্রযুক্তি শিল্পে ‘কম্পিউট’ নামে পরিচিত যে শব্দটির প্রচলন আছে, সেটির সম্পূর্ণ ব্যবহার দেখা গেছে শুধু মাটিতেই। তবে মহাকাশে এ সক্ষমতা ব্যবহারের কোনো অর্থনৈতিক কারণ আছে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন।
তবে এর প্রয়োজনীয়তা থাকার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন কেউ কেউ। এর কারণ, বিভিন্ন মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টার তৈরির প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি। তবে, তা কেন, সে কারণগুলো একবার দেখে নেওয়া যাক।
স্থলভিত্তিক ডেটা সেন্টারের তুলনায় স্পেসভিত্তিক ডেটা সেন্টার থাকার সুবিধা বেশি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট ইউনিভার্স টুডে। এর প্রথম ও সবচেয়ে স্পষ্ট সুবিধা হল, মহাকাশে প্রায় অফুরন্ত জায়গা আছে।
দ্বিতীয়ত, সেখানে অভিনব শক্তি ও কুলিং প্রযুক্তি ব্যবহারের অনেক সম্ভাব্য বিকল্প রয়েছে, যা পৃথিবীতে সম্ভব নয়।
তৃতীয়ত, তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে স্পেসভিত্তিক ডেটা সেন্টার ব্যবহার করলে বিভিন্ন মহাদেশের মধ্যে ডেটা স্থানান্তর সংশ্লিষ্ট সমস্যা কমে আসতে পারে।
ডেটা সেন্টারের ক্ষেত্রে অন্যতম সীমাবদ্ধতা হল জায়গা। আর এগুলো তৈরি করতে অনেক জায়গা লাগে। এমনকি যেসব এলাকায় এগুলোর প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি, সেইসব এলাকায় এগুলো গড়ে তোলার খেরচও অনেক ক্ষেত্রে বেশি। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, বিভিন্ন জনবহুল এলাকা।
এদিকে, ডেটা সেন্টার তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভবনভিত্তিক অবকাঠামোর জন্য বিশাল বাজেট থাকে টেক জায়ান্টদের কাছে, যা এদের কম্পিউটিং সক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শুধু বাড়তেই থাকে।
অন্যদিকে, মহাকাশে মডিউলার ডেটা সেন্টার বানালে, প্রতিটি উৎক্ষেপণের সঙ্গে সেগুলোতে বাড়তি কম্পিউটিং সক্ষমতা যোগ করার সুযোগ মিলবে, যা কোনো কোম্পানির হার্ডওয়্যারের উৎস ব্যপক বাড়িয়ে দেওয়ার ভালো উপায় হিসেবে কাজ করবে, তাও জায়গা নিয়ে কোনো সীমাবদ্ধতা ছাড়াই।
পাশাপাশি, ডেটা সেন্টারগুলো মহাকাশে থাকা বিভিন্ন অভিনব শক্তি ও কুলিং প্রযুক্তিতে প্রবেশের সুযোগও পাবে, যেখানে মহাকাশের অফুরন্ত ‘গ্রিন এনার্জি’ বা পরিবেশবান্ধব শক্তিকে সরাসরি বিভিন্ন সৌর প্যানেলে কাজে লাগানো যাবে।
আর আবহাওয়ার পরিস্থিতি বা পৃথিবীর ঘূর্ণন যেমনই হোক না কেন, যথেষ্ঠ উচ্চ কক্ষপথে থাকা ডেটা সেন্টার কার্যকর উপায়ে ব্যবহারের সুযোগ মিলবে এতে।
এক্ষেত্রে ‘পাওয়ার স্যাটেলাইট’ও একই ধারণার ভিত্তিতে চালিত হয়। আর এ ধরনের প্রযুক্তি এরইমধ্যে মহাকাশে চালু থাকলেও এখনও ডেটা সেন্টারের বেলায় এর প্রয়োগ এখনও হয়নি।
অনেক ডেটা সেন্টারে ওয়াটার কুলিং সিস্টেমও ব্যবহার করা হয়। তবে, কক্ষপথে এমন ভারী মাত্রায় পানি পাঠানো বেশ খরচসাপেক্ষ হলেও মহাকাশে এমন অনেক গ্রহাণু আছে, যেগুলোতে এমন লাখ লাখ ডেটা সেন্টারে সরবরাহ করার মতো পর্যাপ্ত পানি রয়েছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণাপত্রে এ প্রক্রিয়াটি খতিয়ে দেখেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার গবেষকরা, যেখানে তারা পৃথিবীর কাছাকাছি অঞ্চলগুলোয় এমন বেশ কিছু গ্রহাণু খুঁজে পেয়েছেন, যেগুলো বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে এইসব ডেটা সেন্টার চালানোর মতো পানি সরবরাহ করতে পারবে।
এমনকি পৃথিবীর এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশ হয়ে ডেটা পাঠানোর জটিলতা ছাড়াই দুটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গার মধ্যে দ্রুত ডেটা আদান প্রদানের সম্ভাবনা দেখাচ্ছে মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টার।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, দুটি কম্পিউটারকে সরাসরি সংযুক্ত করা সহজ, যদি এদের একই ‘রিলে পয়েন্ট’ একই দৃষ্টিসীমার মধ্যে থাকে। আর একইভাবে কাজ করতে পারে পৃথিবীর চারপাশ প্রদক্ষিণ করা ডেটা সেন্টার।
আর ওই ডেটা সেন্টার ব্যবহার করে দুটি জায়গার মধ্যে তথ্য আদান প্রদান করা সম্ভব হবে, যা অনেকটা বর্তমানে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রযুক্তির মতো কাজ করবে। আর এর মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানে দেরিতে তথ্য পৌঁছানোর সমস্যাটিও সমাধান করা যাবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইউনিভার্স টুডে।
তবে এক্ষেত্রে কিছু বাধাও আছে। যেমন- আধুনিক স্থলভিত্তিক প্রযুক্তির তুলনায় স্যাটেলাইট দিয়ে ডেটা স্থানান্তরের গতি কিছুটা ধীর। তবে স্টারলিংকের মতো কোম্পানিগুলোর প্রচেষ্টায় এ প্রযুক্তি প্রতি বছরই ক্রমশ উন্নত হচ্ছে।