এই সিনেমা কালার গ্রেডিং এবং সিনেমাটোগ্রাফির জন্যে সর্বোচ্চ পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা রাখে।
Published : 05 Jul 2023, 04:00 PM
এবার ঈদে হল ভর্তি দর্শকের মন কেড়ে নিল রায়হান রাফি পরিচালিত সুড়ঙ্গ।
প্রিয়তমা স্ত্রীর নানা বায়না রক্ষায় দিশাহারা মাসুদ ওরফে আফরান নিশো। এটা-সেটা করেও যখন স্ত্রীর চাহিদার কাছে হার হল তখন ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রী মাসুদ একটি সুড়ঙ্গ খুঁড়ে টাকাওয়ালা হবার রাস্তা তৈরি করে।
যারা ইতোমধ্যে ’ফ্রাইডে’ দেখেছেন তারা তমা মির্জার অভিনয়ের সক্ষমতা নিয়ে খুব ভালো জানেন। তার মেকাপ ছাড়া লুকে সাবলীল উপস্থাপন, চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাওয়া সুড়ঙ্গ সিনেমায় দারুণ ভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
সিনেমা বলতে আমরা অনেকেই বুঝি জাঁকজমকপূর্ণ উপস্থাপন। কিন্তু চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেকে কখন কতটুকু মেলে ধরা জরুরি তমা তা রপ্ত করেছেন। বড় পর্দায় তিনি কেবল নায়িকা সুলভ না হয়ে দক্ষ অভিনয়শিল্পী হয়ে উঠেছেন, যা আমার ভালো লেগেছে।
যাকে ঘিরে এতো আয়োজন, সেই আফরান নিশো নিরাশ করেননি একদম। নাটকের অভিনেতারা সিনেমায় এলে দর্শকের মন কাড়তে সক্ষম হন না এমন কথা কেউ কেউ বলবেন। কিন্তু নিশোর আগমন এই সিনেমায় এতটাই দুর্দান্ত ছিল যে হল ভর্তি দর্শক আনন্দে হই হই করে উঠেছেন।
বহু বছর পর বড় পর্দায় একজন আগাগোড়া নায়কের আবির্ভাব ঘটতে দেখা গেল। ময়নাকে দেখে তার মইসহ পড়ে যাবার দৃশ্য অসাধারণ রোমান্টিক লেগেছে।
মাসুদ চরিত্রের নানা উত্থান-পতনের সঙ্গে নিশোর ভেঙ্গেচুড়ে আবার স্বাভাবিক হয়ে থাকা গল্পের শেষ দৃশ্য পর্যন্ত ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। বড় পর্দায় তার অভিনয় ভালো না লাগার কোনোই কারণ নেই।
লাইফ ফ্রম ঢাকা দিয়ে দর্শক নন্দিত হয়েছেন মোস্তফা মনোয়ার। ময়নার সাথে পরকীয়ায় ব্যস্ত জহির, সুন্দরী মেয়ে দেখলেই পা এগিয়ে দেওয়া জহির চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি সুড়ঙ্গ সিনেমাতে।
তবে এতো এতো বোল্ড দৃশ্য থাকবে তা সুড়ঙ্গ সিনেমায় কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। ময়না আর জহিরের বেশ কিছু খোলামেলা অন্তরঙ্গ দৃশ্য আমার কাছে আরোপিত মনে হয়েছে।
বিরতির পর সিনেমার আসল টুইস্ট শুরু হয়। ব্যাংকের ম্যানেজার এবং তার ড্রাইভার চরিত্রের অনেকগুলো দৃশ্য ফ্ল্যাশব্যাকে খুব তাড়াহুড়ো করে দেখানো হয়েছে বলে মনে হল। বরং কিছু বোল্ড সিন কমিয়ে ব্যাংকের টাকা কীভাবে সড়ানো হল সেসব বিস্তারিত দেখালে সাধারণ দর্শক হিসেবে আমি আরও আনন্দ পেতাম।
জহির চরিত্রে মোস্তফা তার সেরা দিয়েছেন। জনতার হাতে মার খাওয়া পর তার প্রতি দর্শকের মায়া জন্মায়নি বরং তার করুণ পরিণতি সবাইকে হাসিয়েছে।
