Published : 31 Mar 2024, 10:51 PM
ঈদের দেড় সপ্তাহ বাকি থাকতেই ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে ট্রেন যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। ঈদের আগাম টিকেট জোগাড় করতে না পেরে আগেভাগেই বাড়ি যাচ্ছেন তারা।
গত ২৪ মার্চ থেকে এবার ঈদযাত্রার টিকেট বিক্রি শুরু হয়। প্রথম দিন দেওয়া হয় ৩ এপ্রিলের টিকেট। রোজার শুরু থেকে ট্রেনের টিকেট সহজলভ্য হলেও গেলেও সেদিন থেকে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়।
এবার কোটা ছাড়া বাকি সব টিকেট অনলাইনে ছাড়া হয়। সকাল আটটায় পশ্চিমাঞ্চলে এবং বেলা ২টায় পূর্বাঞ্চলের টিকেট বিক্রি শুরু হয়। প্রথম দিনে কিছু টিকেট কয়েক ঘণ্টা থাকলেও এরপর থেকে দুই মিনিটের মধ্যেই সব টিকেট বিক্রি হয়ে যায়।
ঈদযাত্রায় ভিড় বেশি, টিকেটের সংকট, এই বাস্তবতায় এর আগের দিনগুলোর টিকেট কেটে নেন অনেকে। তারা এখন বরং তুলনামূলক ঝঞ্ঝামুক্ত পরিবেশেই ফিরতে পারছেন। পথে বাড়তি খরচও এখন কম। ঈদযাত্রায় যে সময় বিপর্যয় দেখা দেয়, সেটিও এখন নেই।
রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে এই ‘আগাম যাত্রার’ যাত্রীদের মধ্যে শিক্ষার্থী এবং চাকরিজীবীদের পরিবারের সদস্যরাই বেশি।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও যাচ্ছিলেন আজিজুল হক। তিনি ঢাকায় থেকে চাকরির জন্য পড়াশোনা করছেন। চড়েছেন অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসে।
তিনি বলেন, “ঢাকায় থেকে কাজ নেই। পরে টিকেট পাব না, আর ভিড় হবে অনেক। তাই আগেই চলে যাচ্ছি।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রী তৌহিদা ইসলাম লিমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। ঈদের আগে বেশ চাপ পড়বে ভেবে আগেভাগেই ঢাকা ছাড়ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ক্যাম্পাস বন্ধ হয়েছে। তাই আগেই চলে যাচ্ছি, যাতে পরে ভিড়ের মাঝে ঝামেলায় না পড়তে হয়।”
জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে হবিগঞ্জ যাচ্ছেন চাচা-ভাতিজা নিয়াম উল আলম ও মিনহাজুল আলম। নিয়াম উল আলম কলেজে পড়েন। বন্ধ পেয়ে গেছেন। মিনহাজুল ইসলাম চাকরির জন্য পড়াশুনা করছেন। তারা গত ২৭ মার্চ অনলাইনে টিকেট পেয়ে গেছেন।
মিনহাজুল বলেন, “অনলাইনে টিকেট কাটা অনেক হ্যাসেল মুক্ত। আর সড়ক ও নৌ পথের চেয়ে রেল পথে যাতায়াত বেশি সহজ ও নিরাপদ।
বকশিবাজার থাকেন জাহিদুল হক। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ছুটি মিলবে ঈদের দুই দিন আগে। তখন ভিড় বাড়বে। স্ত্রী-সন্তানকে যাতে বিড়ম্বনায় না পড়তে হয় তাই গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেখে আবার ঢাকায় ফিরবেন।
তিনি বলেন, “বাচ্চাটার বয়স ৮ মাস। এরপর ৪ টা ব্যাগ ও স্ত্রীকে নিয়ে ৯ মার্চ ভিড় ঠেলে যাওয়া একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। তাই তাদেরকে এখনই নিয়ে যাচ্ছি।”
দাদা-দাদির সঙ্গে ঈদ করতে মায়য়ের সঙ্গে সিলেট যাচ্ছে ৮ বছর বয়সী তামান্না। তার ব্যাংকার বাবা যাবেন পরে।
বাবার ব্যস্ততার কারণে তামান্নার গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয় কম। এবার একটু বেশি সময় থাকবে জেনে দারুণ খুশি সে।
শাহাবুদ্দিন আহমেদ ঢাকায় ভবন নির্মাণের কাজ করেন। আপাতত হাতে কাজ নেই, তাই গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ চলে যাচ্ছেন।
সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের পরিচালক আলাউদ্দিন বলেন, “কয়েকদিনের তুলনায় এখন মানুষ কিছুটা বেশি। অনেকেই ঈদের যাত্রায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা।
