রুই মাছের কেজি সাড়ে পাঁচশ টাকা শুনে কারওয়ানবাজারে বিক্রেতাকে এক ক্রেতা বলেন, “এত দাম চাইলে কিনব কেমনে, মামা?"
Published : 25 Aug 2023, 05:21 PM
পেঁয়াজ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে বেড়েই চলেছে মাছের দাম।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঢাকার কারওয়ানবাজারে মোটামুটি বড় আকারের রুই মাছ সাড়ে পাঁচশ টাকা কেজি দাম চাওয়ার পর বিক্রেতার দাবি, তিনি ‘কিছুটা কমেই’ দিচ্ছেন।
সরবরাহ বাড়ার পর ইলিশ মাছের দাম গত সপ্তাহে অনেকটাও কমলেও সেটি আবার বেড়ে গেছে কিছুটা।
ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্কারোপ করার পর থেকে এই পণ্যটির দামের কোনো স্থিরতা নেই। ভারতীয় পেঁয়াজের বাড়তি দর বাড়িয়ে দিয়েছে দেশি পেঁয়াজের দরও।
বর্ষায় সবজির বাজার প্রায় প্রতিবছরই তেঁতে থাকে, ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। পাড়া মহল্লায় ৬০ থেকে ১০০ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে, কারওয়ানবাজারে অবশ্য কিছুটা কম।
মাছের একটি দোকানে মাঝারি সাইজের রুই মাছের কেনার জন্য দোকানি মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে দরদাম করছিলে এক ক্রেতা। দাম শুনে তিনি বললেন, “এত দাম চাইলে কিনব কেমনে, মামা?"
বিক্রেতা হেসে বললেন, “৭০০ টাকা কইরা বেচি, তবু ৫৫০ টাকায় বেচতে চাইতেছি। আপনি লাগলে মার্কেটটা দেইখা আমারে টাকা দিবেন...ডিম ছাড়া মাছের অনেক দাম।"
বছরের পর বছর ধরে স্বল্প আয়ের মানুষের পাতে উঠা পাঙ্গাশ আর তেলাপিয়ার কেজি এখন দুইশ টাকার বেশি। আকরে একটু বড় হলে নদীর পাঙ্গাশের কেজি ৮০০ টাকায় উঠছে।
মোহাম্মদ আলীসহ আরও কয়েকজন মাছ বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আকার ভেদে রুই মাছের কেজি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, ছোট কাতলার কেজি ২২০ টাকা, মাঝারি আকারের কার্প মাছের দাম ২৫০ টাকা থেকে শুরু।
কারওয়ানবাজারে আড়ৎ বলে সেখানে মাছের দাম কিছুটা কম। পাড়া মহল্লায় এখানকার তুলনায় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি।
মাঝারি সাইজের বাগদা চিংড়ির কেজি ৬২০ টাকায় আর বড় আকারের গলদা চিংড়ির কেজি দেখা গেল ১ হাজার ৫৫০ টাকা।
ছোট মাছের মধ্যে ঢেলার দামই দেখা গেল কম, কেজিপ্রতি ১২০ টাকা। ছোট চাপিলাও বিক্রি হয়েছে ১৫০ করে আর দেশি ছোট বেলে মাছের কেজি আড়াইশ।
মাছ বিক্রেতা সবুজ আলী চাষের শিং-এর দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং শোল মাছের দাম চাইছিলেন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।
তিনি বলেন, "দাম হালকা একটু বাড়তি। কারণ শুক্রবারের বাজারে কেজিতে ১০/২০ টাকা সবসময়ই বাড়ে।"
ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে শুনে বাজারে গিয়ে আক্কেলগুড়ুম ক্রেতাদের। কারওয়ানবাজারে ১ কেজির ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকা দরে।
যেগুলোর ওজন কিছুটা বেশি সেগুলোর দাম কেজিপ্রতি ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা। ৯০০ গ্রাম আকারের হলে দাম কেজিপ্রতি ১৪০০ টাকা।
ইলিশ বিক্রেতা মোহাম্মদ সালাম বলেন, " গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০০ থেইক্যা দেড়শ টাকা বাড়তি। দামটা বাড়ছে কারণ, আমদানি কম। যদিও এখন মাছের সিজন, কিন্তু ভোলা, চাঁদপুর, বরিশালের নদীতে ওই পরিমাণ মাছ নাই।"
