Published : 22 Jul 2016, 03:01 PM
[ফরাসি অধ্যাপক Olivier Roy। ইতালির ফ্লোরেন্সে 'European University Institute'-এ কর্মরত। সেকুলারাইজেশন এবং ইসলাম, বিশ্বব্যাপী ইসলামের অবস্থা, রাজনৈতিক ইসলাম ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর লেখা বেশ কিছু প্রবন্ধ ও বই আছে। জন্ম ফ্রান্সের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর La Rochelle-এ, ১৯৪৯-সনে। দর্শন শাস্ত্রে agrégation পেয়ে (ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মানসূচক 'পাবলিক সার্ভিস কম্পিটিটিভ পরিক্ষায়' উত্তীর্ণ হওয়া) পরবর্তিতে পার্শিয়ান ল্যাংগুয়েজ এ্যন্ড সিভিলাইজেশন-এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন French Institut National des Langues et Civilisations Orientales থেকে, ১৯৭২-এ। ১৯৯৬ সনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পিএইচডি সম্পন্ন করেন Institut d'Études Politiques de Paris থেকে।]
সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন Michaela Wiegel
জার্মান থেকে ইংরেজি অনুবাদ করেছেন Jennifer Taylor
এই লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত।
——————————————————————-
অলিভিয়্যার রয় ব্রাসেলস-এ হামলার পর ইসলামকে ঢালাওভাবে সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়ানোর ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। Michaela Wiegel-এর কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই ইসলাম গবেষক জিহাদি মতবাদের মূল সমস্যাটি ব্যাখ্যা করেছেন।
রয়- আমার মনে হয় না যে, সম্পৃক্তি বিধানে ব্যর্থতার ফলে ইসলামিক রেডিক্যালাইজেশনের (উগ্রবাদ) উত্থান ঘটেছে। সেটা একটা বায়বীয় সমস্যা মাত্র। জিহাদের ব্যানারওয়ালা তরুণদের অনেকেই বেশ সংঘবদ্ধ। এরা ফরাসি, ইংরেজি এবং জার্মান ভাষা ব্যবহারে পারঙ্গম। আইএস কর্তৃক ফরাসিভাষী ব্যাটেলিয়ান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আর এর মূল কারণ হলো, ফরাসি এবং বেলজিয়ান তরুণরা আরবি জানে না। সমস্যাটা আসলে সাংস্কৃতিক সম্পৃক্তির অভাব নয়। এমনকি নিজেদের সমাজ থেকে বেরিয়ে এসে য়ুরোপিয়ান জিহাদবাদিরা বরং ব্যাপকভাবে পাশ্চাত্যের অনুরূপ জীবনধারাতেই নিজেদেরকে নিবেদিত রাখে। এটা ধ্বংসবাদি আচরণ, যা কোনোভাবেই ইসলামি রীতির সাথে যায় না। এদের অনেকেই মুভি বা ভিডিও দেখে দেখে সহিংসতার একটা নান্দনিক পরমার্থের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। সেদিক বিবেচনায় এরা অনেকটাই কলোম্বিয়ান স্কুলের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের হোতা ওই দুই উন্মত্ত শিক্ষার্থির মতো, কিংবা গণহত্যাকারী আনাস ব্যারিং ব্রেইভিক-এর মতো।
রয়- আমার কাছে ধর্মান্তরিতদের উচ্চ হার একটি আগ্রহোদ্দীপক সূচক। আইএসের ২৫ শতাংশ ধর্মান্তরিত মুসলিম— মুসলিম সংস্কৃতির আর কোথাও এমন আরেকটি সংগঠন নেই। তাই শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যা আইএসের এমন আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার কারণ নির্ণয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। অভিবাসন ঐতিহ্যের বাইরেও অনেক তরুণ জিহাদের এই ধারণায় প্রলুব্ধ হচ্ছে।
রয়- একটি ধর্মীয় মাত্রা যে আছে সেটি আমি অস্বীকার করছি না। এটি তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এর মানে হলো, জেহাদিরা তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে স্বর্গলাভের নিশ্চায়করূপে উপস্থাপন করতে সক্ষম। তাদের কাছে আত্মহত্যা হলো অনন্ত জীবনের গ্যারান্টি। আমি যে বিষয়টি জোর দিয়ে বলতে চাই তা হলো, এই তরুণরা মুসলিম সমাজের অন্তর্ভূক্ত নয়। এদের বেশিরভাগেরই কোনো ধর্মীয় জ্ঞান নেই। মসজিদেও খুব একটা যাওয়া হয়নি এদের। এদের প্রায় সবারই ছোটখাটো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ইতিহাস রয়েছে। এরা মদ পান করতো, ড্রাগ নিতো।
