Published : 16 May 2017, 03:03 AM
"আপনের মালিক দিলদার সাহেবের ছেলে ও তার দলবল বনানীর একটা হোটেলে ধর্ষণকান্ড ঘটিয়েছে" – এটা আমরা সবাই কমবেশি জানি। কিন্তু ৫ জন আসামীর মধ্যে ২জনকে ধরার পরই মূল ধারার মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়াতে একধরণের সন্তুষ্টি দেখা যাচ্ছে। অনেকে আবার এর ক্রেডিটও নিচ্ছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, কেউ কেউ যে 'চটি লিখতেও পারে' সেটাও দেখিয়ে দিয়েছেন এই সুযোগে। এবিষয়ে বিশিষ্ট ব্লগার আইরিন সুলতানা বলেছেন-
এই বঙ্গভূমিতে, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, হাবা-গোবা, চালাক-চতুর, জাতি-ধর্ম নির্বিষে যে রসময়ের একজন একনিষ্ঠ পাঠক জাতি তা আবারো প্রমাণ করেছে। তা হোক-
আমি যে বিষয়ে লিখতে শুরু করেছিলাম, সেটা হচ্ছে-এই মামলার মিডিয়া ট্রায়াল ও আলু পোড়া নিয়ে। দেখতে পাচ্ছি মিডিয়াই উপযাজক হয়ে এই ঘটনায় কে অপরাধী, আর কে ভিকটিম তা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। একই সাথে কাউকে কাউকে দেখতে পাচ্ছি- গোপাল ভাঁড়ের সেই আলুর গুদামে আগুণ লাগার গল্পে 'ছেলেটার মত' পোড়া আলু খাওয়ার ভূমিকা নিতেও।
আমি কিছুদিন একটা গ্রুপের 'বিজ্ঞাপন ও মিডিয়া' বিভাগে কাজ করেছি। সেইসূত্রে আমার খুব কাছ থেকে মিডিয়াকে তথা মিডিয়ার কর্তাব্যক্তিদের দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছে। আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা বলে, মিডিয়া এই ঘটানায় এবার পোড়া 'আলু খাওয়ার' ভূমিকা নিবে।
সেটা কিভাবে হবে তা দেখে নেওয়া যাক! ধরুন-
১) প্রথম মিডিয়া, আপনের মালিকের তথা দিলাদার সাহেবের কাছে যেয়ে বলবে, "আপনার ছেলে যে অপরাধ করেছে তার প্রমাণ আমাদের হাতে আছে! এই দেখেন রিপোর্ট! এটা আগামীকাল পত্রিকায় যাবে! এবার এটা প্রকাশ করা ঠেকান; উই মিন- আমাদের ম্যানেজ করেন!"
২) প্রথম মিডিয়া ম্যানেজ হওয়ার পর মানে ট্যাকা-সোনা-রুপা-ডাইমন্ডের রিং খাওয়ার পর দ্বিতীয় মিডিয়াকে বলবে, আমরা পেয়েছি। এবার তোরা যা!
৩) এবার দ্বিতীয় মিডিয়া সেই একই রিপোর্ট নিয়ে দিলদার সাহেবের কাছে যেয়ে ম্যানেজ হয়ে আসবে। এসেই তারা তৃতীয় মিডিয়াকে পাঠাবে! এভাবে চেইন রিয়াকশন চলতে থাকবে। তারপর 'ব্যক্তি মিডিয়া'কে ম্যানেজ করার বিষয় আসবে। ম্যান টু মান সবাইকেই ম্যানেজ করতে হবে এবং মিডিয়াও বিষয়টা ব্যাপকমাত্রায় পছন্দ করবে। মামলা যত লেন্দি হবে, ডাইমন্ড রিঙের হার তত বাড়বে।
এই ম্যানেজ হওয়ার বদলে মিডিয়া কী করবে?
আফটার ম্যানেজ, মিডিয়া মামলাটাকে বিভ্রান্ত করবে। মানে নতুন নতুন ক্যারেকটার আমদানী করবে। যেমন- পিয়াসা নামের মেয়েটাকে জড়াবে। জড়াবে হোটেলের মালিক তথা এমপি সাহেবে সুপুত্রদের, হোটেলের বয়-বেয়ারা যদিও এদের এর সাথে জড়িত বলেই মনে করি। পাশাপাশি এরা ভিক্টিম মেয়ে দুটোর জীবন ও তাদের পরিবারের জীবন ঝালাপালা করে দিবে। বিনিময়ে তারা পাবে সোনা আর ডাইমন্ডের রিং!
এবার দেখা যাক আরও কারা কারা আলুপোড়া খাবে বা খাচ্ছে-
১) পত্রিকায় পড়ে যতদূর জেনেছি- বিষয়টাকে একজন প্রাক্তনমন্ত্রী সাহেব ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন। যদি আমি 'বাঙাল' চিনতে ভুল করে না থাকি, তাহলে বলতে দ্বিধা করবো না যে, তিনি ছিলেন ম্যনেজড! এছাড়াও বনানী থানার ওসি সাহেব হটাৎ করে ছুটি নিয়েছিলেন! আমার বাঙালী মন বলে ওটাও ছিল 'ম্যানেজড ছুটি'! আর এসব ম্যানেজড কাজ-কাম হয়েছে অনেক অনেক মানুষ সোনা-রুপা খাওয়ার ফলে।
২) আমাদের রাজস্ব দফতরও আলু পোড়ার গন্ধ পেয়েছেন। হটাৎ করেই তাদের মনে হয়েছে, "আরে! আপন তো একআনা সোনাও আমদানী করে নাই, তাহলে এত সোনা এলো কোত্থেকে? ধর এখন!" মন বলতে চায়- আমাদের সরকারী লোকজন এতদিন তাহলে লেমনচুস খেতো; এবার খাবে সোনা!
একটা প্রশ্নঃ
৫ জন আসামীর ২ জন ধরা পড়েছে। বাকী ৩ জন গেল কই। এদের মধ্যে একজন ধর্ষণকারীও আছে। যে আসলে একজন চিটার এবং গরীব বাবার সন্তান হয়েও বড়লোক বাবার ছেলের ভুয়ানামে সে অপরাধ করে বেড়ায়। সেকি গুম হবে, নাকি ক্রসফায়ারে যাবে?- এটাও একটা প্রশ্ন বটে। কারণ তার কাছ থেকেই পাওয়া যাবে বড়লোকদের ছেলের নানা কুকীর্তি। যেহেতু তার আসল বাবা 'গরীব' তাই অনেক অপরাধ ঢাকতে তাকে সরিয়ে দেওয়া কোন ব্যপারই না!
সবশেষে, আপনের আটককৃত ৩০০ কেজি সোনার কত কেজি ভবিষ্যতে ইমিটেশন হবে? জাতি এখনি তা জানতে চায়!
আগের লেখাঃ অপরাধীদের কার্টেলের খপ্পরে বাংলাদেশ
১৫/০৫/২০১৭