জন্মদিনের পার্টির কথা বলে রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে অস্ত্রের মুখে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন রিমান্ডে আছেন আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত ও তার বন্ধু সাদমান সাকিফ। বনানীর চার তারকা ওই হোটেলের অন্যতম মালিক মাহির।
সাফাত জিজ্ঞাসাবাদে তার বন্ধু পরিচয়ে হোটেলের দুটি কক্ষ ভাড়া নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বলে জানান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. শাহজাহান।
“তাই সাফাতরা ওই হোটেলে কী করছেন, তা কোনো কর্মচারী দেখতেও আসেনি,” বলেন তিনি।
মাহিরকেও এই মামলার তদন্তের আওতায় আনা হবে বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
ধর্ষিতাদের একজনও ওই রাতে মাহির নামে একজনের দেখা পাওয়ার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন।
তাদের জোর করে রুমে নেওয়ার আগে মাহির কেক নিয়ে তাদের কাছে গিয়েছিলেন জানিয়ে ওই ছাত্রী বলেন, “মাহির নামের একজন নিজেকে হোটেলটির মালিক পরিচয় দিয়ে সেদিন সাফাতের জন্মদিনের জন্য একটি কেক উপহার নিয়ে এসেছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হোটেলের ম্যানেজার মাহিরের নির্দেশে সাফাতের জন্মদিনের কেক নিয়ে গিয়েছিলেন।”
তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনও গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে ভবিষ্যতে মামলার কোনো প্রয়োজনে দরকার হলে মাহিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
ঝালকাঠি-১ আসনের সাংসদ বিএইচ হারুন রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার তিন ছেলের মধ্যে মাহির হারুন সবার ছোট।
শনিবার রাতেও বনানীর ওই হোটেলে অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাজমুল আলম।
মাহিরের সঙ্গে সাফাতের সম্পর্কের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য সাংসদ হারুনের মোবাইলে বেশ কয়েক ফোন করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
গত ৬ মে বনানী থানায় সাফাত ও তার দুই বন্ধু সাদমান সাকিফ ও নাঈম আশরাফসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলাটি দায়ের হয়। এরপর তদন্তে নামা বনানী থানার কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ঢাকার একজন সংসদ সদস্যের ছেলের সঙ্গে হোটেলের ব্যবসা রয়েছে সাফাত ও তার এই বন্ধুদের।
আসামিদের মধ্যে সাফাত ও সাকিফকে গত বৃহস্পতিবার সিলেট থেকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার রিমান্ডে পায় পুলিশ।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা শাহজাহান বলেন, “আসামিদের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সেগুলোতে ধর্ষণের কোনো ভিডিও এখনও পাওয়া যায়নি। তারা ধর্ষণের ভিডিও করার কথা এখনও স্বীকার করেনি।”
তবে ওই দুই ছাত্রীর ছেলে বন্ধুকে মারধর করে তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী পরিচয় দিতে বাধ্য করার কথা আসামিরা স্বীকার করেছে। ওই ঘটনার ভিডিও করার কথাও তারা বলেছে।
“মামলার দুই আসামিই জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, ওই রাতে ভিকটিমের এক চিকিৎসক বন্ধুকে তারা মারধরও করেছিল। জন্মদিনের ওই অনুষ্ঠানে তারা তাকে আশা করেনি। তাই তাকে মারধর করে তার ভিডিও করা হয়েছিল।”
উপ-কমিশনার নাজমুল আলম বলেন, “আসামিরা বলেছে, তারা কারও সঙ্গে জোর করে কিছু করেনি। দুই পক্ষের সম্মতিতেই যা ঘটার ঘটেছে।”
বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
এদিকে ‘ধর্ষিতাদের’ সাক্ষাৎকারের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার পিছনে কারা রয়েছে তা খুঁজে দেখা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা শাহজাহান জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ধর্ষণের শিকার দুই শিক্ষার্থীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে তারা অপরাধ করেছে। তাদের খুঁজে বের করা হবে।”
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন ঝালকাঠি প্রতিনিধি পলাশ রায়]