এজন্য আইন করতে সুরক্ষিত লেনদেন (অস্থাবর সম্পত্তি) বিল সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে।
Published : 21 Jun 2023, 01:01 AM
সোনা-রুপা, গাড়ি, ইলেকট্রনিক পণ্য, আসবাবপত্রের মতো অস্থাবর সম্পত্তিও বন্ধক রেখে ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হতে যাচ্ছে।
এজন্য আইন করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ‘সুরক্ষিত লেনদেন (অস্থাবর সম্পত্তি) বিল-২০২৩’ উত্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিলটি পরীক্ষা করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বিলটি উত্থাপনের আপত্তি জানালে কণ্ঠভোটে তা নাকচ যায়।
বিলটি উত্থাপনে আপত্তি জানিয়ে তিনি বলেন, “স্থাবর (জমি-বাড়ি) সম্পত্তি জামানত রেখে ঋণ নেওয়া হয়, এখানে ব্যাংকগুলো লুটপাটের আখড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিলটি ভালো, ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের জন্য এই আইন প্রয়োজন। কিন্তু এটি বিপর্যয় ডেকে আনবে। কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সেটা প্রশ্ন।
আইনটি কার্যকর হলে সরকার একটি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করবে। এই কর্তৃপক্ষ জামানতযোগ্য অস্থাবর সম্পত্তি অর্থায়ন বিবরণী নিবন্ধন, জামানত হিসাবে অস্থাবর সম্পত্তির ইলেকট্রনিক নিবন্ধন সংক্রান্ত ইলেকট্রনিক তথ্যভান্ডার পরিচালনা করবে।
বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, অস্থাবর জামানত রেখে ঋণ প্রদান ও গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি এবং ঋণদাতা ও ঋণগ্রহিতার লেনদেনের সুরক্ষা প্রদানের বিধানের জন্য আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী, জামানতযোগ্য অস্থাবর সম্পত্তি বলতে রপ্তানির উদ্দেশ্যে অথবা রপ্তানি আদেশ অনুযায়ী পণ্য প্রস্তুতের কাঁচামালকে বোঝানো রয়েছে। এটি প্রয়োজনীয় দলিল দ্বারা সমর্থিত ও সুরক্ষিত হতে হবে।
বিলে স্থাবর সম্পত্তি বলতে- ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গচ্ছিত স্থায়ী আমানতের সনদ, স্বর্ণ, রৌপ্য এবং অন্যান্য মূল্যবান ধাতুকে বোঝানো হয়েছে, যার ওজন ও বিশুদ্ধতার মানের স্বীকৃতি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে থাকতে হবে। স্থাবর সম্পত্তির তালিকায় আছে নিবন্ধিত কোম্পানির শেয়ার সনদ ও স্বীকৃত মেধাস্বত্ব পণ্য।
অস্থাবর সম্পত্তির তালিকায় আরও আছে- কোনো সেবার প্রতিশ্রুতি, যার বিপরীতে সেবাগ্রহীতার মূল্য পরিশোধের স্বীকৃত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। মৎস্য, গবাদিপশু, দণ্ডায়মান বৃক্ষ ও শস্যাদি, ফলজ উদ্ভিদ ও ঔষধি উদ্ভিদ। আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক পণ্য, সফটওয়্যার ও অ্যাপ- যার মূল্য প্রাক্কলন করা সম্ভব। যথাযথ কর্তৃপক্ষের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত যান্ত্রিক বা অযান্ত্রিক যানবাহন। যথাযথভাবে সংরক্ষিত কৃষিজাত পণ্য, প্রক্রিয়াজাত মৎস্য বা জলজ প্রাণি, বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিলে বর্ণিত রক্ষিত বন্যপ্রাণী ও উভচর ব্যতীত কোনো আয়বর্ধক জীবজন্তু (অজাত শাবকসহ)। সুরক্ষা স্বার্থ সৃষ্টিকারী যে কোনো ধরনের চুক্তি, বন্ধক, শর্ত সাপেক্ষে বিক্রয়, ডিবেঞ্চার, যে কোনো চার্জ বা কিস্তিতে ক্রয় চুক্তি।
পাশাপাশি এ আইনের অধীনে ‘সৃষ্ট সুরক্ষা স্বার্থের, সম্পূর্ণকরণ এবং কার্যকর সংক্রান্ত বিধানাবলি’ ছাড়া অন্য কোনো আইনে অনুমোদিত বা উহার অধীন কোনো পূর্বস্বত্ব, চার্জ বা অন্যান্য স্বার্থ।
এছাড়া কোনো হিসাবের হস্তান্তর বা স্বত্ব অর্পণ যদি এইরূপ হস্তান্তর বা স্বত্ব অর্পণ কোনো দায় এর কার্যসম্পাদন বা পরিশোধ নিশ্চিত না করে থাকে। সড়ক পরিবহন আইনের অধীন নিবন্ধন করা কোনো মোটরযান এবং জামিনদারের দখলে থাকা কোনো পণ্যের উপর সৃষ্ট সুরক্ষা স্বার্থ।
কোনো বার্ষিক ভাতা বা বীমা পলিসির অধীন সৃষ্ট কোনো স্বার্থ বা দাবি এবং জামানতের কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা লোকসান হইতে উদ্ভূত ক্ষতিপূরণ বা ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা হিসাবে কোনো বীমা পলিসির অধীন প্রাপ্য অর্থ বা অন্য কোনো আর্থিক অধিকারের বিপরীতেও ঋণ পাওয়া যাবে।
বিলে বলা হয়েছে, অর্থ ঋণ আদালতে সংজ্ঞায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা আইন অনুযায়ী বীমাকারী, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইনে সংজ্ঞায়িত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান এবং মানি ল্যান্ডার্স অ্যাক্টে সংজ্ঞায়িত মানি ল্যান্ডার এবং বিদ্যমান অন্য কোন আইনে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অস্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখে লেনদেন করতে পারবে।
এতে বলা হয়েছে, সুরক্ষা স্বার্থ সৃষ্টির ক্ষেত্রে জামানত হিসেবে ব্যবহারযোগ্য অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য প্রবিধান দিয়ে নির্ধারিত হবে।