“আবার অনেক চাকরিজীবীরা রয়েছে যারা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এসেছে স্টেশনে। তাদেরকে আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছে।”
‘আগামী সপ্তাহ থেকে আসল চাপ তৈরি হবে’, বলছেন পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেসের কর্মী বিপ্লব মজুমদার।
তিনি বলেন, “গার্মেন্টস কর্মীরা যখন বেতন পাবে, উপচে পড়া ভিড় হবে। তারা টিকেট না পেলে ছাদেই চলে যায়। টিকেটও নেয় না। ট্রেন কর্তৃপক্ষও তাদের বাধা দেয় না।”
এবারের ঈদে দেশের সকল রেল পথে যাওয়া-আসা মিলিয়ে মোট ট্রেন চলবে ৬৭ জোড়া।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ২৪ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত আগামী ৩ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয়েছে।
১০ এপ্রিল ঈদ হলে সেদিন ট্রেন চলবে না। তাই চাঁদ না দেখে বা না জেনে আগেই এই টিকেট বিক্রি করা যাচ্ছে না।
ঈদ যাত্রায় ট্রেন স্টেশনে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ও নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশ-র্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনী দেখা গেছে।
স্টেশনের প্রবেশমুখেই র্যাব-৩, পুলিশ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আরএনবির আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ আছে।
র্যাব কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, “ঈদকে সামনে রেখে আমরা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছি। যে কোনো পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা যাতে স্বাভাবিক থাকে সেজন্য আমরা কাজ করছি।
“আমরা ছাড়াও অন্যান্য ফোর্স রয়েছে স্টেশনে। সবাই যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে জোর দিচ্ছি।”
স্টেশনে ট্রলিতে করে যাত্রীদের মালামাল আনা-নেওয়া করা মো. মিজানের আয় বেড়েছে। অন্যদিনের তুলনায় ঈদ যত কাছে আসছে তার আয় বেশি হচ্ছে।
তিনি বলেন, “একটু বাড়তাছে যাত্রী। আর তিন তারিখ থেকে আরেকটু বাড়ব। এহন কাম পাইতাছি বেশি। অবসর বসে থাকা লাগে না।”
আগামী ১১ এপ্রিল ঈদের সম্ভাব্য দিন হিসাব করে ঈদযাত্রার সূচি সাজিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত ২৪ মার্চ থেকে শুরু হয় আগাম টিকেট বিক্রি।
আগামী ৩ এপ্রিল ট্রেনযাত্রার টিকেট অনলাইনে উন্মুক্ত করা হয়। ৩০ মার্চ পর্যন্ত টিকেট বিক্রি হয়েছে, এদিন ৯ এপ্রিলের টিকেট বিক্রি হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে বলছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিলের টিকেট বিক্রি করা হবে।
এবারও ঈদযাত্রার কোনো টিকেট কাউন্টারে বিক্রি করা হচ্ছে না। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকেই শতভাগ টিকেট বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট, রেল সেবা অ্যাপ ও সহজ ডটকমের প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকেট সংগ্রহ করা যাচ্ছে।
ফিরতি যাত্রার অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হবে ৩ এপ্রিল। যা ৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে।
এবার ঈদের আগে সারাদেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনের ৩৩ হাজার ৫০০টি টিকেট বিক্রির কথা জানানো হয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে সারাদেশের বিভিন্ন রুটে আট জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হবে বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।