আগের সপ্তাহে কেজিতে পাঁচ থেকে ছয়শ টাকা কমেছিল জাতীয় মাছটির দাম।
পেঁয়াজ আর সবজির কী চিত্র
মৌসুম শেষ হতে না হতেই এবার তুমুল আলোচনায় পেঁয়াজ। দাম ৩০ টাকা থেকে একশ টাকা ছাড়িয়ে যেতে এক মাসও লাগেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও ভারত রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর আবার শুরু হয় অস্থিরতা।
দোকানদার শাহজাহান মৃধা জানান, "দেশি পিঁয়াজের দাম গত সপ্তাহে ৭০-৭৫ টাকা ছিল। এ সপ্তাহে বেড়ে গেছে, ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। ইন্ডিয়ান পিঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা।”
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি বলছে, ভারতীয় পেঁয়াজ এদিন ৭৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে, গত সপ্তাহে দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।
এদিন রশুন বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়, আদা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২০০ টাকায়। জিরার দাম ১২০০ টাকা।
কারওয়ানবাজারে বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, উচ্ছে ৭০ টাকা, মূলা ৫০ টাকা, টমেটো ১১০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৫০ টাকা এবং আলু ৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। কাঁচকলার হালি ছিল ৩০ টাকা।
সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, " অনেক কিছুর দামই কমেছে। যেমন, কাঁচামরিচ। আবার ঢেঁড়স গত সপ্তাহে ৬০ টাকা ছিল, এ সপ্তাহে কমছে। টমেটো বিক্রি করতাম ১৪০ টাকায়।
“দামটা কম কারণ বাজারে এখন সবজির আমদানি (সরবরাহ) অনেক ভালো।”
চিনির বাজার
গত সপ্তাহে খোলা চিনির কেজিপ্রতি দাম ১৩৫ টাকা থাকলে এ সপ্তাহে কেজিপ্রতি চিনির দাম ১৩০ টাকায় নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন কারওয়ান বাজারের বিক্রেতারা।
কারা বলছেন, খোলা চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা কমলেও প্যাকেটজাত চিনির দাম আগের মতই কেজিপ্রতি ১৪০ টাকা, যদিও দাম কমানোর ঘোষণা এসেছে বেশ কিছুদিন আগে।
বিক্রেতা সারোয়ার হোসেন বলেন, "খোলা চিনি ১৩০/১৩৫ টাকায় দেওয়া যায়। কিন্তু প্যাকেট চিনি দেওয়া যায় না। কারণ প্যাকেট চিনির কেনা দাম গায়ের দামের চাইতে বেশি, আমরা তাইলে কেমনে কমে বেচব?
"কাস্টমার তো সেটা বুঝে না, তারা আইসা খোলা চিনির দামেই প্যাকেট চিনি চায়, ঝামেলা করে। আর আছে ভোক্তা অধিকার, দাম বেশি রাখলেই কেইস করে। সেজন্য আপাতত দোকানে প্যাকেট চিনি রাখাই বন্ধ করে দিছি।"
ফার্মের লাল ডিমের ডজন ১৫০ টাকা, সাদা ডিমের ডজন ১৪০ দরে বিক্রি হয়েছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। সোনালী মুরগির দাম আরও বেশি।
আটার দাম অবশ্য কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে। ২ কেজি প্যাকেট আটার দাম এখন ১১০ টাকা, সপ্তাহ দুয়েক আগেও তা ছিল ১৩০। ময়দার দুই কেজির প্যাকেটের দাম ১৩০ টাকা।
কিছুদিন আগে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা গেলেও কেটেছে সে সমস্যা। মানভেদে নাজিরশাইল পাওয়া যাচ্ছে ৬০ এবং ৮৫ টাকায়। মিনিকেটের দাম ৬০ থেকে ৬৮ টাকা। মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা কেজি দরে।
চাল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মহসিন বলেন, "মাঝে চালটা বাইরে পাঠাচ্ছিল, সেজন্য দামটা বেড়ে গেছিল।"