রয়- বামপন্থীদের উত্তর-ঔপনিবেশিক ভিশনটা অপর্যাপ্ত। আমার মতে, ইসলামপন্থি রেডিক্যালাইজেশনের দায়কে বর্তমান পররাষ্ট্রনীতি, কিংবা ঔপনিবেশিক অপরাধের উপর চাপানো যায় না। এসব তরুণ উগ্রবাদিরা কখনোই কিন্তু আলজেরিয়ার যুদ্ধের কথা বলে না, এমনকি যদি তাদের পিতামহরাও সেখানকার হয়ে থাকে। সাধারণত এ সম্পর্কে এদের কোনো ধারণাই নেই।
রয়- এরা হলো সেসব তরুণ যারা তাদের বাবা-মার জেনারেশনের সাথে একটা র্যাডিক্যাল ভাঙন তৈরি করতে চায়। এদের বাবা-মা এদেরকে ইসলামিক সংস্কৃতি শেখায়নি। উগ্রপন্থার আশ্রয় নিয়ে এরা নিজেদেরকে বাবা-মায়ের চেয়ে আরও ভালো মুসলিম মনে করে। প্যালেস্টাইনে যেমন বাবা-মারা তাদের সন্তানদেরকে সহিংসতা ঘটানোর অনুমোদন দেয়, য়ুরোপে কিন্তু তেমন নয়। এখানে বাবা-মা তাদের সন্তানের জিহাদে যাওয়াকে ঘৃণার চোখে দেখে। য়ুরোপিয়ান বাবা-মাদের বলতে শোনা যায়ঃ কী দিয়ে আমার মেয়ে বা আমার ছেলে মোটিভেটেড হয়, তা আমি বুঝি না। এই দুই জেনারেশনের মধ্যে নতুন সংঘাত শুরু হয়েছে এখানে। এ থেকে বোঝা যায়, কেনো প্রায়শ একই মায়ের পেটের ভাই-বোন মিলে (বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভাইয়েরা) বাবা-মাকে এভাবে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আইএস ফাইটাররা সবাই একই জেনারেশনের, কেউ ভাই-বোন, কেউ ছোটবেলার বন্ধু।
রয়- অধিকাংশ জেহাদির নবজন্ম হয়; মানে উগ্রবাদি ইসলাম তাদেরকে নতুন জীবন দান করে। সে কারণেই প্রথম প্রজন্মের অভিবাসীদের মধ্য থেকে জেহাদি হয়েছে যারা, তাদের সংখ্যাটা খুব নগণ্য। এই জেনারেশনের মুসলিমরা প্রথাগত ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়েই বড়ো হয়েছে। ভাঙনটা শুরু হয়েছে অভিবাসীদের দ্বিতীয় প্রজন্মে এসে, যেখানে অগ্রজ প্রজন্মের লালিত ধর্মীয় বিশ্বাসের ধারাটা থেমে গেছে। বেশিরভাগ মুসলিম সন্ত্রাসীর আগমন ঘটেছে অভিবাসীদের এই দ্বিতীয় প্রজন্মের ভেতর থেকে ।
রয়- না। আমি বরং এই বিতর্কে অবদান রাখতে আগ্রহী। Valls বর্তমানে সাধারণ জনগণকে তুষ্ট রাখায় নিয়োজিত আছেন। তিনি বাম দর্শন থেকে সরে এসেছেন এবং এখন তিনি আরও বেশি কর্তৃত্বপরায়ণ, এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনা বিরোধী। সন্ত্রাসের ব্রিডিং গ্রাউন্ডকে অবশ্যই খুঁজে পেতে হবে। আমার বিস্ময় লাগে যে, আমাকে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ কাজ করতে হচ্ছে মনোবিজ্ঞানী ও মনোবিশ্লেষকদের সাথে। আত্মহত্যা ও সহিংসতার প্রতি আকর্ষণ ছাড়াও তরুণদের মধ্যে ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এই ব্যাপারটিতে আরও বেশি মনযোগ দিতে হবে আমাদেরকে।
রয়-– হ্যাঁ। উদাহরণস্বরূপ সম্প্রতি ইটালিতে দুই যুবক কর্তৃক তাদেরই এক বন্ধুকে হত্যার ঘটনাটি উল্লেখ করা যায়। তাদেরকে যখন আটক করা হলো, তখন তারা বলেছিলো, খুন করতে কেমন লাগে–সেটি তারা পরখ করে দেখতে চেয়েছিলো। মিডিয়া এটাকে 'পাগলামি' আখ্যা দিয়েছে। কিন্তু ওই দুই তরুণ যদি 'আল্লাহু আকবার' বলে চিৎকার দিয়ে খুনটা করতো, তাহলে তাদেরকে ঠিকই সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
রয়- তিনি যে মর্মাহত হয়েছেন—এটি কিন্তু ভালো লক্ষণ। এর মানে হলো তিনি আমার থিসিসের সাথে একমত হওয়ার চেষ্টায় আছেন। আমি মনস্তাত্ত্বিক ডাইমেনশন নিয়ে কথা বলি এটা তার পছন্দনীয় নয়। তবে আমার মতে, ইসলামিস্ট রেডিক্যালাইজেশন নিয়ন্ত্রণে জরুরি ভিত্তিতে আমাদের এখন বহুমূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।