মাসুদের ব্যাংক সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। তাকে ব্যাংক সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে ব্যাংকের ম্যানেজারের ড্রাইভার। এখানে ম্যানেজার হিসেবে অশোক ব্যাপারি এবং তার ড্রাইভার চরিত্রে মনির আহমেদ শাকিলের যথেষ্ট কাজ ছিল, কিন্তু পর্দায় পুরো বিষয় ফ্ল্যাশব্যাকে দেখানো হয়েছে। যারা এতো বড় অংকের টাকা ভল্ট থেকে নেই করে দিল তাদের অবস্থান কেন পর্দায় এত কম তা নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন থেকে গেল।
আমার চোখে এর কারণ, সিনেমার প্রথম অর্ধেক চলে গেছে ময়না আর মাসুদের বিয়ে, সংসার আর পরকীয়া দেখাতে দেখাতে।কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে যখন রায়হান রাফী সমস্ত চরিত্র এক করতে গিয়েছেন তখন মনে হচ্ছে এডিট করতে গিয়ে নিশোকে রাখতে অনেক বড় বড় চরিত্র ফেলে দিয়েছেন।
সিনেমার একেবারে শেষের দিকে দুর্দান্ত নাটকীয় এন্ট্রি করেছেন সুঅভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম। চট্রগ্রামের ভাষায় মজার মজার সংলাপ দর্শককে বেশ বিনোদন দিয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা চরিত্রে দারুণ মানিয়েছে তাকে। বিশেষ করে ময়নাকে যখন তিনি জেরা করেন তখন তার চোখে-মুখে ভীষণ উত্তেজনা চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছেন এই দক্ষ অভিনয়শিল্পী।
নুসরাত ফারিয়া এসেছেন, নেচেছেন, দেখিয়েছেন এবং জয় করেছেন। আইটেম গানে শতভাগ সফল তিনি।
এই ফাঁকে বলে রাখি এই সিনেমা কালার গ্রেডিং এবং সিনেমাটোগ্রাফির জন্যে সর্বোচ্চ পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা রাখে বলে আমার বিশ্বাস। রায়হান রাফীর প্রত্যেকটি কাজে ন্যাচারাল লুক থাকে। সুড়ঙ্গ সেদিক থেকে যথেষ্ট আরামদায়ক ছিল দর্শকের চোখের জন্যে।
নামকরণ হিসেবে সুড়ঙ্গ একেবারেই যুতসই। পোশাক এবং মেকআপ নিয়ে যারা সুড়ঙ্গ টিমে কাজ করেছেন তারা ধন্যবাদ পাবার যোগ্য।
মোদ্দা কথা, সুড়ঙ্গ সব মিলিয়ে একটি ব্যবসায়িক সফল সিনেমার তালিকায় নাম লেখানোর যোগ্যতা রাখে।
রায়হান রাফি মূল চরিত্রকে সুপার হিরো বানিয়ে পার্শ্ব চরিত্রগুলোকে ভিলেন বানিয়েছেন। আর দর্শকের চোখে সবচেয়ে বড় ভিলেন হিসেবে পর্দায় আবির্ভূত হলেন গ্রামের সাধারণ মেয়ে ময়না চরিত্রে তমা মির্জা । অর্থ্যাৎ পরাণ সিনেমার পর আবার একটি নারী চরিত্র খল হিসেবে পেল দর্শক।
আমার তাই পরিচালক রায়হান রাফীকে বলার ছিল, পরাণ আর সুড়ঙ্গে মেয়েদের যতটা নেগেটিভ দেখানো যায় দেখিয়ে ফেলেছেন; এবার নতুন কোনো সিনেমায় মেয়েদের অসাধারণ সৌন্দর্যমণ্ডিত মানবীয় রূপটি উন্মোচন করবেন সেই প্রত্যাশা রেখে গেলাম।
আপনার নিবন্ধিত ইমেইল থেকে অপ্রকাশিত লেখা (ইউনিকোডে)/ছবি/ভিডিও আকারে নাগরিক সংবাদ পাঠান [email protected] ঠিকানায়।
নিবন্ধিত নাগরিক সাংবাদিক হতে আপনার নাম (বাংলা ও ইংরেজিতে), ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেইল আইডি এবং ছবি [email protected] ঠিকানায় ইমেইল করুন।